ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সালাউদ্দিন আবারও বাফুফে সভাপতি

প্রকাশিত: ২২:৫৫, ৪ অক্টোবর ২০২০

সালাউদ্দিন আবারও বাফুফে সভাপতি

রুমেল খান ॥ আগাম ভবিষ্যদ্বাণী, শঙ্কা, সমালোচনা... সবকিছুকে উড়িয়ে দিয়েছেন কাজী মোঃ সালাউদ্দিন। শনিবার ঢাকার প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে অনুষ্ঠিত বহুল আলোচিত বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) নির্বাচনে সভাপতি পদে বিপুল ভোটে জিতে টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় এলেন এই সাবেক তারকা ফুটবলার। সম্মিলিত পরিষদের প্রধান সালাউদ্দিন ভোট পেয়েছেন ৯৪টি। তার দুই স্বতন্ত্র প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বাদল রায় এবং শফিকুল ইসলাম মানিক পেয়েছেন যথাক্রমে ৪০ ও ১ ভোট। মানিকের ১ ভোট পাওয়া সবার মধ্যে বিস্ময়ের সৃষ্টি করে। দ্বিতীয় সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ-আকর্ষণীয় ‘সিনিয়র সহ-সভাপতি’ পদেও কোন অঘটন ঘটেনি। থেকে গেছেন আগেরজনই, সম্মিলিত পরিষদের আব্দুস সালাম মুর্শেদী। তিনি পান ৯১ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী সমন্বয় পরিষদের শেখ মোঃ আসলাম পেয়েছেন ৪৪ ভোট। এর ফলে সালাউদ্দিনের মতো মুর্শেদীও সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে টানা চারবার নির্বাচিত হলেন। সহ-সভাপতি পদ চারটি। এতে নির্বাচিত হয়েছেন সম্মিলিত পরিষদের ইমরুল হাসান (৮৯ ভোট), কাজী নাবিল আহমেদ (৮১) এবং আতাউর রহমান মানিক (৭৫)। সমন্বয় পরিষদের মহিউদ্দিন আহমেদ মহি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল দুজনেই পেয়েছেন সমান ৬৫ ভোট করে। তার মানে ‘টাই’ হয়েছে। ফলে নিয়ম অনুযায়ী এই পদের ফল নিষ্পত্তির জন্য আবারও ভোটগ্রহণ করা হবে আগামী ৩১ অক্টোবর। সহ-সভাপতি পদে নতুন মুখ ইমরুল এবং মানিক। শীর্ষ ৬টি পদের ৫টিতেই জিতেছে সম্মিলিত পরিষদ। এক্ষেত্রে সমন্বয় পরিষদের ভরাডুবিই ঘটেছে বলা যায়। তবে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করলে এই নির্বাচনে সভাপতি পদে ফেবারিট ছিলেন সালাউদ্দিনই। তিনি ছিলেন একটি প্যানেলের ব্যানারে। কিন্তু তার দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বাদল এবং মানিক কেউই অন্য কোন প্যানেলে ছিলেন না। ফলে শুরু থেকেই টেকনিক্যালি সুবিধাজনক অবস্থান নিয়ে এগিয়ে ছিলেন সালাউদ্দিন। প্রথমে জানানো হয়েছিল ভোট গ্রহণের সময়সীমা দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। কিন্তু পরে নির্বাচন কমিশনার শনিবার এজিএমের পর ভোট গ্রহণের সময়সীমা একঘণ্টা বাড়িয়ে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত করে। সময়সীমা বাড়ালেও যাতে দ্রুত সময় ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যায়, সে জন্য ভোট গ্রহণের কক্ষে আটটি আলাদা বুথ স্থাপন করে নির্বাচন কমিশন। ১৩৯ ভোটার থাকলেও ভোট জমা পড়ে ১৩৫টি। সভাপতি পদের লড়াইয়ে না থেকেও ছিলেন বাদল রায়। গত ১২ সেপ্টেম্বর বাফুফের তৎকালীন সহ-সভাপতি পরিবারের আপত্তি এবং স্বাস্থ্যগত সমস্যাকে কারণ দেখিয়ে নির্বাচনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন, কিন্তু নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার একঘণ্টা দেরিতে। ফলে নির্বাচন কমিশন জানায়, বাদল নির্বাচন করেন বা না করেন ব্যালট পেপারে তার নাম থাকবে। বাদল তখন নিজেও মৌখিকভাবে ভোটারদের মানা করেন তাকে ভোট না দিতে। কিন্তু পরে তিনি নিজের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ফেসবুকে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাওয়ার কৌশল নেন। এতে তিনি ব্যাপকভাবে সমালোচিতও হন। সালাউদ্দিনের এই জয় প্রমাণ করল তার বিরুদ্ধে যতই অভিযোগ থাকুক ও সমালোচনা হোক, ভোটাররা সভাপতি পদে তাকেই দেখতে চান। এখন দেখার বিষয় নির্বাচনের আগে তিনি যে ৩৬ দফা নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিেেয়ছিলেন সেগুলো তিনি পরের চার বছরের মধ্যে পূরণ করতে পারেন কি না। ১৪টিতেই জয়ী সালাউদ্দিনের সম্মিলিত পরিষদ ॥ নিরঙ্কুশ বিজয় না পেলেও কাজী মোঃ সালাউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত পরিষদই অর্ধেকের বেশি পদ জিতে নিয়েছে। শনিবার ঢাকার প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) নির্বাচনে এই কৃতিত্ব দেখায় তারা। মোট ২১ পদের মধ্যে ২০টির ফল ঘোষিত হয়। তাতে ১৪টিতেই জিতে সম্মিলিত পরিষদ। পক্ষান্তরে সমন্বয় পরিষদ জেতে ছয়টি পদে। বলাবাহুল্য, তাদের এই ছয়টি পদের সবই হচ্ছে সদস্যপদ। তাদের জয়ী প্রার্থীরা হলেন- আবদুল ওয়াদুদ পিন্টু (৮৬ ভোট), আরিফ হোসেন মুন (৮৫), টিপু সুলতান (৮১), আমের খান (৬৯), সাইফুল ইসলাম (৬৯) এবং মহিদুর রহমান মিরাজ (৬৮)। এছাড়া সম্মিলিত পরিষদের বিজয়ী সদস্যপ্রার্থীরা হলেন- জাকির হোসেন চৌধুরী (৮৭ ভোট), বিজন বড়ুয়া (৮৫), নুরুল ইসলাম নুরু (৮৪), মাহিউদ্দিন আহমেদ সেলিম (৮৪), সত্যজিৎ দাশ রুপু (৭৬), ইলিয়াস হোসেন (৭৫), ইমতিয়াজ হামিদ সবুজ (৭৪), মাহফুজা আক্তার কিরণ (৭০) এবং হারুনুর রশিদ (৭০)। হেরে গিয়ে উল্লেখযোগ্য প্রার্থীদের মধ্যে বাদ পড়েছেন- সহসভাপতি পদে আমিরুল ইসলাম বাবু, শেখ মোঃ মারুফ হাসান; সদস্যপদে- শওকত আলী খান জাহাঙ্গীর, অমিত খান শুভ্র, ইকবাল হোসেন, আসাদুজ্জামান মিঠু, ইমতিয়াজ সুলতান জনি, ফজলুর রহমান বাবুল, হাসানুজ্জামান খান বাবলু, শাকিল মাহমুদ চৌধুরী, সাব্বির হোসেন প্রমুখ। বিজয়ীদের তালিকা ॥ সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিন, সিনিয়র সহ-সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী, সহ-সভাপতি কাজী নাবিল আহমেদ, ইমরুল হাসান, আতাউর রহমান মানিক; সদস্য জাকির হোসেন চৌধুরী, আবদুল ওয়াদুদ পিন্টু, বিজন বড়ুয়া, আরিফ হোসেন মুন, নুরুল ইসলাম নুরু, মাহিউদ্দিন আহমেদ সেলিম, টিপু সুলতান, সত্যজিৎ দাশ রুপু, ইলিয়াস হোসেন, ইমতিয়াজ হামিদ সবুজ, মাহফুজা আক্তার কিরণ, হারুনুর রশিদ, আমের খান, সাইফুল ইসলাম ও মহিদুর রহমান মিরাজ।
×