ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রেজা নওফল হায়দার

প্রযুক্তিতে নীরব বিপ্লব

প্রকাশিত: ২২:১৯, ৮ জানুয়ারি ২০২২

প্রযুক্তিতে নীরব বিপ্লব

ঘরে বসেই চলছে অফিসের কাজ। বড় বড় প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা গুরুত্বপূর্ণ মিটিং করছেন বাসা থেকে। শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা, চাল-ডাল-সবজিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনা, অসুস্থ রোগীর চিকিৎসা কোন কিছুর জন্যই বের হতে হচ্ছে না ঘর থেকে। প্রস্তুতি চলছে অনলাইনে আদালতের বিচারকার্য পরিচালনার। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিই বদলে দিয়েছে সবকিছু। ঘরে বসেই কাজকর্ম, ব্যবসা, কেনাকাটা, শিক্ষা কার্যক্রম, চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি বন্ধু, সহকর্মী, রাজনৈতিক কর্মীদের আড্ডাও থেমে নেই। হেয়াটস এ্যাপ, মেসেঞ্জার, ভাইবার, ইমো এবং জুমের মতো ডিজিটাল প্লাটফর্ম ব্যবহার করে চলছে প্রতিদিনের আড্ডা। গ্রাম্য অঞ্চলের নিরক্ষর-অর্ধ-শিক্ষিত মানুষটিও এখন প্রিয়জনের সঙ্গে কথা বলছেন এসব মাধ্যমে। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। এর পরই বদলে যায় তথ্যপ্রযুক্তি খাত। থ্রিজি-ফোরজি পর প্রস্তুতি চলছে ফাইভজি চালুর। রাজধানী থেকে শুরু করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল এমনকি বিচ্ছিন দ্বীপের বান্দিরাও এসেছেন তথ্যপ্রযুক্তির আওতায়। শিক্ষিত-অশিক্ষিত, বৃদ্ধ-তরুণ সব বসয়সি মানুষই এখন জেনে গেছেন তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার। সরকার ২০২১ সালের মধ্যে দেশের সকল জনগোষ্ঠীকে ইন্টারনেটের আওতায় আনার এবং প্রযুক্তিবান্ধব করে তোলার টার্গেট নিয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ফলে অঘোষিতভাবেই বিপ্লব ঘটে গেছে তথ্যপ্রযুক্তিতে। ডিজিটাল বিপ্লবই হয়ে উঠেছে যোগাযোগ, কাজ-কর্ম, শিক্ষা-চিকিৎসা-বাণিজ্যের প্রধান মাধ্যম। ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) প্রতিষ্ঠানগুলো জানিয়েছে, ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথ চাহিদা বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ। তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ফাইবার এ্যাট হোমের প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা সুমন আহমেদ সাবির বলেন, বতর্মান সময়ে বাসা-বাড়িতে ভিডিও স্ট্রিমিং বেশি হচ্ছে, ইউটিউব বা ভিডিও কনফারেন্সে যাচ্ছে ব্যবহারকারীরা। তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য ও সেবা চালুর মধ্যেই সীমিত থাকবে না। প্রতিনিয়তই নিত্যনতুন ও অধিকতর উন্নত প্রযুক্তি আসবে। পুরনো পণ্য সেবাগুলোর জায়গায় হালনাগাদ পণ্যসেবা দ্রুত চালু হবে। এরই ধারাবাহিকতায় স্মার্টফোনের সক্ষমতা, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট, ক্লাউড কম্পিউটিং, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, রিয়েল-টাইম স্পিচ রিকগনিশন, ন্যানো কম্পিউটার, ওয়্যারেবল ডিভাইস ও নিয়ার ফিল্ড কমিউনিকেশন, সাইবার সিকিউরিটি, স্মার্ট সিটিজ, ইন্টারনেট সেবা আরও উন্নত হবে। ক্লাউড কম্পিউটিং ও কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের বিকাশ এ দশকে বিশ্বের তথ্যপ্রযুক্তির দিশা পুরোদমে পাল্টে দেবে। অনলাইন কার্যক্রমে এখন যেভাবে নতুন নতুন ডিভাইস, কৌশল ও প্রবণতা ব্যাপক হারে চালু ও বিকশিত হচ্ছে, তাতে অদূর ভবিষ্যতে আমাদের লাইফস্টাইলকে আমূল পাল্টে দেবে। ঘরেই অফিস-মিটিং: ঘরে বসেই যে অফিসের সব কাজকর্ম পরিচালনা করা যায় এই ধারণাটা কিছুদিন আগেও মানুষের মধ্যে ছিল না। কিন্তু এখন ঘরবন্দী মানুষ প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে করছে কাজকর্ম। প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সভা করছেন অনলাইনে। দেশের মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানের বোর্ড মিটিং, প্রেস কনফারেন্সও হচ্ছে এই মাধ্যমে। বেসরকারী মোবাইল ফোন অপারেটর রবির চিফ করপোরেট এ্যাফেয়ার্স অফিসার শাহেদ আহমেদ বলেন, করোনার কারণে ঘরবন্দী রয়েছি। ঘরে থেকেই অফিসের বিভিন্ন মিটিংয়ে যুক্ত হচ্ছি। গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসির আজমান শুক্রবার একটি ভিডিও কনফারেন্সে বলেন, সার্বিক পরিস্থিতির কারণে আমাদের এখন অনলাইনেই প্রেস কনফারেন্স করতে হচ্ছে। পাশাপাশি অন্যান্য কার্যক্রমও চলছে অনলাইনে। একইভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সঙ্কটকালীন সময়ে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার সঙ্গে অনলাইনে যুক্ত হয়ে করোনা পরিস্থিতির খোঁজখবর রাখছেন। স্বাস্থ্য অধিদফতর ব্রিফিং করছে অনলাইনে। সরকারী কার্যক্রম চলছে এই মাধ্যমেই। ছুটির সময় শিক্ষা কার্যক্রম যাতে ব্যাহত না হয় সে জন্য টেলিভিশন, ইউটিউবসহ নানা অনলাইন প্লাটফর্মে চলছে ক্লাস। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এ্যাসাইনমেন্ট, পরীক্ষা, এমনকি ভাইভাও অনলাইনে নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। এর মাধ্যমে দেশের কয়েক কোটি শিক্ষার্থী হয়ে উঠছেন প্রযুক্তিবান্ধব। বিগত কয়েক বছর ধরেই অনলাইনে কেনাকাটা জনপ্রিয়তা পাচ্ছিল বাংলাদেশে। তবে এটি একটি শ্রেণীর কাছেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে এই প্লাটফর্মটি সার্বজনীন হয়ে উঠেছে। চাল-ডাল মুদিসামগ্রী থেকে শুরু করে ঘরের নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যই অনলাইনে কেনার নতুন ট্রেন্ড শুরু হয়েছে এই সময়ে।
×