ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

তরুণ লেখকদের পাশে তাসনুভা

প্রকাশিত: ০৯:৩৪, ১৮ জুন ২০১৯

তরুণ লেখকদের পাশে তাসনুভা

ডিপ্রজন্ম : ঠিক কোন কারণগুলোতে আপনারা নবীন লেখকদের বিশেষ সুযোগ দিচ্ছে? তাসনুভা : অধ্যয়ন প্রকাশনীর যাত্রাই শুরু করেছে এই প্রজন্মের নতুন লেখকদের নিয়ে এবং সব সময়ই তরুণদের নিয়েই কাজ করছে। ব্যক্তিগতভাবে মনে করি তরুনরা অনেক ভাল বুঝে প্রজন্মের পাঠকরা ঠিক কী চায়। শুধু তরুণদের প্রাধান্য দিয়েই কাজ করছে এমন কোন প্রকাশনী আমি এখন পর্যন্ত দেখিনি। তরুণদের এই জায়গায়টা তৈরি করে দিতে চাই। নতুন লেখকরা অনেকই খুব ভাল লিখছে কিন্তু তারা সুযোগ পাচ্ছে না এবং অনেক সময় প্রতারিত হচ্ছে। মূলত তরুণ লেখকদের একটা প্লাটফর্ম তৈরি করে দেয়াই অধ্যয়নের উদ্দেশ্য। ডিপ্রজন্ম : প্রকাশনা এবং তরুণ লেখকদের মাঝে সব থেকে বড় বাধা কী আপনি মনে করেন? তাসনুভা : সবচেয়ে বড় বাধা যোগাযোগের শূন্যতা, ইংরেজীতে যাকে বলে Communication Gap। সেতুবন্ধনটা বেশ বড় বাধা বলেই আমার কাছে মনে হয়। কারণ একজন প্রকাশক হাজার হাজার তরুণ লেখকদের মধ্যে ভাল লেখে এমন লেখককে খুঁজে বের করতে পারে না, আবার একজন তরুণ লেখক ভাল লিখেও প্রকাশকের দ্বার পর্যন্ত যেতে পারে না। কারণ এখন এতো বেশি তরুণ লেখক এই লেখালেখির জগতে আসছে যে, লেখার মান বিবেচনা করে লেখক নির্বাচন করে তার গ্রন্থ প্রকাশ করা- এই যে একটা প্রক্রিয়া, এটার মধ্য দিয়ে যাওয়ার জন্য তরুণ লেখকরা প্রস্তুত না। আরেকটা বিষয় আছে, সেটি হলো- বেশিরভাগ তরুণ লেখক বই প্রকাশ করতে আগ্রহী কিন্তু পত্রিকার পাতায় লিখতে আগ্রহী না। আগে যেটা হতো, কোন লেখক বই প্রকাশের আগে পত্রিকার পাতায় প্রচুর লেখালিখি করত। ফলে তাঁর লেখার মধ্যেও একটা পরিপক্বতা আসত। লেখকরা তাঁর বইয়ের পা-ুলিপির সঙ্গে পত্রিকায় প্রকাশিত তাঁর লেখা দিলে মান বিচার সুবিধা হতো। বই প্রকাশের আগে পত্রিকার পাতা এবং অন্যান্য মাধ্যমে লিখলে প্রক্রিয়াটা সহজতর হয়। আর প্রক্রিয়াটা সহজতর হলে Communication Gap টা ঘুচে যায়। ডিপ্রজন্ম : নবীন লেখকরা প্রকাশনা নিয়ে কী ধরনের চ্যালেঞ্জে পড়ছেন? সেটার কারণ এবং এই ক্ষেত্রে আপনারা কী ভূমিকা রাখছে? তাসনুভা : উপরে যে বাধার কথা বললাম আমার কাছে মনে হয় সেটিই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। সেক্ষেত্রে অধ্যয়ন প্রকাশনী সব সময় নবীন লেখকদের পা-ুলিপির সঙ্গে তাঁদের পূর্বের প্রকাশিত লেখা নমুনা হিসেবে চায় এবং বই প্রকাশের আগে তাঁদের পত্রিকায় লেখালেখি করতে উৎসাহিত করা হয়। প্রায়ই এমন হয় যে কোন লেখকের প্রথম বই আমরাই প্রকাশ করি। প্রকাশনার জগতে সেই লেখক যখন নতুন, তাঁদের সঙ্গে কাজ করাটা একটু কষ্টের। কিন্তু আমরা জানি, একজন লেখকের কাছে তাঁর প্রথম বই কতটা ভাললাগার। তাঁদের এই আবেগের, ভালবাসার ফসলটুকুর অংশীদার হতে পেরে আমাদের কষ্টগুলো সার্থক হয়। আমাদের নিজস্ব সাহিত্য সম্পাদক, গণিত ও বিজ্ঞান সম্পাদক রয়েছে। আমরা যখন একজন পাঠকের হাতে আমাদের বই পৌঁছে দেই, সেক্ষেত্রে নির্ভুল তথ্য থাকাটা জরুরী। ডিপ্রজন্ম : তরুণ প্রজন্মের বইয়ের প্রতি অনীহা ধীরে হলেও কমছে। এই বিষয়ে আপনার মতামত- তাসনুভা : খুবই ভাল লক্ষণ যে তরুণ প্রজন্মের বই পড়ার অভ্যাসটা আবার গড়ে উঠেছে। নতুন প্রজন্মের উপযোগী করে অনেক মানসম্মত বই বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। তাই তরুণ পাঠকেরা তাদের পছন্দের বইটি কিনেছেন। আজকাল বইগুলো গতানুগতিক ধারা পরিবর্তন করে নতুন আঙ্গিকে সাজিয়ে প্রকাশ করার উদ্যোগ নিচ্ছে আর তাই এই প্রজন্ম চাহিদা অনুযায়ী বই পাচ্ছে। তাছাড়া আজকাল গল্প-উপন্যাস ছাড়াও বিজ্ঞানের এবং মোটিভেট করার অনেক বই প্রকাশ হছে যা সবাই আনন্দের সঙ্গেই গ্রহণ করছে। ডিপ্রজন্ম : আজকাল ব্লগ/ফেসবুকে অনেক তরুণ লেখালেখি করে বিখ্যাত হচ্ছে। সবাই যে ‘ফেসবুক সেলিব্রেটি’ হতে চায় সেটাও না, অনেক ভাল লেখকও আছে। এদের ব্যাপারে আপনার মতামত কী? বইমেলায় আরও পাঠক যোগাতে এ রকম লেখকেরা কতটুকু সাহায্য করতে পারে? তাসনুভা : লেখক ব্লক/ফেসবুক যেখানেই লেখা শুরু করুক একজন লেখক লেখকই। তার লেখা যদি মানসম্মত হয় তবে ধীরে ধীরে পাঠক বাড়বেই। এবং এভাবেই বইমেলারও পাঠক বাড়বে। ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, কেউ যদি সত্যিকার অর্থেই ভাল লিখে তাহলে প্রকাশকই তাকে খুঁজে বের করবে যেখানেই সে লিখুক। প্রকাশনায় যারা আছি তাদের এই দায়িত্বটা ভালভাবে পালন করা উচিত। ডিপ্রজন্ম : তরুণদের মধ্যে ই-বুক পড়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। পিডিএফ কী বইয়ের প্রসার ঘটাবে নাকি ছাপাখানা বিলুপ্ত করে দেবে? তাসনুভা : পিডিএফ কখনও বইয়ের বিলুপ্তি ঘটাতে পারবে না। কারণ বই পড়ার মজা পিডিএফ-এ কখনই পাওয়া যায় না। নতুন বইয়ের যে ঘ্রাণ তার নেশা শুধু একজন বইপ্রেমী জানেন। তবে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সব সিস্টেমেই ব্যবহার শিখতে পারে এতে কোন ক্ষতি নেই। ডিপ্রজন্ম : এবারের বইমেলায় ৪ হাজার ৮৩৪টি নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে (সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন)। কিন্তু ঘুরেফিরে পাঠক অল্প কয়েকজনের বই-ই পড়ছে। মান বিচার করলে আরও অনেক লেখক পাওয়া যাবে যাদের একটা বড় অংশ তরুণ। তাদের প্রচার কম হওয়ার কারণ কী? এই বিষয়ে প্রকাশনীগুলোর দায়িত্ব কি? তাসনুভা : ভাল বই যখন পাঠকের হাত পর্যন্ত যায় না, তখনই অনেকেই মনে করে যে এটি আসলে লেখক বা প্রকাশকের ব্যর্থতা। মাঝারি সাইজের একটি বইয়ের গড় পৃষ্ঠা হয় ১০০-১৫০। পুরোটা পড়ার পর বুঝতে পারা যায় লেখার মান। তাই পাঠক সহজেই যে কোন বই কিনে পরীক্ষা করতে চায় না এবং পছন্দের লেখকের উপরই আস্থা রাখে। প্রচার বৃদ্ধি করেও খুব লাভ হয় না। এক্ষেত্রে প্রকাশনীর দায়িত্বের চেয়ে পাঠকদের মন মানসিকতার পরিবর্তন জরুরী। ডিপ্রজন্ম : বাংলা-ইংরেজীর মিশ্রণে লেখা বই কি আমাদের সাহিত্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে? আপনার মতামত কী? তাসনুভা : কিছুটা তো করছেই। এটা কোন সাহিত্যের মধ্যেই পরে না। সাহিত্য চর্চার বিষয়, না বুঝে শুনে কোন বই সাহিত্যিক আকারে রূপদান করার জন্যই মানুষ বলছে- ইদানীং মানহীন বই বের হচ্ছে। কিন্তু মানসম্মত বইয়ের পরিমাণই বেশি। অথচ কিছুসংখ্যক বইয়ের জন্য অন্য বইগুলোর মান নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। আর বাংলা, ইংরেজী, হিন্দী সব মিলিয়ে জগাখিচুড়ি বানিয়ে বই লিখার কোন অর্থ আমি অন্তত খুঁজে পাই না। কেউ যদি লিখতে চায় লিখুক ফেসবুকে মানুষকে নিছক মজা দেয়ার জন্য। কিন্তু অবশ্যই বই আকারে রূপ দেয়ার আগে লেখক এবং প্রকাশকের দুজনেরেই বিষয়টাতে নজর দিতে হবে। ডিপ্রজন্ম : তরুণ লেখকদের জন্য পরামর্শ- তাসনুভা : লিখে যেতে হবে। শুধু লেখালিখি না সবকিছুর জন্যই প্রয়োজন অধ্যবসায়। চলার পথে অনেক বাধা আসবে এগুলোকে অতিক্রম করতে হবে। হাল ছেড়ে দিলে চলবে না। অল্প কয়েকটা বই পড়েই লিখতে বসা যাবে না। সঙ্গে পাঠক তৈরি করতে হবে।
×