স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ গাছ না কেটেও যশোর-চৌগাছা সড়কের প্রশস্ততা মাপমতন বাড়ানো গেছে। এমনকি সড়কটির পুনরায় নির্মাণ ও উন্নয়ন কাজও শেষ হতে চলেছে। দ্বিতীয় দফায় আরেকবার কাপের্টিং করা হলে কাজ পুরোপুরি শেষ হবে। বলতে গেলে দুই পাশের কয়েক হাজার গাছের সারি সড়কটি নির্মাণে কোনোরকম বিঘ্ন ঘটায়নি। তারপরও একদম অনর্থকই সড়কের দুই পাশের গাছ কাটার প্রক্রিয়া চলছে। এসব গাছ জেলা পরিষদের মালিকানাধীন। তাই প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এসব গাছ কেটে বিক্রির তৎপরতা চলছে। অথচ আমফানে যশোর এলাকায় জেলা পরিষদের প্রায় ৪ হাজার গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে বলা হচ্ছে, গাছের জন্য সড়ক প্রশস্ত করে পুনরায় নির্মাণ বাধাগ্রস্থ হয়নি। এমনকি যেটুকু কাজ বাকি রয়েছে সেটি সম্পন্ন করতেও গাছের জন্য কোনোরকম বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কা নেই। তবে জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ বলছে, অনেক গাছ একদম রাস্তার কোল ঘেঁষে রয়েছে। সড়ক বিভাগ থেকে এসব গাছ সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। তার ভিত্তিতেই গাছ কাটার প্রক্রিয়া চলছে। উচ্চপর্যায়ের অনুমোদন মিললেই গাছবিক্রির জন্য দরপত্র আহ্বান করা হবে। দেখা গেছে, আকারে ছোট রঙিন টিনের পাত পেরেকে গেঁথে গাছের গায়ে সাঁটানো হয়েছে। সেগুলোতে বসানো হয়েছে গাছের পৃথক ক্রমিক নম্বর। গাছগুলো বিক্রির জন্য। টিনের টুকরোয় এমনটিও লেখা হয়েছে।
জানা যায়, চৌগাছা সড়ক প্রশস্ত করে পুনরায় নির্মাণের জন্য দুই পাশের গাছ অপসারণে জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে সড়কটির মধ্যবর্তী স্থান থেকে ৬ দশমিক ৫ মিটারের মধ্যে কোনো গাছ থাকলে কেটে ফেলতে বলা হয়। সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) যশোর কার্যালয় ওই চিঠি দেয়। তবে অটুট রেখেই পরিকল্পনা মাফিক সড়কটি প্রশস্ততা ছয় ফুটের মতন বাড়ানো হয়েছে। নির্মাণও শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
জেলা পরিষদ সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সওজ’র চিঠি মোতাবেক সড়কের সেন্টার পয়েন্ট (কেন্দ্রস্থল) থেকে উভয় দিকের ৬ দশমিক পাঁচ মিটারের মধ্যে থাকা গাছ চিহ্নিত করা হয়। জরিপ চালিয়ে জেলা পরিষদের মালিকানাধীন গাছের সংখ্যাও নির্ধারণ করা হয়। সূত্র জানায়, সদরের চুড়ামনকাটি থেকে সলুয়া পর্যন্ত জেলা পরিষদ মালিকানাধীন গাছ রয়েছে। জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে, সলুয়া পর্যন্ত জেলা পরিষদের ১ হাজার ৩টি গাছ আছে।
তবে এসব গাছের মধ্যে বেশকিছু গছ বন বিভাগ তাদের বলে দাবি করলে মালিকানা নির্ধারণে উভয় পক্ষ মিলে ফের জরিপ চালানো হয়। যৌথ জরিপে ২৮৯টি গাছ বন বিভাগের বলে চিহ্নিত হয়। জানা গেছে, মালিকানা নির্ধারণের পর জেলা পরিষদের পরিমাপ ও মূল্যায়ন সমন্বয় কমিটির সভায় গাছগুলো কাটার বিষয়ে আলাপ আলোচনা হয়। এরপর জেলা পরিষদের সভায় দরপত্র আহ্বান করে গাছবিক্রির সিদ্ধান্ত হয়। এমনকি জেলা মাসিক উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায়ও গাছ কাটার সিদ্ধান্ত হয়। এরপর গাছ কাটার জন্য চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য খুলনা বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে আবেদন করে জেলা পরিষদ। কিন্তু এরপরপরই দেশে করোনার সংক্রমণ শুরু হয়। ফলে গাছ কাটার বাস্তবতা যাচাইয়ে খুলনা বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় থেকে পর্যবেক্ষণ দলের আসা বাধাগ্রস্ত হয়। যাদের তদন্ত-জরিপ রিপোর্টের ভিত্তিতে গাছ কাটার চূড়ান্ত অনুমোদন মিলতো। যোগাযোগ করা হলে সড়ক ও জনপথ যশোরের উপবিভাগ-১’র প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, গাছের জন্য সড়ক প্রশস্ত করে পুনরায় নির্মাণে তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। অবশিষ্ট কাজ শেষ করতেও কোনো সমস্যা হবে না বলে তিনি জানান। যশোর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এসএএম রফিকুন্নবী জানান, উচ্চপর্যায় থেকে চূড়ান্ত অনুমোদন মিললেই গাছ বিক্রির জন্য দরপত্র আহ্বান করা হবে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: