ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিনামূল্যে ভ্যাকসিন

প্রকাশিত: ২০:১৯, ৩০ অক্টোবর ২০২০

বিনামূল্যে ভ্যাকসিন

বাংলাদেশের সব নাগরিকের জন্য বিনামূল্যে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী ভ্যাকসিন প্রাপ্তির বিষয়টি নিঃসন্দেহে স্বস্তিদায়ক। সরকার তথা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যেই তা নিশ্চিত করেছে, যা জনমনে ব্যাপক আশা ও উদ্দীপনার সঞ্চার করেছে। এটি বর্তমান জনবান্ধব সরকার বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশের নাগরিকদের জন্য একটি অনন্য উপহার হিসাবে বিবেচনার দাবি রাখে অবশ্যই। কেননা, বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া কোভিড-১৯ মহামারীর বিরুদ্ধে কার্যকর টিকা যে দেশই প্রথম আবিষ্কার করুক না কেন, ব্যাপক চাহিদার প্রেক্ষিতে তা খুব সুলভ ও সহজপ্রাপ্য হবে না- এ কথা বলাই বাহুল্য। অনেক উন্নত ও ধনী দেশই টিকা সংগ্রহের ব্যাপারে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে এগিয়ে থাকবে। সে তুলনায় বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে। তবে সরকারপ্রধান করোনা মহামারীর শুরু থেকেই গভীর প্রত্যয় ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলে আসছেন, এই মহাদুর্যোগেও দেশের কেউ না খেয়ে থাকবে না। সবার জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। এর পাশাপাশি তিনি এও নিশ্চিত করে বলেছেন, বিশ্বের যে দেশই করোনার টিকা প্রথম আবিষ্কার ও সফলভাবে প্রয়োগ করুক না কেন সঙ্গে সঙ্গে তা সংগ্রহ করে প্রয়োগ করা হবে দেশের মানুষের ওপর, যাতে এই মহামারীর বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তোলা যায়। এখানে বলা আবশ্যক, এই হন্তারক মহামারী প্রতিরোধে সরকারের স্বাস্থ্যবিধি মানাসহ নানা পদক্ষেপের ফলে সংক্রমণ ও মৃত্যুহার অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের তুলনায়। এখন চাই করোনা প্রতিরোধী টিকা সংগ্রহ তথা আমদানি করে দেশবাসীকে তা বিনামূল্যে সরবরাহ ও প্রয়োগ করা। এর জন্য সরকার পৃথক অর্থ বরাদ্দও রেখেছে ১২০০ হাজার কোটি টাকা। এর বাইরেও বিশ্বব্যাংক, এডিবি, এআইডিবি ও জাইকার কাছে ৫০০ মিলিয়ন ডলার করে অনুদান চেয়ে চিঠি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। দেশে বিদ্যমান বিনামূল্যে ইপিআই টিকাদান কর্মসূচীর মতোই বিতরণ ও প্রয়োগ করা হবে এই ভ্যাকসিন। উল্লেখ্য, এক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিশেষ সাফল্য রয়েছে, যার স্বীকৃতি মিলেছে বিশ্বব্যাংক ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক। ভ্যাকসিনের সর্বশেষ খবর অনুযায়ী যুক্তরাজ্যের স্বনামখ্যাত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় উদ্ভাবিত কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন, যা প্রস্তুত করেছে এ্যাস্ট্রোজেনেকা, তা যুক্তরাজ্যে প্রয়োগ করা হবে চলতি বছরের বড়দিনের আগেই। বাংলাদেশের সবিশেষ আগ্রহ রয়েছে এই টিকার প্রতি। তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল শেষে মানুষের ওপর প্রয়োগ করে দেখা গেছে, এটি কমবয়সী ও প্রবীণ-সবার জন্য উপযোগী এবং কার্যকর। ভারতেও এই টিকা তৈরি হবে। সুতরাং বাংলাদেশ যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই টিকা পাবে তাতে সন্দেহ নেই। এখন প্রয়োজন সবার জন্য বিনামূল্যে ভ্যাকসিন প্রাপ্তি নিশ্চিত করা। তবে বিনামূল্যে করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে যেন কোন দুর্নীতি-অনিয়ম বা নয়-ছয় না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদের। সর্ববৃহৎ বৈশ্বিক আন্তর্জাতিক সংস্থা জাতিসংঘের ৭৫তম সাধারণ অধিবেশনে ভার্চুয়াল ভাষণে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি যে উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন তাও সবিশেষ প্রণিধানযোগ্য। করোনা মহামারীর ভ্যাকসিন যে দেশই প্রথম আবিষ্কার করুক না কেন, সেটিকে বৈশ্বিক সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করে সব দেশের জন্য এর প্রাপ্তি সহজসাধ্য সুলভ ও নিশ্চিত করা আবশ্যক। মোটকথা, করোনা ভ্যাকসিনের মেধাস্বত্ব হতে হবে বৈশ্বিক, যাতে সহজে ও সুলভে সব দেশ ও জাতির জন্য এর প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা যায়। জাতিসংঘসহ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এক্ষেত্রে ইতিবাচক অবদান রাখতে পারে অবশ্যই।
×