ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অস্বস্তিকর কয়েকদিন

প্রকাশিত: ০০:০১, ৬ ডিসেম্বর ২০২১

অস্বস্তিকর কয়েকদিন

মানুষের প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় শঙ্কা, অস্বস্তি এবং অস্থিরতার সময়গুলো পার করাও নিয়মিত অনুষঙ্গ। বিরূপ পরিস্থিতিকে ঠান্ডা মাথায় সামলিয়ে নিত্য জীবনকে স্বাভাবিকভাবে এগিয়ে নেয়াও এক প্রকার নিয়মবিধির অনুবর্তী। আবার বিভিন্ন বিভাজনের নিরিখে হরেক সমস্যার ফারাক ও সংশ্লিষ্টদের অন্যমাত্রায় ভাবিয়ে তোলে। শ্রেণী বিভক্ত সমাজে সবার আগে চিহ্নিত হয়ে যায় নারী-পুরুষের দৃশ্যমান আলাদা রূপ। প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থাই দুই বিপরীত শ্রেণীর মধ্যে তারতম্যের রকমভেদও তৈরি করে দেয়। আবার প্রকৃতিগতভাবেও ছেলেমেয়ের দূরত্ব অনুধাবন করতে সময় লাগে না। বিশেষ করে বয়ঃসন্ধিকালের স্পর্শকাতর অনুভব উদীয়মান তরুণ-তরুণীদের বিপরীত মেরুতে তাদের যাত্রাপথ এক প্রকার নির্দেশিত হয়ে থাকে। অর্ধাংশ মেয়েরা পড়ে হরেক রকম অস্বস্তিতে। সমাজ নয়, প্রকৃতিই তাদের আলাদা সত্তায় ভিন্ন গতিপথে চালিত করে। বাল্যকালের সুবর্ণ সময় পার করতে না করতেই উদীয়মান কিশোরীদের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন তাদের মধ্যে এক ধরনের অস্বাভাবিক অস্থিরতা তৈরি করে। বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেরাও খুব শান্তি-স্বস্তিতে থাকে না। তাদেরও দেহমনের চাঞ্চল্য আর নতুন অনুভব-অনুভূতি এক প্রকার দিশেহারা হওয়ার মতোই অবস্থা। জীবনের এই পরিবর্তিত সময়ে অভিভাবকদের সতর্ক সাবধানতার সন্তানদের মায়ার বাধনে আরও বেশি করে আটকে রাখতে হয়। জীবনটাকে ফুলের অনুভবে মাতোয়ারা হতেও সময় লাগে না। সমস্যাটা নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে। যেহেতু শারীরিক ভিন্নতায় ছেলেমেয়ে প্রকৃতিগতভাবেই আলাদা সে কারণে শরীর আর মন ভিন্নমাত্রার অনুভবে তাড়িত হয়। আর কিশোরীদের ক্ষেত্রে অনেকটাই বিড়ম্বনার পর্যায়ে গিয়ে ঠেকে। পরিবর্তনের এই দুর্লভ সময়ে একজন কিশোরী প্রথম যখন ঋতুস্রাব অনুভব করে সেটা যে কতখানি স্পর্শকাতর তা বোঝানো যায়ও না। প্রথমত এই নতুন শারীরিক রূপান্তরে কেমন যেন চমক আর হতভম্ব হওয়ার মতোই। নিজের মায়ের সঙ্গে আলাপ-আলোচনায় আসাও এক প্রকার প্রাচীরসম রুদ্ধতা। আর এমন অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সামলাতেও হয় বিড়ম্বনার মধ্য দিয়ে। প্রতি মাসে এই শারীরিক অবস্থার মধ্য দিয়ে মেয়েদের কাটাতে হয়। আবার এমন অবস্থা যদি বিলম্বিত হয় সেটাও মায়ের জন্য উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার বিষয়। কারণ প্রতি মাসের ঋতুস্রাবেই প্রচ্ছন্ন হয়ে থাকে মাতৃত্বের অপার মহিমা। মা হওয়ার আকাক্সক্ষা প্রতিটি মেয়েরই আশৈশব। শুধু শরীরে নয় হৃদয়ের গভীরতম স্থানেও লালন করা হয় মাতৃত্বের অপরিমেয় স্বাদ। যা কোন মেয়েকে পূর্ণ থেকে সম্পূর্ণ করতে নিয়ামকের ভূমিকা রাখে। এই মাসিক ঋতুস্রাব সামলানো স্বাস্থ্য ও মানসম্মত হওয়া একান্ত জরুরী। আজ থেকে ৩০ বছর আগে মেয়েরা এই সময়ে পরিষ্কার কাপড় ব্যবহার করতেই অভ্যস্ত ছিল। বর্তমানে সময় পাল্টেছে। বিজ্ঞান তার নিত্যনতুন আবিষ্কারে বিভিন্ন আরামদায়ক ও সহনীয় পণ্য সংশ্লিষ্টদের হাতে পৌঁছে দিচ্ছে, যা স্বাস্থ্য এবং গুণগতভাবেও মানসম্মত। এটা আসলে লজ্জা কিংবা সঙ্কোচের কোন বিষয় নয়। বরং এটাই প্রাকৃতিক নিয়মে নারীদের সন্তান ধারণের সক্ষমতাকে পরম যত্নে লালন করে। সুতরাং এমন সময়ে খিটখিটে মেজাজ চড়ে যাওয়াও অস্বাভাবিক কিছু নয়। আশপাশের নিকটজনকে পরম সহানুভূতিতে মেয়েটিকে স্বস্তি এবং শান্তি দিতে হবে। এটা কোন বিড়ম্বনা ও বিপন্ন হওয়ার বিষয়ই নয়। বরং প্রকৃতি প্রদত্ত এই অসামান্য উপহারে নারী শক্তি নতুন প্রজন্মকে জঠরে লালন করে। যাপিত জীবন প্রতিবেদক
×