ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বেনাপোলে আটকা পণ্যবাহী শত শত ট্রাক

পরিবহন ধর্মঘটের বিরূপ প্রভাব চট্টগ্রাম বন্দরে

প্রকাশিত: ২৩:০৯, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১

পরিবহন ধর্মঘটের বিরূপ প্রভাব চট্টগ্রাম বন্দরে

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ মাদার ভেসেলে বুকিং ও কন্টেনার সঙ্কট পুরোপুরি না কাটতেই শুরু হয়েছে ১৫ দফা দাবিতে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের ধর্মঘট। মঙ্গলবার ভোর থেকে চলছে না ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও প্রাইম মুভার। ফলে সারাদেশে পণ্য পরিবহন বন্ধ। এতে করে সবচেয়ে বেশি সঙ্কটে পড়েছে রফতানি খাত। চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ থেকে পণ্য আনলোডিং হলেও ডেলিভারি হচ্ছে না। অপরদিকে, রফতানির পণ্য না আসায় জাহাজীকরণও হচ্ছে না। এ অবস্থায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন বন্দর ব্যবহারকারী ও আমদানি রফতানির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। এদিকে ধর্মঘটে দেশের বৃহত্তম স্থল বন্দর বেনাপোলে ব্যাপক পণ্যজটের সৃষ্টি হয়েছে। বন্দর থেকে পণ্য লোড করে গন্তব্যে যেতে না পেরে আটকা পড়েছেন শত শত ট্রাক চালক। অসহায় হয়ে পড়েছেন বন্দর শ্রমিকরা। চট্টগ্রাম বন্দর সচল থাকার সঙ্গে সম্পর্কিত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি খাত পরিবহন। প্রতিদিন যে পরিমাণ পণ্য জাহাজ থেকে নামে তার সঙ্গে ডেলিভারির সামঞ্জস্য না থাকলে ইয়ার্ডে সৃষ্টি হয় কন্টেনারজট। জাহাজ থেকে পণ্য নামানোর পর সেই জাহাজেই যায় রফতানির পণ্য। ধর্মঘট শুরু হওয়ায় এ দুইক্ষেত্রে অচলাবস্থা। বেসরকারী আইসিডিগুলোতে (অফডক) অপারেশনাল কাজ মঙ্গলবার বন্ধ থাকে। ধর্মঘট আহŸান করা হয়েছে তিন দিনের। দাবি আদায় না হলে আরও কঠোর কর্মসূচীর ঘোষণা রয়েছে ট্রাক কাভার্ডভ্যান ও প্রাইমমুভার মালিক ও শ্রমিকদের সংগঠনের কাছ থেকে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোঃ ওমর ফারুক জনকণ্ঠকে জানান, মঙ্গলবার সকালে ইয়ার্ডে কন্টেনার ছিল ৩৭ হাজার ৮শ’ টিইইউএস। জাহাজ থেকে পণ্য ওঠানামা স্বাভাবিক ছিল। বহির্নোঙ্গরেও স্বাভাবিক কার্যক্রম চলেছে। কিন্তু পরিবহন না থাকায় এদিন কন্টেনার ডেলিভারি হয়নি। অথচ, প্রায় ২ হাজার ৬শ কন্টেনার ডেলিভারির এ্যাসাইনমেন্ট ছিল। চট্টগ্রাম বন্দরে প্রতিদিন গড়ে ৪ হাজার ৫শ’ কন্টেনার হ্যান্ডলিং হয়। পণ্য ডেলিভারির সঙ্গে বন্দর অভ্যন্তরের স্বাভাবিক কার্যক্রম অনেকটাই নির্ভর করে। বেসরকারী আইসিডিগুলোর সংগঠন বিকডার সচিব মোঃ রুহুল আমিন সিকদার জানান, পরিবহন ধর্মঘটের কারণে অফডকে অপারেশনাল কার্যক্রম বন্ধ। মঙ্গলবার সকাল থেকেই রফতানির পণ্যবাহী কন্টেনার আসেনি। একইভাবে আইসিডি থেকে বের হয়নি রফতানির পণ্য। প্রাইমমুভার ধর্মঘট থাকায় কন্টেনার পরিবহন থেমে আছে। সোমবার সকালে বেসরকারী আইসিডিগুলোতে রফতানির পণ্য ছিল ৯ হাজার ৭২০ টিইইউএস। আমদানির পণ্য জমা ছিল ৮ হাজার ৮৭০ টিইইউএস। পণ্য পরিবহনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ভেহিক্যালগুলো ধর্মঘটে থাকায় আমদানি রফতানির মালামাল আসা যাওয়া হচ্ছে না। বাংলাদেশ ফ্রেইটফরোয়াডার্স এ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন জানান, ইয়ার্ডে যে কন্টেনারগুলো রয়েছে সেগুলোর জাহাজীকরণ চলছে। কিন্তু রফতানি পণ্যের নতুন কন্টেনার নেই। ফলে জাহাজগুলোকে হয় অপেক্ষায় থাকতে হবে, নয়তো পণ্য ছাড়াই বন্দর ত্যাগ করতে হবে। আবার অপেক্ষার জন্য গুণতে হয় মাশুল। তিনি বলেন, পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের ধর্মঘটের বিষয়ে আমাদের কিছু বলার নেই। কারণ, দাবি দাওয়ার যৌক্তিকতা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত যা গ্রহণের প্রয়োজন, তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষই করবে। পরিবহন ধর্মঘটে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত পোশাক শিল্পখাত। কারণ, আমদানি পণ্যের সিংহভাগই পোশাক শিল্পের কাঁচামাল। দ্রæততার সঙ্গে পণ্য খালাস ও ডেলিভারি না হলে উৎপাদন ব্যাহত হয়। আবার উৎপাদিত পোশাক যদি চট্টগ্রাম বন্দরে নিয়ে জাহাজীকরণ করা না যায়, সেটি আরও বড় সমস্যা। কেন না, বায়ার তার নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই পণ্য চায়। পরিবহন ধর্মঘটের বিষয়টি যেন দীর্ঘায়িত না হয় সেজন্য দ্রæত সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। রফতানিকারকরা বলছেন, এমনিতেই সিঙ্গাপুর, কলম্বো, মালয়েশিয়ার কেলাংসহ বিভিন্ন বন্দরে জাহাজ ও কন্টেনারের ভয়াবহ জট চলছে। বাংলাদেশসহ উদীয়মান রফতানির দেশগুলো মাদার ভেসেলে বুকিং পাওয়ার সঙ্কটে রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এসেছিল। কিন্তু এ পরিবহন ধর্মঘট আবারও উৎকণ্ঠার মধ্যে ফেলেছে দেশের আমদানি ও রফতানি খাতকে। উল্লেখ্য, সড়কে পুলিশের হয়রানি, চাঁদাবাজি, পরিবহন শ্রমিকদের ওপর নির্যাতন, চালকদের লাইসেন্স প্রদান বন্ধ, ট্রাক কাভার্ডভ্যানের কাছ থেকে অগ্রিম আয়কর আদায়সহ নানা ইস্যুতে আন্দোলনে নেমেছে পরিবহন শ্রমিক ও মালিকরা। বাংলাদেশ কাভার্ডভ্যান-ট্রাক-প্রাইমমুভার পণ্য পরিবহন মালিক এ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ ট্রাক চালক শ্রমিক ফেডারেশনের আহŸানে মঙ্গলবার ভোর ৬টা থেকে তিনদিনের ধর্মঘট শুরু হয়েছে, যা চলবে আগামী বৃহস্পতিবার ভোর ছয়টা পর্যন্ত। বেনাপোল বন্দরে আটকা পড়েছে শত শত পণ্যবাহী ট্রাক ॥ স্টাফ রিপোর্টার, বেনাপোল থেকে জানান, ১৫ দফা দাবি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ কাভার্ডভ্যান-ট্রাক-প্রাইমমুভার পণ্য পরিবহন মালিক এ্যাসোসিয়েশনের ডাকা ৭২ ঘণ্টা কর্মবিরতি প্রথম দিনে দেশের সর্ববৃহত্তম বেনাপোল স্থলবন্দর থেকে দেশের অভ্যন্তরে আমদানি পণ্য পরিবহন বন্ধ ছিল। ফলে বেনাপোল বন্দর এলাকায় ব্যাপক পণ্যজটের সৃষ্টি হয়। বন্দর থেকে পণ্য লোড করে গন্তব্যে যেতে না পেরে বন্দর এলাকায় আটকা পড়েছে ট্রাক চালকেরা। কাজ করতে না পেরে দিন আনা দিন খাওয়া বন্দর শ্রমিকেরা অসহায় হয়ে পড়েছে। দ্রæত ধর্মঘট প্রত্যাহার চান তারা। তবে দাবি না মানা পর্যন্ত এ কর্মবিরতি চলবে বলে জানিয়েছেন শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা। বেনাপোল আমদানি-রফতানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক বলেন, শিল্প কলকারখানার কাঁচামাল, গার্মেন্টস ও খাদ্যদ্রব্য জাতীয় পণ্য ভারত থেকে আমদানি হয়ে থাকে এ বন্দর দিয়ে। কিন্তু পরিবহন কর্মবিরতর কারনে ট্রাক চালকেরা এসব পণ্য নিয়ে গন্তব্যে যেতে পারছে না। এতে বন্দর এলকায় প্রায় ৫ শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক নিয়ে ট্রাক চালকেরা আটকা পড়েছে। দ্রæত কর্মবিরতি প্রত্যাহার না হলে শিল্প কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রম ব্যাহত হবে। এছাড়া আটকা পড়া পণ্যের জন্য বড় ধরনের লোকসানের কবলে পড়বেন ব্যবসায়ীরা। বন্দর শ্রমিকেরা বলেন, তারা বন্দরে কাজ করে সংসার চালায়। কিন্তু কর্মবিরতিতে বন্দর থেকে আমদানি পণ্য খালাস না হওয়ায় কাজ হারিয়ে তারা অসহায় হয়ে পড়েছেন। দ্রæত কর্মবিরতি প্রত্যাহার চেয়েছেন এসব সাধারণ শ্রমিকরা। বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) আব্দুল জলিল বলেন, কর্মবিরতিতে বেনাপোল বন্দর থেকে পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকলেও বন্দরের কার্যক্রম সচল রয়েছে। আমদানি-রফতানি বাণিজ্য সচল ও পাসপোর্টধারী যাত্রী যাতায়াত করছে দুই দেশের মধ্যে। তবে কর্মবিরতিতে ব্যবসায়ীরা পণ্য পরিবহন করতে না পারায় বাণিজ্য ব্যাহত হচ্ছে। বাংলাদেশ কাভার্ডভ্যান-ট্রাক-প্রাইমমুভার পণ্য পরিবহন মালিক এ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজিম উদ্দীন গাজী বলেন, ১৫ দফা দাবিতে সারাদেশে তাদের ৭২ ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন হচ্ছে। সরকার দাবি মানলে তারা কর্মবিরতি তুলে নেবেন। আর না মানলে কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী ৭২ ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করবে সংশ্লিষ্টরা।
×