ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

গণপরিবহন

স্বাস্থ্যবিধি মানা না মানার চিত্র

প্রকাশিত: ২২:৫৬, ২ জুন ২০২০

স্বাস্থ্যবিধি মানা না মানার চিত্র

রাজন ভট্টাচার্য ॥ করোনার কারণে লকডাউনের ৬৭ দিন পর সোমবার থেকে সব ধরনের গণপরিবহন চলতে শুরু করেছে। সড়ক মহাসড়কে চলেছে বাস। প্রশ্ন হলো কোভিড-১৯ সর্বোচ্চ সংক্রমণের মধ্যে পরিবহনে কতটুকু স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়েছে। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, বাসে বাড়তি ভাড়ায় অর্ধেক আসনে যাত্রী পরিবহন করা হলেও স্বাস্থ্য সুরক্ষা মানা না মানার চিত্র দুটোই লক্ষ করা গেছে। লঞ্চ কর্তৃপক্ষ দ্বিতীয় দিনে বলছে, মানুষের চাপে স্বাস্থ্যবিধি মানানো মোটেই সম্ভব হচ্ছে না। পরিস্থিতি যাচ্ছে নিয়ন্ত্রণের বাইরে। আর রেলপথের চিত্র সন্তোষজনক। সীমিত পরিসরে আটজোড়া ট্রেন চলাচল করেছে দুই দিন। আজ থেকে এই বহরে যুক্ত হচ্ছে আরও নয়জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন। তবে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রী সুরক্ষা কতটুকু থাকবে সে প্রশ্ন রয়েই গেছে। অভ্যন্তরীণ আকাশপথেও স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে বিমান পরিচালনা করা হয়েছে। সব মিলিয়ে গণপরিবহনে স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি কিছুটা সন্তোষজনক হলেও বিশেষজ্ঞরা করোনা সংক্রমণ রোধে সরকারের পক্ষ থেকে আরও জোর মনিটরিং করার মত দিয়েছেন। অন্যাথায় উর্ধগতির মধ্যে সঙ্কটের মাত্রা আরও বাড়তে পারে। যদিও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে পরিস্থিতির অবণতি হলে সরকার আরও কঠোর হবে। এদিকে পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা বলছেন, যেসব বাস স্বাস্থ্যবিধি মানবে না সেগুলো চলাচলের অনুমতি পাবে না। এ ব্যাপারে কঠোর পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, কোটি কোটি মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল নিশ্চিত করা কতটুকু চ্যালেঞ্জ? একথা বলার অপেক্ষা রাখে না। সরেজমিন নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও মালিকরা সচেতন, পরিবহন শ্রমিকরা তেমন সচেতন নন। আবার মালিক পক্ষ সুরক্ষা সামগ্রী সরবরাহ না করায় তা যাত্রীদের দিতে পারেননি শ্রমিকরা। আবার যাত্রীদের যেমন ইচ্ছে চলার চিত্র দেখা গেছে। অনেকেই মাস্ক ছাড়াই বাসে উঠেছেন। বাস চলাচল শুরু হলেও যাত্রী চাপ খুব বেশি ছিল না। তাছাড়া নগরজুড়ে আবার সেই চিরচেনা যানজটের চিত্র দেখা গেছে। সবচেয়ে বেশি চলাচল করেছে অটোরিক্সা, প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল। মালিকরা বলছেন, সর্বোচ্চ ৪০ ভাগ বাস চলাচল করেছে প্রথম দিন। আস্তে আস্তে সব বাস রাস্তায় নামানোর কথাও জানিয়েছেন তারা। এ্যাপভিত্তিক পরিবহন সেবা বন্ধ থাকলেও মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকার ভাড়ায় চলতে দেখা গেছে। বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে ভাড়ার জন্য বাহন নিয়ে চালকদের অপেক্ষার চিত্রও ছিল লক্ষ্যণীয়। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় ২৬ মার্চ থেকে চলা সাধারণ ছুটির মেয়াদ না বাড়িয়ে ৩১ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে অফিস খোলা রাখার পাশাপাশি গণপরিবহন চালুর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এজন্য সরকারের পক্ষ থেকে ১৩ দফা নির্দেশনাও দেয়া হয়। দেশে সংক্রমণের মাত্রা যখন বাড়ছে তখন মহামারী ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা ও সমালোচনার মধ্যেই ‘মানুষের জীবন ও জীবিকা বাঁচাতে’ অর্থনৈতিক কর্মকা- শুরু করার বিকল্প নেই এমন যুক্তি তুলে ধরে সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামী ১৫ দিন গণপরিবহন চলাচল ও করোনায় সংক্রমণের মাত্রা বিবেচনায় নিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা জানিয়েছেন একাধিক মন্ত্রী। তবে মহামারীর মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতর গণপরিবহন চলতে সড়কপথে ১৩টি, নৌ-যান ও রেলে ১৪টি ও বিমানে ১০টি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনা দেয়। যদিও এসব নির্দেশনা কতটুকু বাস্তবায়ন হবে তাই এখন দেখার বিষয়। মালিক ও শ্রমিক নেতারাও এ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব হবে কিনা এ নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। তাছাড়া করোনার সর্বোচ্চ সংক্রমণের মধ্যে সবকিছু স্বাভাবিক করার ঘোষণা সঙ্কটের মাত্রা আরও বাড়াতে পারে শুরু থেকেই এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন চিকিৎসকরাও। বাসে স্বাস্থ্যবিধি মানা- না মানার চিত্র ॥ স্বাস্থ্যবিধি মামা-না মানার মধ্য দিয়ে দীর্ঘ দুই মাসের বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকার পর সোমবার থেকে শুরু হয়েছে বাসসহ সব ধরনের গণপরিবহন চলাচল। সরকারের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এসব পরিবহন পরিচালনার নির্দেশনা থাকলেও তার পুরোপুরি পালন করতে দেখা যায়নি। তবে এক্ষেত্রে বাসের আসন ফাঁকা রাখার যে নির্দেশনা ছিল সেটি পালন করতে দেখা গেছে। হেল্পাররা আগের মতোই ছিলেন গেটে দাঁড়িয়ে। যে কারণে গায়ে ঘেঁষে যাত্রীদের ওঠানামা করতে হয়েছে। যেখানে সেখানে থামানোর পুরনো চিত্রও ছিল সড়কজুড়ে। এছাড়া স্বাস্থ্যবিধি পালন দেখভাল করতে বিআরটিএ আটটি মোবাইল কোর্ট নগরীর বিভিন্ন এলাকায় দিনভর তদারকি করেছে। এছাড়া দূরপাল্লার বাসগুলোর চিত্র ছিল অনেকটাই সন্তোষজনক। সকালে নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। সকালে রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, জীনাণুনাশক টানেল হয়ে যাত্রীদের টার্মিনালে প্রবেশ করানো হচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে সাঁটানো হয়েছে সচেতনতামূলক ব্যানার ও পোস্টার। যাত্রীদের হাতে হাতে স্প্রে ও মুখে মাস্ক অনেকটাই নিশ্চিত করে এনা, শৌখিন, শাহজালাল, ড্রিমল্যান্ডসহ বিভিন্ন পরিবহন ছেড়ে যেতে দেখা গেছে। ছোট ছোট পরিবহন কোম্পানিগুলোকে তেমন একটা স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি। তবে প্রথমদিনে যাত্রী চাপ কম বলে জানিয়েছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, অর্ধেক যাত্রী নিয়ে অনেক গাড়ি ফাঁকা গেছে। মহাখালী, সায়েদাবাদ ও গাবতলী টার্মিনালের বিভিন্ন কাউন্টারের সামনে দেখা গেছে নিরাপদ দূরত্বে বৃত্ত আঁকা। যাত্রীরা যেন নিজেকে নিরাপদ রেখে টিকেট সংগ্রহ করতে পারেন, সেজন্যই এই আয়োজন। সায়েদাবাদ টার্মিনাল থেকে গণপরিবহনে ঢাকার বিভিন্ন এলাকার উদ্দেশে বাসে যাত্রীদের উঠতে দেখা গেছে। হেল্পাররা আগের মতো জোর করে টেনে টেনে যাত্রী তুলছেন। এ সময় কোন পরিবহনে জীবাণুনাশক ছিটাতে দেখা যায়নি। তবে পরিবহনগুলো বের হওয়ার আগেই জীবাণুমুক্ত করে রাখা হয়েছে বলে দাবি পরিবহন শ্রমিকদের। বলাকা সার্ভিসের চালক আরমান বলেন, গতকালই আমরা আমাদের সব বাস জীবাণুমুক্ত করেছি। এখনও হ্যান্ড স্যানিটাইজার পাইনি। তাই সেটা নিয়ে বের হতে পারিনি। তবে যাত্রীদের আমরা ধীরে বাসে উঠাচ্ছি এবং নামাচ্ছি। তিনি নিশ্চিত করেন পাশাপাশি দুটি সিটে কাউকে বসতে দেয়া হচ্ছে না। রজনীগন্ধা বাসের চালক জসিম উদ্দিন বলেন, ‘যাত্রী কম। আমরাও মানুষকে ডাকাডাকি করে পরিবহনে তুলছি না। মানুষকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে অনুরোধ করছি। বাসের ফাঁকা ফাঁকা স্থানে বসতে অনুরোধ করছি। যাদের মুখে মাস্ক নেই তাদের উঠতে দিচ্ছি না। স্যানিটাইজার দেয়া হচ্ছে না এমন বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এখনও মালিক থেকে সেটা বুঝে পাইনি। অপরদিকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা গেছে বেশ কয়েকটি গণপরিবহনে। খিলগাঁও এলাকায় মিডলাইন পরিবহনের চালকের সহযোগীর হাতে জীবাণুনাশক স্প্রে দেখা গেছে। যাত্রীরা বাসে ওঠার সময় সবার হাতে প্রয়োজন মতো হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেয়া হচ্ছে। বাসটির ভেতরেও যাত্রীদের আসন ফাঁকা রেখে বসতে দেখা গেছে। করোনাভাইরাস সঙ্কটের মধ্যেই অফিস খোলা ও গণপরিবহন সীমিত আকারে চলাচলের সরকারী সিদ্ধান্তের পর বাসের ভাড়া ৮০ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করেছিল সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। বিআরটিএ’র ওই সুপারিশকে গণবিরোধী উল্লেখ করে চলা সমালোচনার মধ্যেই রবিবার বিআরটিএ এ সুপারিশের মাত্র ২০ শতাংশ কমিয়ে গণপরিবহনের ভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। সোমবার বর্ধিত ভাড়ায় রাজধানীসহ সারাদেশে গণপরিবহন চলাচল শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে সরকারের এই সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে রিট দায়ের করেছেন সুপ্রীমকোর্টের এক আইনজীবী। সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব ও ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, আজকের সার্বিক পরিস্থিতি অনেক ভাল। যেসব নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সেগুলো পুরোপুরি পালনের চেষ্টা চলছে। দূরপাল্লার গাড়িগুলোও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালানো হচ্ছে। আমি এবং আমাদের মালিকরা সবস্থানেই তদারকি করছেন। তিনি আরও বলেন, মহাখালীসহ বিভিন্ন টার্মিনালে জীবাণুমুক্ত টানেল স্থাপন করা হয়েছে। যাত্রীদের মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আর যারা স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করবে তাদের গাড়ি রাস্তায় নামতে দেয়া হবে না। সোমবার সকালে শ্যামলী ও টেকনিক্যাল এলাকায় দেখা যায়, সাভার আশুলিয়া গাজীপুর মানিকগঞ্জ মিরপুর উত্তরা টঙ্গী আব্দুল্লাহপুর থেকে ছেড়ে আসা রাজধানীর বিভিন্ন রুটে চলাচল করছে বাস। মোহাম্মদপুর থেকে আব্দুল্লাহপুর রুটে চলাচলকারী ভূইয়া পরিবহনের একটি বাসের হেল্পার শরিফ বলেন, বাসে হ্যান্ড স্যানিটাইজার আছে, যাত্রীরা চাইলে তা দেয়া হচ্ছে। ট্রান্স সিলভার গাড়িতে দেখা যায়নি জীবাণুনাশক স্প্রে। আলিফ পরিবহনেও একই অবস্থা। তেমনি লাব্বাইক, তুরাগ, আট নম্বর, ভিক্টর, গাজীপুর পরিবহন, প্রভাতী, বনশ্রী, ছালছাবিল, এম এম লাভলী পরিবহনের অনেক গাড়িতে জীবাণুনাশক স্প্রে ও নতুন ভাড়ার তালিকা দেখা যায়নি। ক্ল্যাসিক পরিবহনের কিছু বাসে জীবাণুনাশক স্প্রে দেখা গেছে। অগ্রদূত বাসের হেল্পার সোহাগ জানান, বাসের ভেতরে যাত্রী নিয়ম মতো বসছে। সেখানে বসার পর স্প্রে করা হচ্ছে। কিন্তু যাত্রী ওঠানো ও নামানোর ক্ষেত্রে টেনে ধরেই যাত্রী ওঠানোর ব্যাপারে কোন সদুত্তর মেলেনি। মিরপুর আনসার ক্যাম্প থেকে মোহাম্মদপুর বছিলা রুটে চলাচলকারী প্রজাপতি পরিবহনের কয়েকটি বাসে দেখা যায় নিয়ম মেনে যাত্রী ওঠানো ও জীবাণুনাশক স্প্রে দিতে। রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় চলা ট্রাস্ট ট্রান্সপোর্টের বাসে জীবাণুনাশক স্প্রে করতে দেখা গেছে। মিজানুর রহমান নামে ভূইয়া পরিবহনের এক যাত্রী জানান, অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর একটি বাস পেলাম। নিয়ম মানার বিষয়টি মাথায় কাজ করলেও তাড়া থাকায় ও বাস ছুটে চলায় আর ত্বর সইছিল না। উঠতে হয় বাধ্য হয়ে। সরেজমিন পরিস্থিতি দেখতে মহাখালী বাস টার্মিনালে হাজির হয়েছিলেন সড়ক সচিব নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমি দেখছি দূরপাল্লার বাসগুলো নিয়ম মেনে যাত্রা করছে। অর্ধেক আসনে যাত্রী দেখেছি। তাছাড়া স্বাস্থ্যবিধি মানার চিত্র সন্তোষজক। আমরা আহ্বান জানাব মালিক-শ্রমিকরা আরও সচেতন হবেন। তাহলে আরও বেশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা সম্ভব হবে। এদিকে বিআরটিএ মোবাইল কোর্টগুলো স্বাস্থ্যবিধি না মানায় বিভিন্ন পরিবহনকে জরিমানা করলেও প্রথমদিন সচেতনতামূলক কার্যক্রম বেশি ছিল। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা চালকদের সচেতন করতে দেখা গেছে। পুলিশের মাইকিং ॥ চলমান করোনা পরিস্থিতিতে সরকারের নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে গণপরিবহন চলাচল ও মার্কেট খোলা হয়েছে কিনা, তা দেখার জন্য সরোজমিনে কাজ করছে পুলিশ। পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচলের দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সোমবার বংশাল থানার (ওসি) শাহিন ফকির নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল বিষয়গুলো মনিটরিং করেছে। এ সময় তারা ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন মার্কেটে গিয়ে করোনা সুরক্ষিত থাকতে সরকারের দিকনির্দেশনা জানিয়ে দেন। তিনি জানান, মার্কেট এবং বাসস্ট্যান্ডে শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করার জন্য নবাবপুর মার্কেটসহ বিভিন্ন মার্কেটের মালিক সমিতির প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে দোকানদারদের ব্রিফিং দেয়া হয়। ফুলবাড়ীয়া বাসস্ট্যান্ডে গাড়ির ড্রাইভার ও হেল্পারদের মাস্ক ব্যবহার এবং যাত্রীদের হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়। যাত্রীরা যাতে সিটে বসার সময় প্রত্যেকে দূরত্ব বজায় রেখে যাতায়াত করেন এবং মাস্ক ব্যবহার করেন সেই বিষয়ে প্রতিটি বাসে হ্যান্ড মাইকের মাধ্যমে জানানো হয়। এনিয়ে সরকারী নির্দেশসমূহ ব্যানার বানিয়ে গাড়িতে ও বাসস্ট্যান্ডে টানিয়ে দেয়া হয়। একি হাল সদরঘাটে ॥ সদরঘাট লঞ্চ চলাচলের দ্বিতীয় দিনে টার্মিনালে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। সকাল থেকে ৭৫টি লঞ্চ ছেড়ে গেছে ও ভিড়েছে জানিয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে ১০ নম্বর পল্টুনে উপচেপড়া ভিড় হওয়ায় সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব হচ্ছে না। এখান থেকে হাতিয়া ও বেতুয়ার উদ্দেশে লঞ্চ ছাড়ে। দুপুরে সদরঘাটে গিয়ে দেখা যায় বিকেলের লঞ্চ ধরতে মানুষ দলে দলে টার্মিনালের দিকে হেঁটে চলেছে। তাদের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব দূরে থাক করোনা আক্রান্ত হওয়া থেকে নিজেদের রক্ষা করতে কোন বিধিই মানা হচ্ছে না। বেশিরভাগেরই মাস্ক থাকলেও সেটি সঠিকভাবে ব্যবহার করতে দেখা যায়নি। প্রয়োজনের তুলনায় লঞ্চ কম হওয়ায় ভিড় বেশি বলেও বলছেন তারা। এদিকে ১০ নম্বর পল্টুনে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার সুযোগ নেই উল্লেখ করে ঢাকা নদীবন্দর সদরঘাটের যুগ্মপরিচালক আরিফ উদ্দিন বলেন, শুধু ১০ নম্বর পল্টুনে যাত্রীদের ভিড় আছে। এখান থেকে হাতিয়া বেতুয়ার লঞ্চ ছাড়ে। আজ এই দুটো লঞ্চ ৫টা ও সাড়ে ৫টায় ছাড়ার কথা। যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়। বাকি পল্টুনগুলোয় স্বাভাবিকের চেয়েও কম যাত্রী আছে। এই লাইনে যে কয়টি লঞ্চ ছাড়ার কথা তার মধ্যে মাত্র একটি যাবে। ফলে উপচেপড়া ভিড় ঠেকানো যাচ্ছে না। স্বাস্থ্যবিধি মানা আমাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। বাকি ঘাটগুলোয় কোন সমস্যা নেই। ভোর ৭টা থেকে এ পযন্ত ৪৮টি লঞ্চ এসেছে। ছেড়ে গেছে ২৭টি। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ কিংবা যাত্রীদের মধ্যে দূরত্ব রক্ষার কোন চেষ্টাই কাজে আসছে না চাঁদপুর লঞ্চঘাটে। লঞ্চ চলাচল শুরুর পর দ্বিতীয় দিন সোমবার সকালের ভাগে কর্তৃপক্ষ সব নিয়ম মেনে লঞ্চ ছাড়ার চেষ্টা করলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীর চাপ বাড়তে থাকায় কোন নিয়মই আর কার্যকর থাকেনি। ঘাটে দায়িত্বরত বিআইডব্লিউটিএর বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা আবুল বাশার মজুমদার বলেন, যাত্রীদের নিয়ন্ত্রণ করতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। ট্রেনে স্বাস্থ্যবিধি সন্তোষজনক ॥ শুরু থেকেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার দিক থেকে এগিয়ে রেলপথের যাত্রীরা। দ্বিতীয় দিনেও চলেছে আটজোড়া ট্রেন। আজ থেকে যুক্ত হবে আরও নয়জোড়া ট্রেন। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুরোদমে ট্রেন সার্ভিস চালু হলে মানুষের সমাগম বাড়বে। তখন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা হবে কষ্টকর। এখন সীমিত পর্যায়ে বিশেষ বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করায় তা অনেকটা সুরক্ষিত। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ভোর ছয়টায় রওনা দিয়ে বনলতা এক্সপ্রেস কমলাপুর রেল স্টেশনে আসে ১১টার পর। বেশিরভাগ যাত্রীকে মাস্ক পরতে দেখা গেছে। তাছাড়া রেল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকেও স্যানিটাইজার দেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে ট্রেনে নামা ওঠার হুড়োহুড়ি দেখা গেছে। করোনায় সংক্রমণের কথা বিবেচনায় নিয়ে ৩১ মে থেকে ৫০ ভাগ যাত্রী নিয়ে অনলাইনে টিকেট বিক্রির মাধ্যমে ট্রেনযাত্রা শুরু হয়েছে। কমলাপুরে প্রতিটি যাত্রীকে থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে গায়ের তাপমাত্রা মেপে প্ল্যাটফরমে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়।
×