ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সানজানা হোসেন অন্তরা

ভাড়া বাসা ॥ মুদ্রার দুই পিঠ

প্রকাশিত: ২১:১০, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০

ভাড়া বাসা ॥ মুদ্রার দুই পিঠ

সন্তানদের সুন্দর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এবং জীবনযাত্রার মানের পরিবর্তনের জন্য নগরজীবনের প্রতি মানুষের ঝোঁক বেড়ে গেছে। নগরজীবনে শিক্ষা, সেবা, স্বাস্থ্যসহ সকল রকম সুযোগ-সুবিধা যেমন বেশি, পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগও বেশি। প্রতিদিনই কর্মসংস্থান বা ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় শহরমুখী হচ্ছে মানুষ। আর এসব মানুষের প্রায় ৮৫ শতাংশই ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। কিন্তু বর্তমানে শহরগুলোতে বাড়ি ভাড়া বিড়ম্বনা নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, যার সবচেয়ে বেশি দেখা যায় রাজধানী ঢাকায়। কোন কারণ ছাড়াই ভাড়া বাড়ানো, বাড়িওয়ালাদের দাপট বা স্বেচ্ছাচারিতা সব মিলিয়ে অসহায় ভাড়া বাসার বাসিন্দারা। নিম্নবিত্ত থেকে উচ্চ-মধ্যবিত্ত সবাই বাড়ি ভাড়ার এ পাগলা ঘোড়ার কাছে অসহায়। কোথাও যেন কোন জবাবদিহিতা নেই। ভাড়াটিয়াদের এই অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য বাড়ি ভাড়া সংক্রান্ত তথ্য সম্পর্কে সঠিকভাবে অবগত হওয়া দরকার। বেশিরভাগ ভাড়াটিয়া বাড়ি ভাড়া সংক্রান্ত আইন জানে না বলে তারা নিজেদের অধিকার থেকে বঞ্চিত ও বাড়িওয়ালা কর্তৃক প্রতারিত হয়ে থাকেন। ভাড়াটিয়াদের নিজেদের স্বার্থ ও অধিকার রক্ষায়, বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৯১-এর কিছু দরকারি অংশ জেনে রাখা প্রয়োজন- ‘বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৯১’-এর ১০ এবং ২৩ ধারা মোতাবেক বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রকের লিখিত আদেশ ছাড়া অন্য কোনভাবেই ভাড়াটিয়ার কাছ থেকে অগ্রিম বাবদ এক মাসের ভাড়ার অধিক কোন প্রকার ভাড়া, বা অন্য কোন টাকা গ্রহণ করতে পারবে না। প্রতি মাসে আপনার পরিশোধকৃত বাড়ি ভাড়ার রশিদটি বুঝে নিন, বাড়ির মালিক বা নিয়ন্ত্রক তা দিতে বাধ্য। আইনের ‘১৬ নম্বর’ ধারায় স্পষ্ট বলা হয়েছে ‘মানসম্মত’ ভাড়া নির্ধারণ হওয়ার তারিখ হতে দুই বছর পর্যন্ত তা বহাল থাকবে। তার পূর্বে ভাড়া বৃদ্ধি করা যাবে না। ভাড়া দিলেই শুধু নয়, সেই বাড়ির পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকেও বাড়িওয়ালার নজর দিতে হবে। স্বাস্থ্যসম্মতভাবে বসবাসের উপযোগী করে বাড়িটি প্রস্তুত রাখতে বাড়ির মালিকের ওপর ‘২১ ধারা’ মোতাবেক বাধ্যবাধকতা আরোপিত রয়েছে। বাড়ি ভাড়া বিষয়ে এই আইনগুলোর প্রণয়ন অনেক আগে হলেও, নেই সেই আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন। এই আইনগুলো বাস্তবায়িত করতে পারলে ভাড়া বাসায় বসবাসকারী মানুষগুলোকে আর অধিক ভাড়ার ভোগান্তি পোহাতে হতো না। এই আইনগুলো বাস্তবায়নে ভাড়াটিয়াদের যেমন সচেতন হতে হবে, বুঝে নিতে হবে নিজের অধিকার, পাশাপাশি সরকারের উচিত আইনের সঠিক বাস্তবায়নে জোর পদক্ষেপ নেয়া। তবে মুদ্রার একপিঠ দেখলেই চলবে না। একজন বাড়িওয়ালার যেমন বাড়ি ভাড়া দেয়ার পরেও বিভিন্ন দায়বদ্ধতা থাকে ঠিক তেমনি একজন ভাড়াটিয়ারও উচিত ভাড়া বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ করার দায়িত্ব সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখা। তার মধ্যে পড়ে- ক্স সঠিকভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। ক্স দরজা, জানালা বা দেয়ালের যেন ক্ষতি না হয় সেভাবে ব্যবহার করা। ক্স সঠিক সময় সবধরনের ইউটিলিটি বিল পরিশোধ করা। ক্স যে কোন মেরামত বা ইনস্টলেশনের কাজে হাত দেয়ার আগে মালিকের অনুমতি নেয়া। ক্স ছোটখাটো মেরামতের কাজ মালিকের উপর চাপিয়ে না দিয়ে নিজেও করে নেয়ার মানসিকতা। বাড়িওয়ালার যেমন ভাড়া দেয়ার পর মানসম্মত ভাড়া থেকে শুরু করে ভাড়াটিয়াদের সকল সুযোগ-সুবিধা দেখভালের দায়িত্ব রয়েছে, তেমনি ভাড়াটিয়াদেরও কিছু দায়িত্ব থাকে। দুইপক্ষই যদি নিজেদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে, তাহলে বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়াদের মধ্যে একে অপরকে অভিযোগ ছোড়ার পরিবর্তে, এক সুন্দর সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের সূচনা করবে যা সবার পক্ষেই সুবিধাজনক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে
×