ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নিরাপদ খাদ্য সম্মেলনে আহ্বান

খাদ্যকে উন্নত দেশে রফতানিযোগ্য মানে উন্নীত করতে হবে

প্রকাশিত: ১১:৩০, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০

খাদ্যকে উন্নত দেশে রফতানিযোগ্য মানে উন্নীত করতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নিরাপদ খাদ্য সবার অধিকার। এই অধিকার নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় অর্থায়নসহ ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠা, জনবল বৃদ্ধি ও তাদের কাক্সিক্ষত প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করার ব্যাপারে জোর দিয়েছেন বক্তারা। সেই সঙ্গে সুস্থ জাতি গঠনে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণ, বৈজ্ঞানিক উপায়ে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, আইনী সহায়তাসহ সচেতনতা বৃদ্ধির কথা বলেছেন বক্তারা। বাংলাদেশের খাদ্যকে এমন মানে নিয়ে যেতে হবে যাতে উন্নত দেশে রফতানির ক্ষেত্রে কোন বাধা না থাকে সেই আহ্বান জানান সম্মেলনে। বাংলাদেশ সোসাইটি ফর সেইফ ফুডের তৃতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলন নিরাপদ খাদ্য নিয়ে এসব কথা বলেন দেশ বিদেশের বিভিন্ন বিশিষ্টজনরা। শনিবার রাজধানীর খামারবাড়িতে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের অডিটরিয়ামে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সোসাইটির সভাপতি ড. মোঃ রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইউনিভার্সিটি পুত্রা মালয়েশিয়ার ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. দাতিন পাডুকা সেটিয়া দাতো। এছাড়াও বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের ইন্টারডিসিপ্লিনারি ইনস্টিটিউট অফ ফুড সিকিউরিটি বিভাগের পরিচালক প্রফেসর ড. আবুসালেহ মাহফুজুল বারি। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ সোসাইটি ফর সেইফ ফুডের মহাসচিব কেএইচএম নাজমুল হোসাইন নাজির। সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘সেইফ এ্যান্ড হেলদি ডায়েট ফর এ জিরো হাঙ্গার ওয়ার্ল্ড’। দিনব্যাপী সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানী, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসহ দেশ-বিদেশের ২৫০ জন সদস্য অংশগ্রহণ করেন। আর ৬৩টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে নিরাপদ খাদ্যের বিভিন্ন বিষয়ে তুলে ধরেন খুলনা বিশ^বিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. খন্দকার মোয়াজ্জেম হোসেইন ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মোঃ আলিমুল ইসলাম। ড. রফিকুল ইসলাম বলেন, নিরাপদ খাদ্য নিয়ে গবেষকদের আগ্রহ বাড়ছে। গত বছর এ বিষয়ে ৪০টি পেপার উপস্থাপন হলেও এবার ৬৩টি। সম্মেলনের উদ্দেশ্যে নিয়ে বলেন, আমাদের দেশে বিদেশে যেখানে নিরাপদ খাদ্য নিয়ে যে গবেষণা হচ্ছে তা সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া এর অন্যতম একটি উদ্দেশ্যে। এছাড়াও এই সম্মেলনের মাধ্যমে সচেতনতা তৈরিতে ভূমিকা রাখে। বিভিন্ন লিঙ্কেজ তৈরিতেও সম্মেলন ভূমিকা রাখে জানান তিনি। ড. রফিকুল ইসলাম আরও বলেন, আমাদের মধ্যে নিরাপদ খাদ্য নিয়ে কিছু ভুল ধারণাও রয়েছে। উদাহারণ দিয়ে বলেন আমাদের দেশে আমে ফরমালিন দেয়া হয় অথচ বৈজ্ঞানিতভাবে এটি সম্ভবই নয়। আমে কোন ফরমালিন দেয়া সম্ভব হয় এটি ভুল ধারণা। আমাদের দেশের অনেক মানুষ এসব ভুল ধারণা পোষণ করে। এসব সম্মেলনের মাধ্যমে সেসব ধারণা দূর করতেও ভূমিকা থাকে। ইউনিভার্সিটি পুত্রা মালয়েশিয়ার ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. দাতিন পাডুকা সেটিয়া দাতো মূল প্রবন্ধে নিরাপদ খাদ্য কিভাবে ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে সে বিষয়ে আলোকপাত করেন। এছাড়াও খাদ্যে ভেজাল কিভাবে দূর করতে হবে, বিভিন্ন সংস্থার ভূমিকা নিয়েও কথা বলেন। তিনি বিশেষ গুরুত্ব দেন মুরগির রানীক্ষেত রোগের প্রতি। এটি কিভাবে দূর করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা করতে দিয়ে টিকা দেয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন উদ্ভাবনী বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কৃষিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হবে, ফোকাস করতে হবে। খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে এবং পুষ্টির উন্নয়নের মাধ্যমেই টেকসই কৃষি গড়ে উঠবে। সম্মেলনে অংশ নেয়া বক্তারা বলেন, নিরাপদ খাদ্য সবার অধিকার। এই অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের পাশাপাশি সচেতন জনগণসহ সংশ্লিষ্ট পেশাজীবী সংগঠন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহের। সম্মেলনে নিরাপদ খাদ্য প্রাপ্তির নানাদিক ও বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ তুলে ধরা হয়। বিশেষ করে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণে প্রয়োজনীয় অর্থায়নসহ ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠা, জনবল বৃদ্ধি ও তাদের কাক্সিক্ষত প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করার ব্যাপারে জোর দেন বক্তারা। সম্মেলনে বক্তারা বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীরা নিঃসন্দেহে নানাভাবে খাদ্যে ভেজাল দেয়। পাশাপাশি নানা ক্ষতিকর কেমিক্যাল ব্যবহার ফলে আমাদের মাটি, পানি ও বাতাস দূষিত হয়ে খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। খাদ্য ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত জনশক্তি ও মন্ত্রণালয়সমূহের মধ্যে সমন্বয়হীনতা নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনায় অনেক বড় একটি চ্যালেঞ্জ। সম্মেলনের ঘোষণায় বলা হয়, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে হলে সরকারকে সর্বক্ষেত্রে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, নিরাপদ খাদ্য গবেষণা জোরদার, প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই নিরাপদ খাদ্য বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ, খাদ্য মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার, নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে কমিউনিটি এন্টারপ্রাইজ গড়ে তোলা, নিরাপদ খাদ্য বৃদ্ধির জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে এগিয়ে আসা নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশের খাদ্যকে এমন মানে নিয়ে যেতে হবে যাতে উন্নত দেশে রফতানির ক্ষেত্রে কোন বাধা না থাকে। বক্তারা বলেন, ফসল কাটা থেকে খাদ্য গ্রহণ করার যে কোন স্তরে রাসায়নিক দ্রব্যাদি এবং জীবাণু দ্বারা বিষাক্ত বা দূষিত হতে পারে। সাধারণত নিরাপদ খাদ্যের ঝুঁকি দুধরনের এক জীবাণু সংক্রান্ত দূষণ, খ. রাসায়নিক দ্রব্যাদি দ্বারা দূষণ। বিভিন্ন আলোচনায় বক্তারা উল্লেখ করেন, নিরাপদ খাদ্য ক্রমবর্ধমানভাবে জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। বিশ্বব্যাপী সব সরকারই নিজ নিজ ক্ষেত্রে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার জন্য বহুবিধ প্রচেষ্টার গতি তীব্র করছে। উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে দূষিত খাদ্যজনিত রোগ বর্তমানে জনস্বাস্থ্যের ক্রমবর্ধমান সমস্যা হিসাবে চিহ্নিত। এসডিজি অর্জনে অবশ্যই নিরাপদ খাদ্যে জোর দিতে হবে। দিনব্যাপী সম্মেলনে অংশগ্রহাণকারীদের বিভিন্ন পুরস্কার ও সনদও দেয়া হয়। জানা গেছে নিরাপদ খাদ্য নিয়ে প্রথম দুটি সম্মেলন জাতীয় প্রেসক্লাব ও শেরে বাংলা কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়।
×