ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘রাতে আশ্রয় ক্যাম্পে চলে সন্ত্রাসীদের রাজত্ব’

প্রকাশিত: ১৬:২৩, ১২ জানুয়ারি ২০২২

‘রাতে আশ্রয় ক্যাম্পে চলে সন্ত্রাসীদের রাজত্ব’

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার/ সংবাদদাতা, উখিয়া ॥ আশ্রয় ক্যম্প অভ্যন্তরে ও বাইরে রোহিঙ্গাদের কোন বন্ধ করে দেয়ার দাবী উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। উখিয়া টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে রাতের আঁধারে আতঙ্কের অঙ্গরাজ্য হিসেবে পরিণত হয়। রাত হলে ক্যাম্পগুলোতে রাজত্ব কায়েম করে আরশাসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপ। ক্যাম্প দখল ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করছে তারা। প্রত্যাবাসনের পক্ষে সোচ্চার জনপ্রিয় রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যা এবং উখিয়ার একটি মাদরাসায় সন্ত্রাসী হামলায় ৬ রোহিঙ্গা নিহতের পর অপরাধীরা ধরা না পড়ায় ক্যাম্পে সক্রিয় হয়ে পড়েছে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো। এ কারণে সন্ধ্যার পর একান্ত প্রয়োজন ছাড়া তাদের কক্ষ থেকেই বের হতে চাইছে না ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গারা। মুহিবুল্লাহর নেতৃত্বে মিয়ানমারে ফিরে যেতে ইচ্ছুক সাধারণ রোহিঙ্গারা নিরাপত্তাহীনতায় আছে বলে জানা গেছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বন্ধ করতেই মিয়ানমারের পৃষ্ঠপোষকতায় রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো আরও সক্রিয় হয়ে উঠছে। মুহিবুল্লাহ হত্যা, মাদরাসায় হামলার মাধ্যমে তারা ক্যাম্পে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের অপতৎপরতা থামাতে না পারলে হুমকির মুখে পড়বে উখিয়া টেকনাফ। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নেয়া ও গোয়েন্দা নজরদারী আরও বৃদ্ধি করার দাবী জানিয়েছেন সচেতন মহল। টেকনাফ ও উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা বলছে, মিয়ানমারের সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মি (আরসা) মূলত আশ্রয় ক্যাম্পগুলোতে তৎপর। আরসার সদস্যরা আল ইয়াকিনসহ কয়েকটি ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। কক্সবাজার জেলা পুলিশ বলছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে আরসা বা আল ইয়াকিনের কোনো অস্তিত্ব নেই। উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পের মাঝি মোহাম্মদ ইসমাইল ও টেকনাফের লেদা ক্যাম্পের নেতা জাফর আহমদ বলেন, ক্যাম্পে আশ্রিত কিছু রোহিঙ্গা যুবক এসব সন্ত্রাসী গ্রুপকে গোপনে সহযোগিতা করছে। কক্সবাজার জেলা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত ৪ বছরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অভ্যন্তরীণ দ্বন্ধের কারণে ৭৫ জনের প্রাণহানি হয়েছে। এছাড়া ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে৪৯ জন। জেলা পুলিশ সূত্রে আরো জানা গেছে, উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আরসা অথবা আল ইয়াকিন নামে কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তৎপরতা নেই। মাস্টার মুন্না গ্রুপ, মৌলবি ইউসুফ গ্রুপ, ঈশা সাইদী গ্রুপ, শাহ আজম গ্রুপ, সালমান শাহ গ্রুপ, আব্দুল হাকিম বাহিনী, নবী হোসেন বাহিনীসহ অসংখ্য ছোট ছোট গ্রুপ গড়ে উঠেছে। তারাই আরসা-আল ইয়াকিনের নাম ব্যবহার করে অপতৎরতা চালাচ্ছে। কয়েকজনকে অস্ত্রসহ আটক করেছে ক্যাম্প পুলিশ। ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক পুলিশ সুপার মো: নাইমুল হক জানান, মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত তথাকথিত আরসা নামধারী সন্ত্রাসী গ্রুপের ১১৪ জন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত আরও ৫৮ জন রোহিঙ্গাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
×