ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সুমন্ত গুপ্ত

ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা বেড়েছে

প্রকাশিত: ০৭:২৯, ১১ আগস্ট ২০১৯

ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা বেড়েছে

চলতি বছরের প্রথম ছয় মাস পার করল ব্যাংকগুলো। এরই মধ্যে অর্ধবার্ষিক পরিচালন মুনাফার প্রাথমিক হিসাবও করেছে ব্যাংকসমূহ। চলতি বছরের শুরু থেকেই তীব্র তারল্য সঙ্কটে রয়েছে দেশের বেসরকারী ব্যাংকগুলো। বিনিয়োগযোগ্য তারল্যের অভাবে অনেক ব্যাংক ঋণ বিতরণ করতে পারছে না। খেলাপী ঋণও বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। তার পরও চলতি বছরের প্রথমার্ধের (জানুয়ারি-জুন) হিসাবায়নে বেসরকারী ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফায় বড় ধরনের পরিবর্তন হয়েছে। তবে খেলাপী ঋণের চাপ ও ৯ শতাংশ সুদ কার্যকর করতে গিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের ব্যাংকগুলোর মুনাফা কমে গেছে। ব্যাংকগুলো থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ৩০ জুন শেষে দেশের প্রায় সব বেসরকারী ব্যাংকেরই পরিচালন মুনাফা বেড়েছে। তবে পর্যাপ্ত তারল্য থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত সব ক’টি ব্যাংকের অবস্থাই খারাপ হয়েছে। চলতি বছরের প্রথমার্ধে এ ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে। প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোর তুলনায় মুনাফায় বড় প্রবৃদ্ধি পেয়েছে ইসলামী ব্যাংকগুলো। পরিচালন মুনাফা বেড়েছে দেশের সবচেয়ে বড় ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের। ১ হাজার ২২৩ কোটি টাকার পরিচালন মুনাফা নিয়ে দেশের ব্যাংকগুলোর শীর্ষে রয়েছে ব্যাংকটি। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথমার্ধে বেশ ভাল করেছে ইসলামী ধারার আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক। প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোর মধ্যে ডাচ্-বাংলা, সাউথইস্ট, পূবালী, এনসিসি, ব্র্যাক, ট্রাস্ট, ব্যাংক এশিয়া, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, মার্কেন্টাইল, প্রিমিয়ার, যমুনাসহ প্রায় সব ব্যাংকের পরিচালন মুনাফায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ভালো পরিচালন মুনাফা পেয়েছে নতুন প্রজন্মের প্রায় সব ব্যাংকও। তবে পরিচালন মুনাফা কমেছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের। পরিচালন লোকসান গুনেছে অনিয়মের শিকার বেসিক ব্যাংক। তবে কয়েকটি ব্যাংকের হিসাব চূড়ান্ত না হওয়ায় সেগুলোর পরিচালন মুনাফা সম্পর্কিত তথ্য জানা যায়নি। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড ২০১৯ সালের জানুয়ারি-জুন সময়ে পরিচালন মুনাফা করেছে ১ হাজার ২২৩ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা হয়েছিল ১ হাজার ২১ কোটি টাকা। চলতি বছরের প্রথমার্ধে ভালভাবেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে বেসরকারী খাতের আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড। ব্যাংকটি ৪০৫ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা পেয়েছে। ২০১৮ সালের প্রথমার্ধে আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা ছিল ২৮০ কোটি টাকা। ভাল করেছে বেসরকারী খাতের সাউথইস্ট ব্যাংকও। চলতি বছরের প্রথমার্ধে ব্যাংকটি পরিচালন মুনাফা করেছে ৫০৫ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে ব্যাংকটি ৪৫৬ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফায় ছিল। আগের বছরের তুলনায় ভালো পরিচালন মুনাফা পেয়েছে পূবালী ব্যাংক লিমিটেড। চলতি বছরের প্রথমার্ধে ৫৪০ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে ব্যাংকটি। গত বছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৪৪৭ কোটি টাকা। চলতি বছরের প্রথমার্ধে ৫১০ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক। ২০১৮ সালের একই সময়ে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ছিল ৪১৮ কোটি টাকা। চলতি বছরের প্রথমার্ধে ৩০০ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা পেয়েছে ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড। গত বছরের একই সময়ে ২৬০ কোটি টাকা মুনাফায় ছিল ব্যাংকটি। চলতি বছরের জানুয়ারি-জুন সময়ে ৩৬২ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা পেয়েছে এনসিসি ব্যাংক। বিদায়ী বছরের একই সময়ে ব্যাংকটি ২৯৬ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা পেয়েছিল। বছরের প্রথমার্ধে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ২৭৩ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা পেয়েছে। আগের বছরের একই সময়ে মুনাফার এ পরিমাণ ছিল ২২৯ কোটি টাকা। মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড চলতি বছরের প্রথমার্ধে ৩৩১ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে। আগের বছর এর পরিমাণ ছিল ৩২৫ কোটি টাকা। প্রিমিয়ার ব্যাংক পেয়েছে ২৫৪ কোটি টাকার পরিচালন মুনাফা। ২০১৮ সালের একই সময়ে ব্যাংকটি ২১২ কোটি টাকার পরিচালন মুনাফা পেয়েছিল। অন্য ব্যাংকগুলোর মধ্যে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক চলতি বছরের জানুয়ারি-জুন সময়ে ৩২০ কোটি, এক্সিম ব্যাংক ৩৩০ কোটি ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ২৮১ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা পেয়েছে। ২০১৮ সালের একই সময়ে ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফা ছিল যথাক্রমে ২১১, ২৩৫ ও ১২৮ কোটি টাকা। ২৯৪ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক। গত বছরের একই সময়ে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ছিল ২৭৫ কোটি টাকা। এর মধ্যেও পরিচালন মুনাফা কমেছে ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের। ২০১৮ সালের প্রথমার্ধে ৩৩৭ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফায় ছিল ব্যাংকটি। চলতি বছরের প্রথমার্ধে তা ২৬৮ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। নতুন ব্যাংকগুলোর মধ্যে সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার এ্যান্ড কমার্স (এসবিএসি) ব্যাংক ৯০ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা পেয়েছে। আগের বছর এর পরিমাণ ছিল ৮৮ কোটি টাকা। এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক পরিচালন মুনাফা পেয়েছে ৯০ কোটি টাকা। আগের বছর একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৭৭ কোটি টাকা। মধুমতি ব্যাংক চলতি বছরের প্রথমার্ধে পরিচালন মুনাফা পেয়েছে ৯৬ কোটি টাকা। আগের বছর একই সময়ে ৯০ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফায় ছিল ব্যাংকটি। এনআরবি ব্যাংক লিমিটেড ৩৯ কোটি ও মেঘনা ব্যাংক ৪৪ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা পেয়েছে। ২০১৮ সালের প্রথামার্ধে ব্যাংক দুটির পরিচালন মুনাফা ছিল যথাক্রমে ২৭ ও ৩৫ কোটি টাকা। বেসরকারী ব্যাংকগুলোর মুনাফা বাড়লে ও পরিচালন মুনাফা কমেছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের। এর মধ্যে অগ্রণী ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা নেমে এসেছে ৩০০ কোটি টাকায়। রূপালী ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৭৭ কোটি টাকা। পরিচালন মুনাফা কোন ব্যাংকের প্রকৃত মুনাফা নয়। খেলাপী ঋণের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি ও কর পরিশোধের পর যে মুনাফা থাকে, তা-ই ব্যাংকের প্রকৃত মুনাফা। চলতি বছরের প্রথমার্ধে দেশের প্রায় সব ব্যাংকের খেলাপী ঋণ বেড়েছে। ফলে সঞ্চিতি সংরক্ষণের পর বেশির ভাগ ব্যাংকেরই নিট মুনাফা কমে যাবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংকিং খাতে খেলাপী ঋণ কমাতে গত এপ্রিলে বিভিন্ন শ্রেণীর অনাদায়ী ঋণের সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনে বাংলাদেশ ব্যাংক। সাব-স্ট্যান্ডার্ড, সন্দেহজনক ও মন্দঋণ শ্রেণীকৃত করার সময় তিন মাস করে বাড়ানো হয়। ৩০ জুন থেকে এ পদ্ধতি কার্যকর করার কথা। যদিও ব্যাংকাররা তার আগেই খেলাপী ঋণের নতুন নীতিমালা অনুসরণ শুরু করেন। এতে সব ব্যাংকের সঞ্চিতি (প্রভিশন) সংরক্ষণ কমেছে। এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফায়। তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বেঁধে দেয়া আমানত ও ঋণের সুদহার যথাক্রমে ৬ ও ৯ শতাংশ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মুনাফা কমেছে বলে দাবি করেছেন এ ব্যাংকগুলোর শীর্ষ নির্বাহীরা।
×