ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রযুক্তি পণ্য রফতানি

প্রকাশিত: ১৯:৫১, ১৯ অক্টোবর ২০২০

প্রযুক্তি পণ্য রফতানি

দেশে তৈরি হার্ডওয়্যার-সফটওয়্যার ও প্রযুক্তি পণ্য বিদেশে রফতানি বাড়ার সুসংবাদটি এসেছে শনিবারের জনকণ্ঠে। দেশে গত দুই বছরে এই খাত থেকে দেড়-দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় এসেছে। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বাইরে যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশে মোবাইল ও ল্যাপটপ রফতানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। বিশ্বের ১৮০ দেশে বাংলাদেশের সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার রফতানির বাজার তৈরি হয়েছে, এটি বিস্ময়করই বটে। অন্যদিকে আউটসোর্সিংয়ে তরুণরা বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছেন। এখন ভারতের কাছাকাছি টাকায় তরুণ প্রজন্ম আউটসোর্সিংয়ের কাজ পাচ্ছেন, এটিও ডিজিটাল বাংলাদেশের একটি অর্জন। আগামী বছরের মধ্যে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয়ের টার্গেট নিয়েছে সরকার। আমরা আশাবাদী এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণের বিষয়ে। শুধু বিদেশে রফতানিই নয়, অভ্যন্তরীণ সফটওয়্যারের বাজারও বড় হচ্ছে। দেশের বাজার দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার। এর মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশই দেশী সফটওয়্যার নির্মাতারা দখলে রেখেছেন। তবে বড় প্রতিষ্ঠানের কাজগুলোর ক্ষেত্রে এখনও বিদেশী সফটওয়্যারের ওপর নির্ভরতা অস্বীকার করা যায় না। দেশের ৬০ ব্যাংকের মধ্যে ২৭টি ব্যাংকেই দেশী সফটওয়্যার ব্যবহৃত হচ্ছে। দেশের সফটওয়্যার খাতে বেশি চাহিদা রয়েছে ইআরপি, বিভিন্ন এ্যাপ্লিকেশন তৈরিসহ, ডিজিটালাইজেশনের কাজে ব্যবহৃত সফটওয়্যার। তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ভবিষ্যত নিয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, তৈরি পোশাক যেমন ধীরে ধীরে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের বড় একটি খাত হিসেবে বেড়ে উঠেছে, একইভাবে তথ্যপ্রযুক্তি খাতও এগিয়ে যাচ্ছে। একদিন এই খাত বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের বড় উৎস হবে। মন্ত্রীর এমন বক্তব্য তরুণদের মনে নিশ্চয়ই আশার মশাল জ্বেলে দেবে। তথ্যপ্রযুক্তিবিদদের মতে, দেশে দিন দিন ‘ইমার্জিং চেন’ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটা আরও বড় ‘স্কেলে’ করতে হলে ইন্টারনেট স্পীড বাড়ানোর বিকল্প নেই। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ডেনমার্ক, সুইডেন, হল্যান্ড, সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বের ৭০ থেকে ৮০ দেশে আমাদের তরুণরা আউটসোর্সিং করছেন। ১০ বছর আগে এটা ভাবাও যেত না। ভারতে আউটসোর্সিংয়ের জন্য হায়দ্রাবাদের নামও হয়ে গেছে ‘সিলিকন ভ্যালি’। তখন থেকেই দেশটির যুবসমাজ বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার আয় করছে। এখন আমাদেরও এমন সুযোগ তৈরি হয়েছে। পৃথিবীর অনেক বড় কোম্পানি আমাদের তরুণদের কাজ দেয়ার জন্য আগ্রহী। ফ্রিল্যান্সিং তথ্যপ্রযুক্তির খাত বহু তরুণের আয়ের অন্যতম উৎস। ঘরে বসেই এই খাত থেকে বড় অঙ্কের টাকা আয় করা সম্ভব হচ্ছে। সরকার এ জন্য দেশে ৫৫ হাজার ফ্রিল্যান্সার তৈরির কর্মকান্ড এগিয়ে নিয়ে চলেছে। দক্ষ ফ্রিল্যান্সার গড়ে উঠলে ভিশন ২০২১ সালের মধ্যে দেশ কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছবে। স্মরণযোগ্য, বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং (বিপিও) সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছিলেন। তরুণদের উদ্দেশে তিনি সরকারী চাকরির দিকে না তাকিয়ে আইটি সেক্টরে মন দেয়ার কথা বলেছেন। কেননা দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে কর্মসংস্থানের অবারিত সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কোভিড পরবর্তী বিশ্ব পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জন্য শ্রমবাজার অনেকটাই সংকুচিত হয়ে পড়বে। মানবসম্পদকে সত্যিকারভাবে সুযোগ্য করে তোলার জন্য নানাবিধ প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। তাতে অর্থসংস্থান আরও চ্যালেঞ্জপূর্ণ হয়ে উঠছে। বরং একমাত্র তথ্যপ্রযুক্তি খাতেই দেখা যাচ্ছে আশার উজ্জ্বল আলো।
×