ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আল শাহরিয়ার ওসমান

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ॥ প্রকৃতির টানে রসায়নবিদরা

প্রকাশিত: ১২:২৮, ১৮ আগস্ট ২০১৯

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ॥ প্রকৃতির টানে রসায়নবিদরা

ট্রুর মানেই আনন্দ উল্লাস হৈহুল্লোড় আর বাধাহীন এক আত্মপ্রকাশ। ইউনিভর্সিটি লাইফে প্রত্যেক ট্রুরই অনেক বেশি বাঁধভাঙ্গা উল্লাসের হয় এবং তৈরি হয় প্রত্যেকের মাঝে এক একটি আয়নিক বন্ধন। প্রত্যেকবারের মতো এবারও নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রুরে যায়। এবার যায় এ বিভাগের নবম ব্যাচ। এ বিভাগে পড়ার অন্যতম সুবিধা হচ্ছে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রুর, প্রত্যেক ব্যাচেরই এ সুযোগটি রয়েছে। ইন্ডাস্ট্রি ভিজিট মানে শুধু ইন্ডাস্ট্র্রি ভিজিট নয়, পাশাপাশি প্রত্যেক ট্রুরে ঘুরতে যাওয়া হয় বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে। গত ২৯ জুলাই আনুমানিক রাত ১০টার দিকে আমরা রওনা দেই প্রাকৃতিক নৈসর্গ সিলেটের উদ্দেশে লক্ষ্য আমাদের ছাতক সিমেন্ট ইন্ডাস্ট্র্রি ভিজিট করা, এছাড়াও রয়েছে রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট, বিচানাকান্দি ও শ্রীমঙ্গলের মতো দেশের বিখ্যাত কিছু দর্শনীয় স্থান ঘুরতে যাওয়া। সিলেটের রাস্তা বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর রাস্তাগুলোর মধ্যে একটি, বিশেষ করে ব্রাহ্মণ বাড়িয়ার পথ দিয়ে যখন যাচ্ছিলাম রাস্তার দুই ধারে হাউরের পানি ছিল দেখার মতো। বাসের জানালাটা তখন খুলে দিয়েছিলাম বাতাসের কলতানে প্রতিটা মুহূর্ত ছিল উপভোগ করার মতো। দীর্ঘ ২৭৪ কি.মি. পথ পাড়ি দিয়ে সকাল নয়টার দিকে আমরা পৌঁছে যাই বাংলাদেশের লন্ডন খ্যাত সিলেটের মাটিতে। আমাদের হোটেল ছিল সিলেট পুলিশ লাইনের পাশে। বাস থেকে নেমে হোটেলে ফ্রেশ হয়ে সকালে নাস্তা করে আমরা আবার রওনা দেই ছাতক সিমেন্ট ইন্ডাস্ট্র্রির উদ্দেশে। সিলেট থেকে ছাতক এর দুরত্ব প্রায় ২৫ কি. মি.। ইন্ডাস্ট্র্রিতে পৌঁছাতে হলে মাঝে সুরমা নদী পার হতে হয়। সুরমা নদীতে গিয়ে এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা হয়, পাহাড়ী ঢলে নদীর ¯্রােত ছিল দেখার মতো নৌকায় উঠে প্রতিটা মুহূর্ত কিছুটা ভয়ে ছিলাম, ওখানকার কয়েকজন লোকের কাছে জানতে পারলাম এই ¯্রােতের কারণে এখানে নাকি কয়েকবার দুর্ঘটনাও ঘটেছিল। এরপর নদী পার হয়ে ইন্ডাস্ট্র্রি ভিজিট শেষে নদীর এপাড়ে আবার ফিরে আসলাম। এপাড়েই আমাদের দুপুরের খাবারটা সেরেছিলাম, পরবর্তীতে হোটেলে ফিরে আসতে আসতে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল। ওই দিন আর কোথাও ঘুরতে যাওয়ার সময় হয় নাই, তাই হোটেলেই ফিরে আসতে হয়েছিল আমাদের। পরদিন সকালে আমরা আবার রওনা দেই রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্টের উদ্দেশে, প্রায় ১৯ কি.মি. পথ পাড়ি দিয়ে আমরা পৌঁছে যাই রাতারগুলে। ৫০৪ একরের বনটি বাংলার আমাজন নামে খ্যাত, অসম্ভব ন্যাচারাল বিউটি দিয়ে আবৃত এই বনটি। আমরা ৫০০০ টাকা দিয়ে নয়টা নৌকা ভাড়া নিয়ে পুরো বনটি ঘুরে বেড়াই। ১০ ফিট পানির উপর এক একটি নৌকা যেন ছুটে চলে তার আপন গতিতে। ঠিক ওই মুহূর্তে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়ে, বৃষ্টি আর পানির আপন নৃত্যও ছিল উপভোগময়। এরপর ঘাটে ফিরে এসে একটুখানি বিশ্রাম নিয়ে আবার রওনা দেই বিছানাকান্দির উদ্দেশে। প্রায় ৩৭ কি.মি. পথ পাড়ি দিয়ে আমরা পৌঁছে যাই বিছানাকান্দিতে, রাস্তা অনেকটা খারাপ থাকায় আমাদের পৌঁছাতে একটু সময় লেগে যায়। এখানে আসতে আবার এক ঘণ্টা ট্রলারের পথ ও পাড়ি দিতে হয়। বিছানাকান্দি ভারতের মেঘালয় পর্বতের তীরে ভারত বাংলাদেশ বর্ডারে অবস্থিত। অসম্ভব সুন্দর এ জায়গাটি, ছোট-বড় পাথরে আবৃত জায়গাটি যেন রোদের আলোতে চিকচিক করছে। পাশে বিশাল আকার পাহাড়কে দেখে যে কারোরই চোখ জুড়িয়ে যাবে। বিছানাকান্দি ঘুরে এসে আমরা আবার ফিরে আসি হোটেলে। রাতের খাবার খাই সিলেটের বিখ্যাত হোটেল পাঁচভাইতে। পরদিন আবার রওনা দেই মাদবকু- এবং শ্রীমঙ্গলের উদ্দেশে, ওইদিন আমরা হোটেলের চেক আউট ও করে ফেলি। সকাল ১১টায় চেক আউট করে আমরা রওনা দেই মাদবকু-ে। প্রায় ৬৫ কি.মি. পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছে যাই মাদবকু-ে। মাদবকু- নাকি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ঝর্ণা। আমাদের অবস্থানের সময় ছিল মাত্র ২০ মিনিট, তাই খুব বেশি উপভোগ করতে পারিনি এই সৌন্দর্য, মাদবকু- পরিদর্শন শেষে আমরা রওনা দেই শ্রীমঙ্গলের উদ্দেশে। শ্রীমঙ্গলে পৌঁছাতে তখন প্রায় রাত ৮টা, রাত হয়ে যাওয়ার কারণে চা বাগানটা দেখতে পারিনি। যদিও চা বাগান দেখতে পারিনি কিন্তু আট লেয়ারের চা খেতে কেউ ভুলিনি, এ চাটি ছিল খুব কৌতূহলের ব্যাপার, কিভাবে এই আট লেয়ার তৈরি হলো। খুব বেশি মজাদার না হলেও চাটি ছিল দেখার মতো। সবকিছু শেষে এরপর শুরু হলো আমাদের ফিরে আসার পালা। রাতের খাবারটা আমরা শ্রীমঙ্গলে সেরে ১২টার দিকে আবার রওনা দেই নোয়াখালীর উদ্দেশে পুরো তিনটি দিন ছিল স্মৃতিতে আঁকড়ে থাকার মতো। ভালবাসার কোন কমতি ছিল না, সবাই ছিলাম ভালবাসার এক অপার বন্ধনে। উল্লেখ্য, এই ট্রুরটি ছিল আমাদের বিশ^বিদ্যালয় জীবনের শেষ ট্রুর।
×