ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নির্ধারিত জমির চেয়ে ৭ শতাংশ বেশি জমিতে এবার হাইব্রিড ধান চাষ

উৎপাদন বৃদ্ধিতে বোরোয় হাইব্রিডে গুরুত্ব

প্রকাশিত: ২২:৪৮, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১

উৎপাদন বৃদ্ধিতে বোরোয় হাইব্রিডে গুরুত্ব

ওয়াজেদ হীরা ॥ ফসলের মাঠে মাঠে বোরো ধান লাগানোর উৎসব চলছে। প্রায় ৯৬ ভাগ জমিতে লাগানো হয়েছে বোরো ধান। এর মধ্যে চলতি বোরো মৌসুমে উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য হাইব্রিড জাতের ধানের চাষ বৃদ্ধিতে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। এজন্য কৃষি মন্ত্রণালয় নানমুখী পদক্ষেপও নিয়েছে। সরকার নির্ধারিত জমির চেয়ে ৭ শতাংশ বেশি জমিতে চাষ হয়েছে হাইব্রিড জাতের ধান। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, কৃষি মন্ত্রণালয়ে দিক নির্দেশনায় করোনা পরবর্তী দিনগুলোতে খাদ্যের উৎপাদন ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হাইব্রিড ধানে গুরুত্ব দেয় সরকার। একই জমিতে হাইব্রিড উৎপাদন করলে ফলন বেশি পাওয়া যায়। আর তাই গত মৌসুমের চেয়ে ৫০ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। চলতি বোরো মৌসুমে সরকার ১১ লাখ ৪ হাজার ৬৩৩ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেন। আর এই হাইব্রিড থেকে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরেন ৫৪ লাখ ৫৯ হাজার ১৪৬ মেট্রিক টন চাল। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সরেজমিন উইং থেকে সর্বশেষ তথ্যে জানা গেছে, ইতোমধ্যেই নির্ধারিত জমির লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে চাষ হয়েছে ১১ লাখ ৮৫ হাজার ৪০৩ হেক্টর জমিতে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানিয়েছে শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ১০৭ অর্জিত হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মোঃ আসাদুল্লাহ জনকণ্ঠকে বলেন, চলতি বোরো মৌসুমে সরকার ফলন বৃদ্ধিতে হাইব্রিড জাতকে বেশ গুরুত্ব দেয়। এ বছর গতবছরের চেয়ে ৫০ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে বোরো ধানের আবাদ বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু করা হয়। এতে ধানের উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্য রয়েছে অন্তত ৫ লাখ টন। এজন্য আমরা বোরোতে বিশেষ কিছু কর্মসূচী হাতে নিয়েছি। আমরা হাইব্রিড ধানের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য ২ লাখ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড বীজ ফ্রি দিয়েছি। এতে প্রায় ৭৬ কোটি টাকার মতো ব্যয় হয়েছে। ২ লাখ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড ধানের উৎপাদন হলে অন্তত ২ লাখ টন ধানের উৎপাদন বেশি হবে। পুনর্বাসন কর্মসূচীতে ১ লাখ ৬০ হাজার বিঘা জমিতে উফশী জাতের বীজ ও সার ফ্রি দিয়েছি। ৬১ জেলার ৬১ উপজেলায় ৫০ একরের হাইব্রিড করার প্রদর্শনী দেয়া হয়েছে যা প্রযুক্তি হলো সমলয় চাষ। এখানে, সেখানে যন্ত্র ব্যবহার করে ধান রোপণ ও কাটা হবে। দেশে এমন বিশেষ প্রোগ্রাম এবারই প্রথম। বোরোর আবাদ বাড়াতে আমরা মাঠে ঘাটে তৎপরতা বৃদ্ধি করছি। আশা করা যাচ্ছে এবার বোরোর উৎপাদন ৫ লাখ টন বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. শাজাহান কবীর জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা সরকারের লক্ষ্য পূরণে শুরু থেকেই কর্মপন্থা নিয়ে কাজ শুরু করি। ফলন ও আবাদ এলাকা বৃদ্ধিতে করণীয় নিয়ে বোরো সিজন শুরুর আগেই ১৪টা অঞ্চলে ওয়ার্কশপ করেছি। কোন কোন এলাকা বৃদ্ধি করলে ফলন বাড়বে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সংস্থা হিসেবে সে লক্ষ্যে ব্রি কাজ করছে। একই সঙ্গে বিনামূল্যে বীজ দেয়া হয়েছে কৃষকদের। ১০০ টনের ওপরে বীজ দিয়েছি আমরা শুধু প্রদর্শনীর জন্য। এছাড়াও এই মুহূর্তে ১০০ বিজ্ঞানী মাঠে আছে। এ বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ হয়ে প্রতিটি জেলায় কাজ করছে, মনিটরিং করছে যাতে বোরোতে রোগবালাইসহ কোন সমস্যা না হয়। ফসল নির্বিঘ্নে কৃষক ঘরে আনতে পারে। ব্রি মহাপরিচালক আরও বলেন, যেহেতু এবছর ধানের ভাল দাম পেয়েছে কৃষক সে কারণে কৃষকদের ব্যাপক আগ্রহ আছে বোরো আবাদ নিয়ে। জানা গেছে, এ বছর হাইব্রিডের আবাদ বাড়াতে কৃষকদের বিনামূল্যে দেয়া হয়েছে সার ও ধানের বীজ। এছাড়া প্রথমবারের মতো ৬১ জেলার ৬১ উজেলায় ৫০ একর করে হাইব্রিড জাতের ধান উৎপাদনের প্রদর্শনী করা হয়েছে। যাকে অধিদফতর বলছে সমলয়ের চাষাবাদ প্রযুক্তি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যে আরও জানা গেছে, এবার বোরো আবাদের জন্য সারাদেশে লক্ষ্যমাত্রা ৪৮ লাখ ৫ হাজার ২০০ হেক্টর। এখন পর্যন্ত বোরো ধান রোপণ করা হয়েছে ৪৬ লাখ ১২ হাজার ৫৪৫ হেক্টর জমিতে। আবাদে অগ্রগতির হার ৯৫.৯৯ শতাংশ। এবার বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২ কোটি ৫ লাখ ৮১ হাজার ৩০০ টন। আর বোরো ধানের বীজতলা তৈরির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ২৫ হাজার ৪০০ হেক্টর। বীজতলা তৈরি হয়েছে ২ লাখ ৭৩ হাজার ৪৬২ হেক্টর জমিতে। বীজতলা তৈরিতে অগ্রগতির হার ১২১.৩২ শতাংশ। আর গত বছরের চেয়ে এবার প্রায় ৫ শতাংশ বেশি জমিতে বীজতলা তৈরি হয়েছে। অর্থাৎ গত বছর বীজতলা তৈরি হয়েছিল ১১৬.৪৭ শতাংশ। এদিকে, গত বছর বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৮ লাখ ৬৬ হাজার হেক্টর। আবাদ হয়েছিল ৪৭ লাখ ৫৪ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে। আর গেল বছর বোরো ধানের উৎপাদন হয়েছিল ২ কোটি ১ লাখ ৮১ হাজার টন। হাইব্রিড জাতের ধান ছাড়াও এবছর উফশী জাতের বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৩৬ লাখ ৭৩ হাজার ৮৩০ হেক্টর হলেও এখন পর্যন্ত আবাদ হয়েছে ৩৪ লাখ ৪ হাজার ৮০ হেক্টর জমিতে। আবাদে অগ্রগতির হার ৯২.৬৬ শতাংশ। উফশী জাত থেকে এক কোটি ৫০ লাখ ৭০ হাজার ১৭৪ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এছাড়াও স্থানীয় জাতের বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ২৬ হাজার ৭৩৭ হেক্টর হলেও আবাদ হয়েছে ২৩ হাজার ৬৫ হেক্টর জমিতে। এ জাতের বোরো আবাদের অগ্রগতির হারও ৮৬ .২৬ শতাংশ। স্থানীয় জাত থেকে ৫১ হাজার ৯৮০ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। বোরো আবাদে হাইব্রিড জাতে অগ্রগতির হারই সবচেয়ে বেশি। বোরো আবাদে মোট অগ্রগতির হার ৯৩.৯১ শতাংশ।
×