ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচন পর্যন্ত ফ্লোরিডায় থাকবেন ট্রাম্প, ঝটিকা সফরে বাইডেন

প্রকাশিত: ২২:৩৮, ২৮ অক্টোবর ২০২০

নির্বাচন পর্যন্ত ফ্লোরিডায় থাকবেন ট্রাম্প, ঝটিকা সফরে বাইডেন

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আর মাত্র এক সপ্তাহ বাকি। দুই প্রার্থী বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ডেমোক্র্যাটের জো বাইডেন নিজের পক্ষে ভোট টানতে প্রচারে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এরই মধ্যে কোনরকম পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই সোমবার দোদুল্যমান রাজ্য হিসেবে পরিচিত পেনসিলভানিয়ায় হাজির হন বাইডেন। আর এ সপ্তাহেই তিনি জর্জিয়া ও আইওয়ায় যাবেন প্রচার চালাতে। এদিকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচন পর্যন্ত ফ্লোরিডাতেই থাকবেন বলে জানা গেছে। আর বাইডেনের রানিংমেট কমলা হ্যারিস সোমবার আগাম ভোট দিয়েছেন। অন্যদিকে সুপ্রীমকোর্টে এ্যামি কোনি ব্যারেটের নিয়োগকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে বড় জয় হিসেবে দেখছেন রিপাবলিকানরা। এ্যামি কোনি ব্যারেটের এই নিয়োগের সমালোচনা করেছেন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেন। খবর বিবিসি, সিএনএন ও গার্ডিয়ানের। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী জো বাইডেন সোমবার ডেলাওয়ার কাউন্টির একটি ভোটার এ্যাক্টিভেশন সেন্টার পরিদর্শন করেন। বাইডেনের প্রচার শিবিরের বরাত দিয়ে সিএনএন জানায়, ভোটার এ্যাক্টিভেশন সেন্টারে ভোটারদের অভিবাদন জানান বাইডেন। তাদের সঙ্গে মতবিনিময় ও ফটোসেশনে অংশ নেন তিনি। জনপ্রিয়তা বাড়াতে পেনসিলভানিয়ায় দফায় দফায় সমাবেশ করছেন ট্রাম্প। এমন পরিস্থিতিতে দৃশ্যত আকস্মিক সফরে নিজের সমর্থকদের উদ্দীপ্ত করার প্রয়াস নেন বাইডেন। এদিকে নির্বাচনে সোমবার আগাম ভোট দিয়ে বাইডেনের রানিংমেট কমলা হ্যারিস টুইটারে দেয়া এক পোস্টে লিখেছেন, ‘আগাম ভোট দিয়েছি। আপনি দিয়েছেন কি?’ কমলা হ্যারিসের একজন সহযোগী জানিয়েছেন, সোমবার ইমেইলের মাধ্যমে ভোট দিয়েছেন কমলা ও তার স্বামী ডগলাস এমহফ। এর আগে বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও আগাম ভোট দেন। নির্বাচন পর্যন্ত ফ্লোরিডাতেই থাকবেন ট্রাম্প ॥ নির্বাচন পর্যন্ত ফ্লোরিডায় থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবারের নির্বাচনে ফ্লোরিডা একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্য হওয়ায় সেখানকার ভোট টানতেই আপাতত সেখানে বসবাস করবেন তিনি। আগামী ৩ নবেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিততে হলে ট্রাম্পকে ফ্লোরিডার ২৯টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট কব্জা করতে হবে। গত ১০০ বছরে কোন রিপাবলিকান প্রার্থীর পক্ষে এ ফ্লোরিডায় জয়লাভ ছাড়া হোয়াইট হাউস দখল করা সম্ভব হয়নি। ২০১৬ সালে তিনি ১ পয়েন্টের বেশি ব্যবধানে হিলারি ক্লিনটনকে হারিয়েছিলেন, ফলে সঙ্গত কারণেই ডোনাল্ড ট্রাম্প এ অঙ্গরাজ্য ধরে রাখার বিষয়ে আশাবাদী। অধিকাংশ জনমত জরিপ অনুসারে ফ্লোরিডায় ট্রাম্প ও বাইডেন সমানে সমান লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। নির্ভরযোগ্য ওয়েবসাইট ফাইভথার্টিএইট জানায়, এ মুহূর্তে ট্রাম্পের তুলনায় দুই পয়েন্টে (৪৮: ৪৬) এগিয়ে আছেন ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী জো বাইডেন। ভিন্ন জরিপে অবশ্য এ ব্যবধান আরও কম, কোনটিতে ট্রাম্প সামান্য এগিয়ে। ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যে ডাকযোগে ভোটে ভালভাবে এগিয়ে থাকায় বাইডেন বেশ স্বস্তিতে ছিলেন। গত সোমবার থেকে ফ্লোরিডায় ভোট কেন্দ্রে গিয়ে আগাম ভোট দেয়া শুরু হয়েছে। প্রাথমিক হিসাব অনুসারে রিপাবলিকানরা বিপুল সংখ্যায় ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেয়া শুরু করেছেন। এ রাজ্যের ডানঘেঁষা কিউবান ভোটারদের অধিকাংশ ট্রাম্পের পক্ষেই ভোট দেবেন বলে ভাবা হচ্ছে। এতে স্বস্তির বদলে বাইডেনের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়তে শুরু করেছে। জো বাইডেনের জন্য ফ্লোরিডা গুরুত্বপূর্ণ, তবে এ অঙ্গরাজ্য ছাড়াও তার পক্ষে ২৭০ ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট অর্জন সম্ভব। ফ্লোরিডার চেয়েও তার জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ ডেমোক্র্যাটদের ‘নীল দেয়াল’ হিসেবে পরিচিত পেনসিলভানিয়া, মিশিগান ও উইসকনসিন। গত নির্বাচনে এ তিন রাজ্যেই অল্প ভোটের ব্যবধানে ট্রাম্প জয়লাভ করে বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছিলেন। বাইডেন এ মুহূর্তে এখানে ট্রাম্পের তুলনায় নিরাপদ ব্যবধানে এগিয়ে। আগাম ভোট ১০ কোটিতে পৌঁছতে পারে ॥ এক সমীক্ষা বলছে, এবার যুক্তরাষ্ট্রে আগাম ভোটের সংখ্যা ৯ থেকে ১০ কোটিতে পৌঁছবে। অর্থাৎ ৩ নবেম্বরের আগেই বিপুল সংখ্যক মানুষ আগাম ভোট দিয়ে ফেলবেন। ২০১৬ সালের নির্বাচনে আগাম ভোট পড়েছিল পাঁচ কোটি। তবে এনবিসি’র অনুমান সত্য হলে এবার এ সংখ্যা হবে তার দ্বিগুণ। দোদুল্যমান রাজ্যগুলোতে এবার আগাম ভোটের হার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। মেইলেও নিজেদের রায় জানিয়ে দিয়েছেন বিপুল সংখ্যক ভোটার। বিভিন্ন রাজ্যে গতবার ট্রাম্প ও হিলারি ক্লিনটন যৌথভাবে যে ভোট পেয়েছিলেন এবার এরইমধ্যে তার চেয়ে বেশি আগাম ভোট পড়েছে। বিশ্লেষকদের ধারণা, ডেমোক্র্যাটদের জেতানোর চাইতে ট্রাম্পকে ঠেকাতেই এবার অনিয়মিত ভোটাররাও নির্বাচনে আগ্রহী হচ্ছেন। এ পর্যন্ত প্রায় ছয় কোটি ২০ লাখ ভোটার আগাম ভোট দিয়েছেন। এনবিসি নিউজকে ভোটিং ডাটা সরবরাহ করে ডেমোক্র্যাটিক পলিটিক্যাল ডাটা ফার্ম টার্গেট স্মার্ট। তাদের সরবরাহ করা তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই নির্বাচনী ভবিষ্যদ্বাণী করে থাকে সংবাদমাধ্যমটি। দোদুল্যমান রাজ্যগুলোতে এবার আগাম ভোটের হার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। মেইলেও নিজেদের রায় জানিয়ে দিয়েছেন বিপুল সংখ্যক ভোটার। নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে গুরুত্বপূর্ণ যে ‘ব্যাটলগ্রাউন্ড’ বা ‘দোদুল্যমান’ রাজ্যগুলো রয়েছে তার একটি পেনসিলভানিয়া। সেখানে এরই মধ্যে আগাম ভোট দিয়েছেন প্রায় ১৪ লাখ মানুষ। মিশিগান ও উইসকনসিনের মতো দোদুল্যমান রাজ্যগুলোতেও এবার আগাম ভোটের জয়জয়কার। দুই রাজ্যেই এবার যে পরিমাণ আগাম ভোট পড়েছে সেটি গত বারের প্রায় দ্বিগুণ। ওহাইও, টেক্সাস ও জর্জিয়ার মতো রাজ্যগুলোতেও এবার প্রচুর আগাম ভোট পড়েছে। টেক্সাসে এরইমধ্যে ৬৯ লাখ আগাম ভোট পড়েছে। গতবারের চেয়ে এ সংখ্যা প্রায় ১৪ লাখ বেশি। এ রাজ্যের ৪০ শতাংশেরও বেশি ভোটার এরইমধ্যে তাদের রায় জানিয়ে দিয়েছেন। নর্থ ক্যারোলিনা, টেক্সাস, ফ্লোরিডা, জর্জিয়া ও আরিজোনার মতো তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ রাজ্যগুলোতেও এবার আগাম ভোটদানের হার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। দৃশ্যত এবার অনিয়মিত ভোটাররা নির্বাচন নিয়ে আগ্রহী হচ্ছেন। দলে দলে আগাম ভোট দিচ্ছেন তারা। বিশ্লেষকদের ধারণা, ডেমোক্র্যাটদের জেতানোর চেয়ে ট্রাম্পকে ঠেকাতেই এবার অনিয়মিত ভোটাররাও নির্বাচনে আগ্রহী হচ্ছেন। এই রেকর্ড সংখ্যক আগাম ভোটই পাল্টে দিতে পারে এবারের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটের সমীকরণ। তবে শেষ পর্যন্ত হোয়াইট হাউসের টিকিট কার হাতে পৌঁছাবে সে সিদ্ধান্ত নেবেন মার্কিন ভোটাররাই। এজন্য অপেক্ষার প্রহর গুনতে হবে আগামী ৩ নবেম্বর পর্যন্ত। পৃথিবীর বাইরে থেকে মার্কিন নির্বাচনে ভোট ॥ মহাকাশচারী কেট রুবিনস হলেন সেই একমাত্র মার্কিন ভোটার, যিনি পৃথিবীর বাইরে রয়েছেন। তবে ভোট দেয়ার নাগরিক অধিকার ঠিকই রক্ষা করেছেন তিনি। মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, এবার দ্বিতীয়বারের মতো ইন্টারন্যাশনাল স্পেস সেন্টার (আইএসএস) থেকে মার্কিন নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন রুবিন। এর আগে ২০১৬ সালেও কেট আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন থেকে ভোট দিয়েছিলেন কেট। দুই রুশ মহাকাশচারীর সঙ্গে তিনি গত ১৪ অক্টোবর আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে গেছেন। পৃথিবীতে ফিরবেন ৩ নবেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর। ফলে তাকে স্পেস স্টেশন থেকে ভোট দিতে হয়েছে।
×