ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

মুজিববর্ষে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ উত্তর সিটির

খোলা মাঠে ঝিলের ধারে লাইব্রেরি, হাত বাড়ালেই বই

প্রকাশিত: ২৩:০০, ২০ জানুয়ারি ২০২১

খোলা মাঠে ঝিলের ধারে লাইব্রেরি, হাত বাড়ালেই বই

মোরসালিন মিজান ॥ সিটি কর্পোরেশনের গাড়ি মানেই, কেন যেন মনে হয়, ময়লার গাড়ি। আবর্জনা বহনকারী এই গাড়ি মাঝেমধ্যেই চোখে পড়ে। তারও আগে টের পেয়ে যায় নাসিকা। সে কী দুর্গন্ধ! নাক চেপে ধরে গাড়িটির চলে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। তবে আজ যে গাড়ির কথা হবে সেটির গল্প একেবারেই আলাদা। উত্তর সিটি কর্পোরেশনের এ গাড়ি দেখলে কাছে ছুটে যেতে ইচ্ছে করে। সামনে গিয়ে কিছু সময় দাঁড়াতে মন চায়। কারণ এ গাড়ি ঠিক গাড়ি নয়। ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি। যারা পিছিয়ে পড়াদের দলে, যারা বই পড়ার মূল্য বুঝে না তারা সেদিকে কৌতূহলী চোখে তাকান। ওই তাকানো পর্যন্তই। কিন্তু যারা পড়তে ভালবাসেন লাইব্রেরিটি দেখে তাদের ভেতেরে দারুণ এক ভাললাগা কাজ করে। লাইব্রেরির বই হাতে নিয়ে পাতা উল্টান। কয়েক পাতা পড়েও ফেলেন কেউ কেউ! আর কেনার সুযোগ তো আছেই। মুজিবর্ষ উপলক্ষে গত বছর ‘পরম্পরা’ নামে বিশেষ এ লাইব্রেরি কার্যক্রম শুরু করে উত্তর সিটি। আরও অনেকে অনেক কার্যক্রম হাতে নিয়েছিল। করোনা পরিস্থিতিতে বেশিরভাগই স্থগিত করতে হয়েছে। তবে একই সময়ে চলমান রয়েছে উত্তর সিটির ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি কার্যক্রম। কোভিডের কালে যখন ঢাকার অনেক গ্রন্থাগার বন্ধ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলেনি তখন লাইব্রেরিটি নতুন আবেদন নিয়ে সামনে আসে বৈকি। না, গাড়ির সংখ্যা খুব বেশি নয়। ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির বিক্রয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, গাড়ি মাত্র দু’টি। কিন্তু প্রতিদিনই কর্পোরেশন এলাকার কোন না কোন প্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে। টার্গেট ৫৪টি ওয়ার্ড। প্রতি ওয়ার্ডে তিনদিন করে অবস্থান করছে। গাড়ি আজ মিরপুর তো কাল ফার্মগেট। একইভাবে আজ খোলা মাঠে, কাল হাতিরঝিলে। অর্থাৎ, পাঠকের কাছে আপনি পৌঁছে যাচ্ছে। সামনে পেয়ে যাচ্ছেন বলেই হয়তো অনেক বাবা মা তার সন্তানকে আইসক্রিমের পাশাপাশি একটি বইও কিনে দিচ্ছেন। প্রবীণরা হাঁটতে বের হয়ে লাইব্রেরির সামনে এসে থামছেন। বই হাতে নিয়ে ভূমিকা বা ভেতর থেকে দুই এক পাতা পড়ছেন। কিনছেনও। ফার্মগেট এলাকায় লাইব্রেরিটি অনুসরণ করে দেখা যায়, মূলত মুক্তিযুদ্ধ ও বাঙালীর অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে লেখা বইয়ের সংগ্রহ। জাতির জনকের নিজের লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইটি পাওয়া যাচ্ছে এখানে। মূল্যবান এ গ্রন্থের চাহিদা এখনও তুঙ্গে। সবার আগে এ বইটিই হাতে নিচ্ছেন পাঠক। পাওয়া যাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর লেখা আরেকটি গ্রন্থ ‘আমার দেখা নয়াচীন।’ ছোটদের জন্য রাখা হয়েছে রিদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববির উদ্যোগে প্রকাশিত গ্রাফিক নভেল ‘মুজিব’র ৮টি পর্ব। লাইব্রেরিতে পাওয়া যাচ্ছে শেখ মুজিব তনয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজের লেখা বইও। তাকে নিয়েও অনেকে লিখেছেন। ‘হাসুর পৃথিবী’, ‘হাসুর দেশ’, ‘মুক্তির প্রতীক্ষায় হাসিনা’, ‘শেখ হাসিনার ফেরা’ ইত্যাদি বই পড়ে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতি ও সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে আরও জানার সুযোগ হয়। সুযোগটি কাজে লাগাচ্ছিলেন হেমায়েত উদ্দীন নামের মাঝবয়সী এক পাঠক। বললেন, এদিক দিয়েই যাচ্ছিলাম। হঠাৎ গাড়িটি দেখে কিছুটা অবাক হলাম। বই তো, হাতে নিয়ে দেখলাম। কয়েকটি বই উল্লেখযোগ্য। তবে সংগ্রহ আরও বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি। আরেক পাঠক হাসান ইমাম বলছিলেন, বঙ্গবন্ধুর চীন ভ্রমণ নিয়ে লেখা বইটি আমার পড়া হয়নি। হাতের কাছে পেয়ে এখন মনে পড়ল। তার মতে, এটাও তো এক ধরনের উপকার। ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির বিক্রয় প্রতিনিধি শামজিদ শাহরিয়ার বলছিলেন, আমরা কোন্ দিন কোন্ এলাকায় থাকব, তা আমাদের ফেসবুক পেজ থেকে আগেই জানিয়ে দেয়া হচ্ছে। ‘পরম্পরা’ নামের ফেসবুক পেজে পাওয়া যাচ্ছে আরও নানা তথ্য। ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি আরও আছে। অনেক আগে থেকে কাজ করছে। কিন্তু সিটি কর্পোরেশন এমন উদ্যোগের সঙ্গে কীভাবে? জানতে চাইলে উত্তর সিটির মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলামের জবাবÑ সিটি কর্পোরেশনের আসলে অনেক কিছু করার আছে। নানা ভাবনা থেকে কাজ করা যায়। আমরা তেমন একটি নতুন ভাবনা নিয়ে মাঠে নেমেছি। অভিজ্ঞতা কী? জানতে চাইলে তিনি বলেন, কেউ বউ পড়েন। কেউ পড়ি পড়ি করে জীবন কাটিয়ে দেন। তাতে কী? বই যে জ্ঞানের উৎস, এ ব্যাপারে কারও কোন সন্দেহ নেই। আমাদের এই সেবাটি যারা চান তারা অন্তত পাচ্ছেন। ভবিষ্যতে কার্যক্রমটি আরও বড় করার চিন্তা আছে বলেও জানান মেয়র।
×