ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সিডনির মেলব্যাগ ॥ নীরব ঘাতক থেকে দূরে থাকুন

প্রকাশিত: ২১:৪৯, ২৩ জুন ২০২০

সিডনির মেলব্যাগ ॥ নীরব ঘাতক থেকে দূরে থাকুন

করোনা নিয়ে লিখতে না চাইলেও উপায় নেই। এ লেখা যখন লিখছি বাংলাদেশে আক্রান্তের সরকারী সংখ্যা লাখ ছাড়িয়েছে। এক লাখে পৌঁছাতে খুব বেশি সময় লাগেনি। দিনে দিনে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়া করোনা রোগীরা কি শুধু বিদেশ থেকে আসা মানুষদের অবদান? এখন যা দেখছি তার বেশির ভাগই নিজেদের তৈরি। এক শ্রেণীর মানুষ এখনও কথা শুনছেন না। রেড জোন বা যে জোন ঘোষণা করা হোক না কেন এসব মানুষ বেপরোয়া। তাদের এক কথা, তাদের নাকি কিছু হবে না। আর কি হতে বাকি আছে কে জানে? আমরা নিশ্চয়-ই বরিস জনসনের কথা ভুলিনি। ভুলিনি কানাডার ট্রুডোর কথাও। দুজনকেই আইসোলেশনে থাকতে হয়েছে। একজন ফিরে এসেছেন মৃত্যুর মুখ থেকে। দেশে দেশে এখন যারা নেতা বা সত্যিকার অর্থে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের ভাল থাকার বিকল্প নেই। আমাদের পাশের দেশগুলোতেও দেখছি নেতারা যথেষ্ট সাবধান। বাংলাদেশে বিরোধীরা মুখে যাই বলুক না কেন, তারা খুব ভাল জানে শেখ হাসিনার বিকল্প নেই। কখন কিভাবে কোন দোষে বা কি কি কারণে বাদবাকি বিরোধীরা পিছিয়ে পড়তে পড়তে প্রায় শূন্যে পরিণত হয়েছেন, তা তারা ভালভাবেই জানে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা তাঁর আপন প্রজ্ঞা আর বলিষ্ঠতায় উঠে এসেছেন। এই আগমন বা উঠে আসা যেন ফিনিক্স পাখি। তাঁকে কতবার যে মারার চেষ্টা হয়েছিল তা সবাই জানে। আমরা নিশ্চয়ই ভুলে যাইনি ঢাকার রাজপথে যুদ্ধে ব্যবহৃত গ্রেনেড হামলা হয়েছিল তাঁকে মেরে ফেলতে। এক সময় আমরা ধরে নিয়েছিলাম পিতার মতো তাঁকেও অচিরেই বিদায় করার কাজ সম্পন্ন। কিন্তু না, প্রতিবারই তিনি অলৌকিকভাবে বেঁচে গেছেন। আপনি অদৃষ্টবাদী হন আর না হন আপনাকে স্বীকার করতেই হবে তাঁকে সময় বাঁচিয়ে রেখেছে বাংলাদেশকে সমানে নিয়ে যাবার জন্য। এদেশের সাধারণ মানুষ শ্রমজীবী মানুষ, সংস্কৃতি পরায়ণ মানুষ, আর দুর্বলের ভরসা তিনি। এটা জানি এই লেখার এতটুকু পড়েই গালাগাল শুরু হয়ে যাবে। আমার ধর্মীয় পরিচয় আর নাম নিয়ে শুরু হবে মাতম। কিন্তু এটাও লিখব যে প্রধানমন্ত্রীর কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। এই সীমাবদ্ধতার একটি হলো তিনি রাজনীতি করেন উগ্র সন্ত্রাসী আর মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের বিরুদ্ধে। এক বাক্যে যারা দেশদ্রোহী হবার যোগ্য, তারাই তাঁর বিরোধী শিবিরে। এদের মোকাবেলা করতে গিয়ে তাঁকে স্বাভাবিকভাবেই বার বার স্বাধীনতার ইতিহাস ও তাঁর পিতাসহ অতীতে ফিরে যেতে হয়। এটাকে আপনারা বলেনÑ এক কথা বার বার বলা। একটা বিষয় কি স্বীকার করবেন, আপনারা কি করেন? আপনারা তো তাঁর চাইতেও এক কাঠি পেছনে গিয়ে পাকিস্তান আমলের স্বপ্নে বিভোর। আপনারা তো তার চেয়ে ভয়ঙ্কর কাজ করেন। যে দেশে থাকেন, যে দেশের আলো হাওয়ায় বড় হন তার বিরুদ্ধে বলেন। আপনাদের কাছে তাঁর দেয়া টাকা আর উন্নয়ন লোভনীয়, কিন্তু তাঁর আদর্শ আর তাঁর দল বর্জনীয়। এটা কেমন দ্বিচারিতা? আপনারা আমাদের তো বটেই তাঁকেও অমুক দেশের দালাল বলে অভিযোগ দিয়ে আসছেন জন্মকাল থেকে। আর তিনি কি করেন? আপনাদের চোখে শর্ষে ফুল দেখিয়ে আপনাদের জানের দোস্ত চীনের কাছ থেকে আধুনিক সাবমেরিন আদায় করে নেন। তখন আপনারা একবারও কি ভাবেন যে, এই সাবমেরিন প্রয়োজনে ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধেও কাজে লাগতে পারে? আপনাদের আর একটা মোকসদ হলো ছলে বলে কৌশলে তাঁকে সরিয়ে দেয়া। প্রধানমন্ত্রী নিজেই সেদিন করোনা নিয়ে বলতে গিয়ে বলেছিলেন, তাঁর নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত বাহিনীর লোকজন সবসময় এর চাইতেও বড় বিপদের মুখে আছে। আর কোন কোন দেশের প্রধানমন্ত্রীকে দেশের কিছু লোকজনের কাছে এমন অনিরাপদ থাকতে হয়? অকৃতজ্ঞ ইতিহাস আর অতীত ভুলে দালালিতে রাজি এক জাতির নেতৃত্ব দেয়া সহজ কিছু না। এমন কঠিন পরিস্থিতি যারা মোকাবেলা করেছিলেন তাদের ইতিহাস দেখলে জানবেন তারা কতটা বেপরোয়া আর একনায়ক ছিলেন। মাও সে তুং বা মাও দেজ দং হোক আর হো চি মিন বা ফিদেল ক্যাস্ট্রো- যেই হোক না কেন তারা মার্জনা করতেন না। সে দিক থেকে শেখ হাসিনা অনেক বেশি সহনশীল। এখন এই করোনাকালেও তিনি ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেন। এটাই আমাদের উদ্বেগের আর একটি কারণ। প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে কয়েকজন সহকর্মীসহ বিশ্বস্ত নেতা হারিয়েছেন। সংসদে যাওয়া থেকে মিটিং করা এখন ঝুঁকির। ডিজিটাল মিটিং ছাড়া অন্য কোনভাবে তিনি সামনে না আসুন, এটাই চাই। আমাদের দেশে প্রগতিশীলরা, ভাল মানুষেরা বহুকাল থেকেই সংখ্যালঘু হয়ে আছেন। এসব মানুষের ভরসা একজন-ই। আমাদের ইতিহাস অতীত বর্তমানসহ ভবিষ্যতের কা-ারি তিনি। শত সীমাবদ্ধতার পরও তাঁকেই সমানে নিয়ে এগুতে হবে জাতিকে। কারণ তাঁর পেছনে ঘাপটি মেরে আছে খুনী ডাকাত আর দস্যুর দল। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় দেখেছি, কথিত শিক্ষিত আর পাকপন্থী কিংবা সুবিধাবাদীরাই তাঁর সমালোচক। গরিব দরিদ্র আর মধ্যবিত্ত তাঁকে পছন্দ করে। প্রগতিবাদীদের আশ্রয় ও ভরসা তিনি। এই করোনাকালে আপনি বিপদমুক্ত থাকুন। চাকু ছুরি বুলেট বোমা গ্রেনেডের মতো করোনাভাইরাস আততায়ীও যেন আপনাকে স্পর্শ করতে না পারে। আপনিই আমাদের শেষ ভরসা, আপনাকে ছাড়া কোন সমস্যার সমাধান তো হবেই না, বরং দেশ ও জাতি ডুবে যাবে অন্ধকারে। আপনি ভাল এবং সুস্থ থাকুন প্রধানমন্ত্রী। [email protected]
×