ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাস্তবসম্মত রোডম্যাপ চাই

প্রকাশিত: ২২:৫২, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০

বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাস্তবসম্মত রোডম্যাপ চাই

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন, দৃঢ়ভাবে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা এবং জাতিসংঘকে সঠিক পথে রাখতে ‘বিশ্বাসযোগ্য ও বাস্তবসম্মত’ একটি রূপরেখা প্রণয়ন করতে সদস্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, যাতে করে প্রতিশ্রুতি পূরণ এবং দৃঢ়ভাবে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করা যায়। জাতিসংঘকে শতবর্ষ ও এর বেশি সময়ে সঠিক লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে, ইউএনজিএ-৭৫ কে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন ও সুস্পষ্টভাবে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সকলের কাছে একটি গ্রহণযোগ্য ও বাস্তবসম্মত এই রোডম্যাপ তৈরি করা উচিত। মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় ভোররাতে জাতিসংঘের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দফতরে শুরু হওয়া জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বিশেষ অধিবেশনে ভার্চুয়াল বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী উন্নত ও উন্নয়নশীল বিশ্ব- সবার কাছেই জাতিসংঘের প্রয়োজনীয়তা যে এখন অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি, করোনাভাইরাস মহামারী তা দেখিয়ে দিয়েছে। আর সে কারণেই ভূ-রাজনৈতিক বৈরিতা থেকে জাতিসংঘকে ‘দুর্বল করার চেষ্টা’ মেনে না নেয়ার আহ্বানও জানান। জাতিসংঘকে দুর্বল করে এমন ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার অনুমোদন না দেয়ারও আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের অবশ্যই জাতিসংঘকে দুর্বল করে এমন কোন ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার অনুমোদন দেয়া উচিত নয়। আমরা এটা পূর্ববর্তীদের কাছ থেকে পেয়েছি। এজন্য তাদের কাছে আমরা ঋণী এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য আমাদেরও জাতিসংঘকে একটি সত্যিকার অর্থে সার্বিকভাবে আন্তর্জাতিক কার্যকরী সংস্থায় পরিণত করতে হবে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় আরও বলেন, ‘আমি বলতে চাই যে, আমরা এমন অনেক মুহূর্ত প্রত্যক্ষ করেছি, যা আমাদের মানব সভ্যতার নতুন ইতিহাস গড়ে তুলেছে। ইউএনজিএ ৭৫ এ ধরনের আরেকটি মুহূর্ত আমাদের সামনে এনে দিয়েছে।’ চলমান বৈশ্বিক প্রাণঘাতী মহামারী কোভিড-১৯ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই মহামারী আমাদের ২০৩০ এজেন্ডার লক্ষ্য অর্জনকে আরও কঠিন করে দিয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, চলমান মহামারীসহ বর্তমান সময়ের চ্যালেঞ্জ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এ ধরনের সঙ্কট মোকাবেলার অক্ষমতা প্রকাশ পেয়েছে। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, এই মহামারী দেখিয়ে দিয়েছে যে উন্নত ও উন্নয়নশীল উভয় দেশকেই পূর্বের যে কোন সময়ের চেয়ে জাতিসংঘকে এখন বেশি প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ জাতিসংঘের নেতৃত্বে পরিচালিত বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রমে অনেক উপকৃত হয়েছে। তাই বাংলাদেশ জাতিসংঘের কাছে ঋণী। জাতিসংঘকে তার ম্যান্ডেট পূরণে আমাদের দিক থেকেও আমরা ভূমিকা রাখছি। জাতিসংঘের ৭৫তম বার্ষিকী এবং বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী মিলে যাওয়ায় এই উদযাপন বাংলাদেশের জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের গুরুত্ব বোঝাতে ১৯৭৪ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে বঙ্গবন্ধুর দেয়া বক্তব্য থেকে উদ্ধৃত করেন। সেখানে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন- ‘জাতিসংঘ ভবিষ্যতে মানুষের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটাবে। এটা জাতিসংঘ ও বহুপাক্ষিকতার ওপর বাংলাদেশের আস্থা ও বিশ্বাসের প্রমাণ।’ বিশ্ববাসীর কল্যাণ ও উন্নয়নে জাতিসংঘের সব কর্মীর অক্লান্ত প্রচেষ্টা ও আন্তরিকতার প্রশংসা করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্বে শান্তি বজায় রাখার পক্ষে বাংলাদেশের অবস্থানও পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি। বর্তমানে জাতিসংঘের সব শান্তি রক্ষা মিশনে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি সদস্য থাকার কথা তিনি বক্তৃতায় তুলে ধরেন। শান্তিরক্ষী সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাপী শান্তি বজায় রাখতে সহায়তা করার জন্য বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে এখন আমাদের দেশের সবচেয়ে বেশি সৈন্য ও পুলিশ সদস্য রয়েছে। সংঘাতপ্রবণ দেশগুলোতে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের দেড়শ’ শান্তিরক্ষীর জীবন উৎসর্গের কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। বিশ্ব মানবতার কল্যাণে জাতিসংঘের কর্মকা-কে আরও গতিশীল করারও প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০৩০ উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনকে আরও চ্যালেঞ্জিং করেছে কোভিড-১৯। এটা বর্তমানের আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার ঘাটতিকেই স্পষ্ট করেছে। একইসঙ্গে এই মহামারী দেখিয়েছে যে, উন্নত ও উন্নয়নশীল উভয় দেশসমূহের জন্যই অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে জাতিসংঘকে বেশি প্রয়োজন। এটা দেখিয়েছে, বহুপাক্ষিক প্রচেষ্টাই সামনে এগিয়ে যাওয়ার উপায়। জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠাতা এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য এই সংস্থাকে সার্বিকভাবে মানবকল্যাণের জন্য সত্যিকার অর্থে কার্যকর একটি সংস্থা হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্বের কথা সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, অক্লান্ত প্রচেষ্টা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করার জন্য আমি জাতিসংঘের সকল কর্মকর্তা ও সংস্থাগুলোর প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। মহামারীর কারণে জাতিসংঘের ৭৫ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম বিশ্ব নেতৃবৃন্দ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিচ্ছেন ‘ভার্চুয়ালি’। এবারের ৭৫তম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের মূল প্রতিপাদ্য হল- ‘আমরা ভবিষ্যত চাই, আমাদের জাতিসংঘের প্রয়োজন: বহুপাক্ষিকতার প্রতি আমাদের সম্মিলিত প্রতিশ্রুতি পুনর্নিশ্চিত করতে।’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন জানিয়েছেন, ২৬ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অন্যান্য বিশ্ব নেতার মতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও পূর্বে ধারণকৃত ভাষণ দেবেন। প্রতিবছরের মতো এবারও তিনি বাংলায় বক্তৃতা দেবেন।
×