ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আওয়ামী লীগের বিশেষ ওয়েবিনার

সঙ্কটকালে তরুণরাই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে

প্রকাশিত: ২৩:১৭, ৯ জুলাই ২০২০

সঙ্কটকালে তরুণরাই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যুগে যুগে সঙ্কটকালে সবসময় তরুণরাই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে বর্তমান প্রাণঘাতী করোনা সঙ্কটের শুরু থেকেও বাংলাদেশ তরুণরা এগিয়ে এসেছে পর্যুদস্ত মানুষের সেবায়। হাত বাড়িয়ে দিয়েছে যার যার অবস্থান থেকে। সরকারের তরুণ সাংসদ, দলের তরুণ নেতা এই সঙ্কট থেকে উত্তরণের সংগ্রামে কেউ পিছিয়ে নেই। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিশেষ ওয়েবিনার বিয়ন্ড দ্য প্যানডেমিকের দশম পর্বে এমন বক্তব্যই তুলে ধরেছেন তরুণরা। মঙ্গলবারে রাতে অনুষ্ঠিত এই পর্বের বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছিল ‘করোনাসঙ্কট মোকাবেলায় তরুণদের ভূমিকা’। বিশেষ এ ওয়েবিনার প্রচারিত হয় দলের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার শাহ আলী ফরহাদের সঞ্চালনায় এবারের পর্বে আলোচক হিসেবে যুক্ত হন বাংলাদেশ সরকারের পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম এমপি, বাগেরহাট-২ আসনের সাংসদ শেখ সারহান নাসের তন্ময় এমপি, চট্টগ্রামের নারী সাংসদ খাদিজাতুল আনোয়ার সনি এমপি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপ-দফতর সম্পাদক সায়েম খান, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের কোভিড বিশেষায়িত হাসপাতালের মেডিসিন ও ইনফেকশাস ডিজিজ বিশেষজ্ঞ ডাঃ ফরহাদ উদ্দিন হাছান চৌধুরী মারুফ, মিশন সেভ বাংলাদেশের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও সাধারণ সম্পাদক ইমরান কাদির এবং চ্যানেল ২৪-এর সাংবাদিক জিনিয়া কবির সূচনা। উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম বলেন, যুগে যুগে সঙ্কটকালে সবসময় তরুণরাই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে বর্তমান করোনা সঙ্কটকালে সহায় দুস্থ মানুষের পাশে সবার আগে গিয়ে দাঁড়িয়েছে আমাদের তরুণ সমাজ। আমার নির্বাচনী এলাকায় ডাক্তার যাবে বাড়ি এই স্লোগানকে সামনে রেখে যখনই কেউ অসুস্থ হয়েছে খবর পেলেই ডাক্তার তার বাড়িতে ছুটে যেতেন, প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা দিতেন। আমার এলাকা নদী ভাঙ্গন প্রবণ এলাকা, নদী ভাঙ্গনের শিকার সেই সব মানুষের পাশে আমি সবসময় দাঁড়িয়েছি। আমার এলাকায় অসহায়, দুস্থ মানুষকে করোনাকালীন সঙ্কটে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছি। আমরা হাওড় অঞ্চলসহ দেশের বন্যাকবলিত সমস্ত এলাকায় কৃষকদের ধান কেটে ঘরে তুলে দিতে পেরেছি। তিনি ৯৮ সালে বন্যা মোকাবেলায় তরুণদের ভূমিকা নিয়েও কথা বলেন। আরও বলেন, প্রাকৃতিকভাবে বাংলাদেশে বন্যাকবলিত দেশ। উত্তরাঞ্চলে বন্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে, ভাটি অঞ্চল দিয়ে পানি নেমে যেতে শুরু করেছে। করোনা সঙ্কটের সময়ে আমফানের হামলাও আমরা মোকাবেলা করেছি দৃঢ়ভাবে। প্রতিটি নদী ভাঙ্গন এলাকায় বাঁধ নির্মাণের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। নদী ড্রেসিং করে নাব্য সঙ্কট কমানোর চেষ্টাও অব্যাহত রয়েছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে নদী ভাঙ্গন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পারব বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। খাদিজাতুল আনোয়ার সনি এমপি বলেন, বাংলাদেশের জন্মলগ্নের আগ থেকেই তরুণরাই সকল সংগ্রাম আন্দোলন ও সঙ্কটকালে তরুণরাই সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছেন। দেশের ক্রান্তিলগ্নে তরুণরাই সবার আগে এগিয়ে এসেছে, মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। আমার এলাকা ফটিকছড়িতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার পর থেকেই তরুণদের সঙ্গে সমন্বয় করে ডোর টু ডোর গিয়ে জনসচেতনতা তৈরির চেষ্টা করেছি। আমাদের পূর্ণাঙ্গ চারটি আইসোলেশন সেন্টার চালু করেছি। আমাদের ২০ শয্যা বিশিষ্ট যে হাসপাতাল রয়েছে সেটিকে পূর্ণাঙ্গ কোভিড হাসপাতাল প্রস্তুত করার কাজ চলছে। শুরুতে জনসচেতনতা তৈরি করতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়েছি, মাস্ক দিয়েছি। দরিদ্র ও অসহায় মানুষের ঘরে ঘরে যুবক এবং তরুণ ভাইদের মাধ্যমে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছি। তরুণরাই বাংলাদেশের শক্তি ও ভবিষত। আওয়ামী লীগের উপ-দফতর সম্পাদক সায়েম খান বলেন, সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তারুণ্যের সংস্কৃতিকে ধারণ করে। যদি দেখা যায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে শুরু করে ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটি পর্যন্ত সব জায়গাতে তারুণ্যের অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। করোনা সঙ্কটকালীন সময়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সমস্ত নেতা কর্মী মৃত্যু ভয় অপেক্ষা করে অসহায় দুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। আমাদের দুর্যোগ মহামারী মোকাবেলার অভিজ্ঞতা ছিল বলেই দুর্যোগ শুরুর পর থেকে দল ও সহযোগী সংগঠনের প্রতিটি নেতা কর্মী মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। আওয়ামী লীগের পক্ষে দলীয় ও সহযোগী সংগঠনের নেতা কর্মীরা মিলে এ পর্যন্ত এক কোটি ২৫ লাখ পরিবারকে খাদ্য সহায়তাসহ অন্যান্য সহায়তা দিয়েছেন। সাংবাদিক জিনিয়া কবির সূচনা বলেন, গণমাধ্যম কর্মীদের কাজ হচ্ছে সঠিক তথ্য তুলে ধরা। আমাদের চ্যালেঞ্জ ছিল সঠিক তথ্য তুলে আনা। করোনা সঙ্কট মোকাবেলার ত্রুটি কিংবা হাসপাতালের সমন্বয়হীনতা তুলে ধরার পর স্বাস্থ্যসেবায় আরও সুদূরপ্রসারী ভাল ফল লক্ষ্য করা যায়। গণমাধ্যম কর্মীরা জীবন বাজি রেখে কাজ করছে এই মহামারীতে। চিকিৎসা নিয়ে স্বচ্ছতা হওয়া উচিত। এমনকি টেস্টের ক্ষেত্রে কিটের ব্যবহারে সঠিক দিকনির্দেশনা দেয়া উচিত। ডাঃ ফরহাদ উদ্দিন হাছান চৌধুরী মারুফ বলেন, করোনা আমাদের দেশের চ্যালেঞ্জ না সারা বিশ্বের চ্যালেঞ্জ এটা। আমরা অনেক রাজনৈতিকদের কথা শুনেছি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার যেভাবে এই মহামারী মোকাবেলা করেছে তার প্রশংসা করছি। তিনি বলেন, মহামারী রোধে মাস্ক পরিধান, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা উচিত। স্বাস্থ্য বিভাগ শুধু চিকিৎসকরা চালায় না। এটা অনেকের ওপর নির্ভরশীল। ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, করোনার এই মহাসঙ্কটে আপনারা জানেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রথম দিন থেকে কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের প্রত্যেকটা নেতা কর্মী কাজ করে যাচ্ছে। কিছুদিন আগে শিক্ষার্থীদের বাড়ি ভাড়া সংক্রান্ত বিষয়ে যে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল আমরা ছাত্রলীগের সেচ্ছাসেবক টিম গঠন করে আমরা বাড়ির মালিকদের বুঝিয়ে এই সমস্যার সমাধান করছি এবং করোনার শুরুতেই আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনার নির্দেশে অসহায় কৃষকদের ধান কেটে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছি। করোনায় আক্রান্ত হয়ে কোন ব্যক্তি মারা গেলে তখন কিন্তু ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা এক হয়ে তাদের কিন্তু জানাজা ও দাফন করছেন। আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ ও দেশরতœ শেখ হাসিনার ভ্যানগার্ড হয়ে কাজ করে যাচ্ছি। স্বাধীনতার পূর্ববর্তী সময় থেকে এখন পর্যন্ত দেশের প্রতিটি ক্রান্তিকালে কিন্তু বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কাজ করে যাচ্ছে। ছাত্রলীগ যে তারুণ্যনির্ভর সংগঠন তা কিন্তু এই করোনার সময়ে দেখিয়ে দিয়েছে। আপনারা জানেন, আমরা ‘হ্যালো ছাত্রলীগ’ এ্যাপসের মাধ্যমে সারাদেশে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় করে সম্পূর্ণ পরিচয় গোপন রেখে খাবার পৌঁছে দিয়েছি। নেত্রী আমাদের প্রশংসা করেছেন একাধিকবার, সুতরাং ছাত্রলীগের যেই গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস আছে তা ধারণ করে আমরা কাজ করতে পারব।
×