ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

করোনা মহামারীর মূল ধাক্কা আসবে এ মাসে বা পরের মাসে ॥ ডাঃ জাফরুল্লাহ

প্রকাশিত: ২৩:০৮, ২৬ জুন ২০২০

করোনা মহামারীর মূল ধাক্কা আসবে এ মাসে বা পরের মাসে ॥ ডাঃ জাফরুল্লাহ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নোভেল করোনাভাইরাসের মহামারী মোকাবেলায় সরকারের উদ্যোগ ও পরিকল্পনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সদ্য কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেছেন, সরকার একটা অন্ধকার ঘরে কালো বিড়াল খুঁজে বেড়াচ্ছে। করোনা সমস্যাটা কিভাবে সমাধান করবে, তা তাদের চিন্তার মধ্যে নেই। বৃহস্পতিবার ধানম-ির গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে এক আলোচনা সভায় জাফরুল্লাহ চৌধুরী এমন মন্তব্য করেন। তার ধারণা, বাংলাদেশে মহামারীর মূল ধাক্কা আসবে ‘এ মাসে বা পরের মাসে’, যখন এ ভাইরাস গ্রাম-গঞ্জে ছড়িয়ে পড়বে। সেই পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য তার ভাষায়, ‘একটি সুস্থ স্বাস্থ্য ব্যবস্থা’ দরকার। সুস্থ স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য জনগণকে দাবি ওঠানো ছাড়া, আওয়াজ ওঠানো ছাড়া, মান্নাদেরকে (নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না) ঘুরে দাঁড়ান ছাড়া বাংলাদেশের গরিবের স্বাস্থ্যক্ষেত্রে তো নয়ই, কোন ক্ষেত্রে কিছুই হবে না। সেজন্য শক্ত করে স্বাস্থ্য আন্দোলন গড়ে তোলার ওপর জোর দেন বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে যুক্ত এই নেতা। সুস্থ হয়ে ওঠার পর ‘ধন্যবাদ’ জানাতে বৃহস্পতিবার এ অনুষ্ঠানে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন ৭৯ বয়সী জাফরুল্লাহ চৌধুরী। কেবিন থেকে হুইল চেয়ারে করে এসে তিনি মঞ্চে ওঠেন। ভাঙ্গা কণ্ঠে বলেন, সবাইকে ধন্যবাদ। আমার গলায় ব্যাঙ ঢুকেছে, তাই কথা ঠিকমতো বলতে পারি না। সেজন্য বেশিরভাগ বিষয় লিখিতভাবে আমি বলব। আপনারা আমার জন্য এতজনে দোয়া করেছেন পথে-ঘাটে, দেশে-বিদেশে তা অকল্পনীয়। মানুষ যে একজন মানুষকে ভালবাসতে পারে আমরা জানি না। এই যুদ্ধের পরে দেখলাম। একাত্তরে যুদ্ধে পেয়েছিলাম ভালবাসা, এখনও আমার সেই ভালবাসা। বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যয় নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আপনারা সবাই জানেন, বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যয় কেমন। মানুষ ফতুর হয়ে যায়। আমি চেষ্টা করেছি আমার চিকিৎসায় কত টাকা খরচ হয়েছে কিছুটা হিসাব করতে। পুরোপুরি হিসাবটা এখনও করতে পারিনি সময় স্বল্পতার কারণে। কেন্দ্রের তরুণ চিকিৎসক শরীফুল হক রোমি পরে ডাঃ জাফরুল্লাহর পক্ষে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান। সেখানে বলা হয়, কোভিড-১৯ চিকিৎসায় গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের আইসিইউ ভাড়া হিসেবে প্রতিদিনে ১৭ হাজার টাকা করে ১০ দিনে এক লাখ ৭০ হাজার টাকা, কেবিন ভাড়া তিন হাজার আট শ’ টাকা করে ২০ দিনে ৭৬ হাজার টাকা লেগেছে। ৮২ হাজার ৯৪৪ লিটার অক্সিজেনের জন্য গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র আলাদাভাবে বিল রাখেনি। অন্য বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে হলে প্রতিদিন এক থেকে দেড় লাখ টাকা লেগে যেত। হাসপাতালে এরকম খরচে সাধারণ মানুষের কষ্টের কথা তুলে ধরে জাফরুল্লাহ বলেন, ওষুধের খরচ আজকে দুটা সিস্টেম আছে- একটা হলো ওষুধের দাম ঠিক করা- ইনডিকেটিভ প্রাইস, যেটা আমাদের সালমান সাহেব খালেদা জিয়াকে পটায়ে করছিলেন। সেটা এখনও বহাল আছে। সেই নিয়মটা বদলাইলে, ওষুধনীতি বদলাইলে ওষুধের দাম অর্ধেক হবে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় খোঁজ-খবর নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ রাজনীতিবিদসহ সবার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক মহিব উল্লাহ খোন্দকার বলেন, তাদের উদ্ভাবিত কিটের বিষয়ে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালের মূল্যায়ন কমিটি প্রতিবেদন দেয়ার পর নয় দিন হয়ে গেলেও ওষুধ প্রশাসন এখনও অনুমোদনের বিষয়ে কিছু জানায়নি। আগামী সাপ্তাহে ব্যবস্থা নেবেন বলে ওষুধ প্রশাসনের একজন সহকারী পরিচালক আমাদেরকে ফোন করে জানিয়েছেন। অন্যদের মধ্যে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি দিলারা চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, অধ্যাপক বিজন কুমার শীল, অধ্যাপক ফিরোজ আহমেদ, অধ্যাপক নিহাদ আদনান, জাফরুল্লাহ চৌধুরীর স্ত্রী শিরিন পারভিন হকসহ নগর হাসপাতালের চিকিৎসকরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
×