ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার চাইলেও সব সময় সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হয় না

প্রকাশিত: ১১:১৮, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৯

সরকার চাইলেও সব সময় সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হয় না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, সরকার, নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও পুলিশ প্রশাসন চাইলেও সব সময় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হয় না। আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের রাষ্ট্র্রের ক্ষেত্রে এটাই বাস্তবতা। এমন সমস্যা প্রার্থীদের ট্যাকেল দিতে হয়। বৃৃহস্পতিবার রাজধানীর বনানীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে ডিএসসিসির মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিতরণের সময় তিনি এ মন্তব্য করেন। সাবেক মন্ত্রী জিএম কাদের বলেন, আমি বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে যতটুকু জানতে পেরেছি, এবারের নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। আমাদের প্রার্থীদের সম্ভাবনা বেশি দেখছি। প্রার্থী ভাল হোক মন্দ হোক, তাদের পক্ষে কাজ করতে হবে। যারা তা করবেন না, ভবিষ্যতে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কাল-পরশুর মধ্যে দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হবে জানিয়ে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, কেউ মনোনয়ন না পেয়ে ভোট করলে, তার বিরুদ্ধে দলীয় শৃৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ সময় দলের মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, আমি ভিন্নভাবে বলি, যে কারণে কেউ খুশি হন, কেউ বেজার হন। আমার কথা হচ্ছে, যদি ভোট কেন্দ্র পাহারা দিতে পারেন, নিজের সম্মান রক্ষা করতে পারেন, তাহলে মনোনয়ন নেন। কেন্দ্র পাহারা দিতে না পারলে মনোনয়নপত্র কেনার দরকার নেই। ভোট চুরি হলে, দাঁড়িয়ে থেকে চুরি ঠেকাতে বলেন। তা না হলে চেয়ারম্যান কি করবেন, আমি মহাসচিব কি করব? বাপের বেটা হলে, যদি সাহস থাকে, তাহলে ভোটে আসেন। না হলে মাঠে নামার দরকার নেই। মহাসচিব আরও বলেন, আমরা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে মেয়র প্রার্থী ঠিক করব। তারা যদি আলোচনা না করেন, তাহলে আমরা আমাদের মতো ভোট করব। তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে সরকারের ভাবমূর্তি উদ্ধার হবে। নির্বাচন কমিশনের ইমেজ বাড়বে, অতীতের গ্লানি মুছে যাবে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আরেকটি বিষয় হবে, এতে আপনারা বুঝতে পারবেন, কোথায় আপনার কোন প্রার্থী দুর্বল রয়েছে। সেভাবে ব্যবস্থা নিতে পারবেন, যোগ করেন রাঙ্গা। প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, একটি কথা বলব, গত নির্বাচনের আগে সমঝোতার চেষ্টা করেছিলাম, ওরা প্রস্তাব দিল, পাঁচটি কাউন্সিলর দেবে। আমি সেই প্রস্তাব নিয়ে পার্টির চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করতে গেলে তৎকালীন মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বাধা দেন। বাবলু ভাই তখন বলেছিলেন, আমরা এককভাবে ভোট করলে ১০-১৫টি ওয়ার্ডে জিতে যাব। আমি নির্বাচনে যাইনি। আমাদের একজনও পাস করতে পারল না। তিনি বলেন, এখন প্রশ্ন উঠছে সুষ্ঠু নির্বাচনের। এ জন্য মাঠে থাকতে হবে, জনগণ সঙ্গে থাকলে শেষ পর্যন্ত কোন ষড়যন্ত্র বাধা হতে পারবে না। এবার দক্ষিণে মেয়র হিসেবে সাবেক ভিপি আলমগীর সিকদার লোটনকে দেন, তাহলে ভাল কিছু আশা করা যায়। গতবার মিলনকে দিয়েছিলাম, বারবার তাকে দিয়ে পরীক্ষা করার কোন মানে হয় না। কাউন্সিলর পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী শেখ মাসুক রহমান মাসুম বলেন, যদি মহাজোট হয়, তাহলে পরিষ্কারভাবে জানতে চাই। আর যদি জোট না হয়, তাহলে সুষ্ঠু ভোটের গ্যারান্টি দিতে হবে। এমপিরা জোট করে নির্বাচন করবেন, আর কাউন্সিলররা সেই সুযোগ পাবেন না, এটা হতে পারে না। প্রেসিডিয়াম সদস্য ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জাতীয় পার্টির সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার সভাপতিত্বে এ সময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন মীর আব্দুস সবুর আসুদ, হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, এ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, আলমগীর সিকদার লোটন, ভাইস চেয়ারম্যান জহিরুল আলম রুবেল প্রমুখ। ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত দলীয় মনোনয়ন ফরম উত্তোলন ও জমাদান চলবে। জাপা মেয়র ও কাউন্সিলর পদে একক প্রার্থী দিতে চায়। একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী পাওয়া গেলে সমঝোতার ভিত্তিতে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে বলে জানান নেতারা। এক পর্যায়ে রাঙ্গা সরকারের উদ্দেশে বলেন, তারা আমাদের কথা দিয়েছেন সুষ্ঠু নির্বাচন করার। যদি কোন প্রকার কারচুপি নির্বাচনে হয় তাহলে আমরা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেব। তারপর দেখি কিভাবে সরকার দেশ চালায়। যদি তারা ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে করতে পারে তাহলে তাদের অতীতের দুর্নাম দূর হবে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য হাজী সাইফুদ্দিন মিলন ও আলমগীর সিকদার লোটন। এছাড়া বিভিন্ন ওয়ার্ডে অর্ধশতাধিক কাউন্সিলর প্রার্থী দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
×