ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বি ১.১. ৫২৯ নিয়ে আতঙ্ক

করোনার দঃ আফ্রিকার নতুন ধরন- ফের চিন্তা বাড়াচ্ছে

প্রকাশিত: ২২:২১, ২৭ নভেম্বর ২০২১

করোনার দঃ আফ্রিকার নতুন ধরন- ফের চিন্তা বাড়াচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ফের চিন্তা বাড়াচ্ছে করোনা। দক্ষিণ আফ্রিকার অঞ্চলগুলোতে মিলেছে করোনার নতুন ধরন। বি ১. ১. ৫২৯ নামের ধরনটি নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে সারাবিশ্বে। দক্ষিণ আফ্রিকার দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের ঘনিষ্ট যোগাযোগের কারণে বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে থাকলেও নতুন ধরনের বিপদ বাড়াতে পারে। নতুন করোনা আতঙ্কে বিশ্বের শেয়ারবাজারে বড় ধরনের দরপতন ঘটেছে। ইউরোপসহ সারাবিশ্বে জারি করা হচ্ছে নতুন ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা। করোনা বিধি মানতে ঢিলেঢালাভাব নতুন করে বিপদ ডেকে আনতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। ইতোমধ্যে ইউরোপের জার্মানি, ইতালি ও ব্রিটেনে সরকার দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ভ্রমণ নিষিদ্ধ করেছে। করোনার নতুন ধরনটির মিউটেশন প্রতিরোধে ইতোমধ্যে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ডেল্টার আগেও দক্ষিণ আফ্রিকায় মিউটেশন হওয়া একটি নতুন ধরন বিশ্বের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে চাপে ফেলেছিল। নতুন ধরন পাওয়ার পর নতুন করোনা রোধে আফ্রিকার দেশগুলো থেকে বিমান উড়ান বন্ধের প্রস্তাব করতে যাচ্ছে ইউরোপিয়ন ইউনিয়ন। ইতোমধ্যে শুক্রবার নতুন ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জার্মানিতে কার্যকর হয়েছে শুক্রবার থেকে। দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, দক্ষিণ আফ্রিকা ও আশপাশের দেশগুলো থেকে ভ্রমণ করলে টিকা নেয়া থাকলেও ন্যূনতম ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ব্রিটেনও শুক্রবার মধ্যরাত থেকে দেশগুলোয় থেকে বিমান ভ্রমণ বাতিল করেছে। শুক্রবার পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার গৌতেং প্রদেশে ৭৭ জনের দেহে এই ধরনটি পাওয়া গেছে, এর বাইরে বতসোয়ানায় যে চারজন ও হংকংয়ে একজনের দেহে এ ধরন শনাক্ত হয়েছে, তারাও মূলত দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে যাওয়া। ধরনটি বেশ দ্রুতগতিতে ছড়ায় বলে প্রাথমিকভাবে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। ধরনটি করোনার প্রচলিত প্রতিরোধ ব্যবস্থাকেও ফাঁকি দিতে সক্ষম বলে মনে করা হচ্ছে। গৌতেংয়ে শনাক্ত কোভিড রোগীদের ৯০ শতাংশের মধ্যেই সম্ভবত এখন এই বি.১.১.৫২৯ পাওয়া যাবে এবং ধরনটি ‘হয়ত দক্ষিণ আফ্রিকার সব প্রদেশেই মিলবে’ বলে অনুমান বিজ্ঞানীদের। তবে এটি ডেল্টা ধরনের তুলনায় দ্রুত ছড়ায় কিনা, অন্য ধরনগুলোর তুলনায় বেশি প্রাণঘাতী কিনা, যেসব দেশে টিকাদানের হার অনেক বেশি সেখানে বিস্তার লাভ করতে সক্ষম কিনা-তা এখনও অস্পষ্ট। নতুন ধরনের সন্ধান পাওয়ার মধ্যে গত ২৫ নবেম্বর করোনায় মৃত্যু বাড়লেও শনাক্তের সংখ্যা কমেছে। বৃহস্পতিবারে নতুন করে মোট ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে একই সময়ে করোনায় শনাক্তের সংখ্যা কমেছে। আলোচিত সময়ে নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ২৩৭ জনের। সাম্প্রতিক নিয়ন্ত্রণে থাকলেও স্বস্তিতে ভুগে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চললে আবার বিপর্যয় আসতে সময় লাগবে না বলে সতর্ক করেছেন জনস্বাস্থ্যবিদরা। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইতোমধ্যে এর নমুনা দেখা যাচ্ছে। তারা বলছেন, সংক্রমণ ও মৃত্যু কমে আসায় মানুষের মনে দেশে করোনা নেই ধারণা হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি বদলাতে সময় নেবে না। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে আবারও চিত্র বদলে যেতে পারে। এর আগে ২৯ অক্টোবর ৩০৫ জন শনাক্ত হওয়ার কথা জানিয়েছিল অধিদফতর। এরপর থেকে দৈনিক শনাক্ত ছিল ৩০০’র কম। এদিকে, মহামারীকালে গত ২০ নবেম্বর প্রায় ২০ মাস পর করোনায় দেশের কেউ মারা যাননি। তবে এর ঠিক ২৪ ঘণ্টা পরই ২১ নবেম্বর একদিনে সাতজনের মৃত্যুর কথা জানায় অধিদফতর। তার পরদিন ২ জনের মৃত্যু হয়। পরের দুদিন তিনজন করে মৃত্যুর কথা জানানো হয়। অধিদফতরের তথ্যমতে, ২৪-২৫ নবেম্বর রোগী শনাক্তের হার ছিল এক দশমিক ২৫ শতাংশ। ১৬ অক্টোবর চলতি বছরে প্রথমদিনের মতো শনাক্তের হার দুই এর নিচে নেমে আসে। জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, সংক্রমণ কমায় স্বাস্থ্যবিধিতে ঢিলেঢালা ভাব এসেছে। মানুষ মাস্ক পরছে না। শপিংমল, গণপরিবহন, বেসরকারী অফিস, রেস্তরাঁ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরে অভিভাবকদের ভিড় দেখা যাচ্ছে। হাসপাতালেও স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, গত ছয় জুলাই দেশে দৈনিক শনাক্তর সংখ্যা প্রথমবারের মতো ১০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। অতি সংক্রমণশীল ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের তাণ্ডবে জুলাই ছিল সবচেয়ে ভয়ঙ্কর মাস। এ মাসের প্রায় প্রতিদিনই শনাক্ত ও মৃত্যুতে আগের দিনের রেকর্ড ভাঙ্গতে থাকে। এরইমধ্যে করোনাকালে একদিনে সর্বোচ্চ (২৮ জুলাই) রোগী শনাক্ত হয় ১৬ হাজার ২৩০ জন। শনাক্তের হার উঠে যায় ৩২ শতাংশের বেশি। ভয়ানক জুলাইয়ের রেশ চলে আগস্ট পর্যন্ত। ১২ আগস্ট পর্যন্ত ৩৮ দিনের মধ্যে ৩০ দিনই শনাক্ত ছিল ১০ হাজারের বেশি। আর করোনাকালে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু হয় আগস্টের দুদিন। ৫ ও ১০ আগস্ট একদিনে সর্বোচ্চ ২৬৪ জনের মৃত্যুর কথা জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতর। সংক্রমণ কমে আসায় সরকার কঠোর বিধি-নিষেধ তুলে দেয়। খুলে দেয়া হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এখন কোনও দিন শনাক্তের হার থাকছে ১ শতাংশের কিছু বেশি। এ পরিস্থিতিতে কোথাও স্বাস্থ্যবিধি না মানায় শঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা। দেশে স্বাস্থ্যবিধি না মানার পাশাপাশি বৈশ্বিক করোনা পরিস্থিতি সে শঙ্কাকে আরও উদ্বেগের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)-এর উপদেষ্টা ডাঃ হোসেন যতদিন বিশ্ব থেকে করোনা দূর না হবে, বিপদ ততক্ষণ রয়েছেই। বর্তমানে দেশে সংক্রমণের সর্বনিম্ন মাত্রা চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা স্পোরাডিক ট্রান্সমিশন পর্যায়ে রয়েছি। এতে সন্দেহ নেই। এরমধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকায় নতুন ধরন বিভিন্ন দেশে নতুন করে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। তিনি আরও বলেন, বিশ্বজুড়ে যে সমস্ত দেশে সংক্রমণ শূন্য হয়ে গিয়েছিল, তারাও আবার লকডাউনে যেতে বাধ্য হয়েছে। তালিকায় আছে থাইল্যান্ড, চীন, ভিয়েতনাম, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড। তাদের মতো অত সফলতা আমাদের নেই, কাজেই কোনভাবে এখানে শিথিল হওয়ার অবকাশ নেই। যে কোনও সময় সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে জানিয়ে মহামারী বিশেষজ্ঞ ডাঃ মুশতাক হোসেন বলেন, নতুন ধরন ডেল্টার চেয়েও মারাত্মক হতে পারে। এরমধ্যে আফ্রিকান দেশগুলোতে নতুন ধরনের সন্ধান মিলেছে। যেগুলোর স্পাইক প্রোটিনের সঙ্গে আগের করোনার স্পাইক প্রোটিনের কোন মিল নেই। ইউরোপের দেশগুলোতে আরও নতুন নতুন ধরনের আশঙ্কা রয়েছে। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ফ্লাইট চালু হয়েছে। নজরদারি বাড়াতে হবে, রোগী ব্যবস্থাপনা বাড়াতে হবে বলেও মনে করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন যত রোগী শনাক্ত হচ্ছেন, তাদের ব্যবস্থাপনা ঠিকভাবে হচ্ছে কিনা, আইসোলেশন ঠিকমতো হচ্ছে কিনা, সংস্পর্শে আসাদের কোয়ারেন্টিন হচ্ছে কিনা দেখতে হবে। ভারতের শেয়ারবাজারে বড় পতন ॥ বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন শেয়ারবাজারের পতনের পর আশঙ্কা ছিলই। সেই আশঙ্কা সত্যি করে শুক্রবার সকালে বিপুল পতনের সাক্ষী থাকল ভারতের শেয়ারবাজার। করোনার নতুন রূপ নিয়ে আতঙ্কে সেনসেক্স পড়ল প্রায় এক হাজার ৪০০ পয়েন্ট। প্রয় ৪০০ পয়েন্ট নামল নিফটিও। শুক্রবার বাজার খুলতেই নিচে নামতে থাকে সূচক। সকাল ১১টা সেনসেক্স নেমে যায় ১৪০৮ পয়েন্ট। পরে তা সামান্য বাড়লেও বাজারের তেমন একটা উন্নতি হয়নি। এই বিপুল পতনের ফলে বাজার থেকে বিনিয়োগকারীদের প্রায় সাড়ে ছয় লাখ কোটি টাকা উধাও হয়ে যায়।
×