ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের খেলোয়াড় খালেক আর নেই

প্রকাশিত: ১০:৩৪, ১৬ জুন ২০১৯

স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের খেলোয়াড় খালেক আর নেই

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ২০১২ সালের মে মাসের শেষ সপ্তাহের একদিন। দৈনিক জনকণ্ঠ অফিসের ক্রীড়া বিভাগে এসেছিলেন তিনি। শুনিয়েছিলেন নিজের আর্থিক দৈন্যদশার কথা। তাকে নিয়ে জনকণ্ঠ একটি প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছিল ‘স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্য খালেক সরদারের আকুতি’ শিরোনামে। তবে এখন সবকিছুরই উর্ধে চলে গেছেন আব্দুল খালেক সরদার। ৭৫ বছর বয়সে পাড়ি জমিয়েছেন না ফেরার দেশে। শুক্রবার রাত ১২টায় সাতক্ষীরার কাটিয়া লস্করপাড়ায় নিজ বাসভবনে তিনি বার্ধক্যজনিত কারণে ইন্তেকাল করেন (ইন্নানিল্লাহি ... রাজিউন)। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী রাজিয়া খাতুন, ৫ ছেলে, ৩ মেয়েসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। শনিবার বাদ জোহর মরহুমের জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। আব্দুল খালেকের মৃত্যুতে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) কাজী মোঃ সালাউদ্দিন এবং বাফুফের সব কমিটি, সদস্যরা ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আন্তরিক শোক প্রকাশ এবং তার শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেছে। ২০০৬ সালের ১০ আগস্ট মুক্তিযোদ্ধার সনদপত্র পাওয়া, ২০০৭ সালে মেজর জেনারেল মঈন উদ্দিন আহমেদের কাছ থেকে সংবর্ধনা ও পুরস্কার পাওয়া, ২০০৯ সালে বাফুফে সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিনের কাছ থেকে সম্মাননা পাওয়া, ২০১২ সালে শেখ জামাল ধানম-ি ক্লাবের সভাপতি মনজুর কাদেরের কাছ থেকে ‘হেয়ারবাই এ্যাওয়ার্ড’ পাওয়াÑ এই ছিল আব্দুল খালেক সরদারের খেলোয়াড়ি জীবনের প্রাপ্তি। আজকের প্রজন্ম খালেককে চেনে না। কিন্তু ষাট এবং সত্তর দশকের যেসব ফুটবলপ্রেমী এখনও বেঁচে আছেন তারাই জানেন তিনি আসলে কে, কি এবং কেমন ফুটবলার ছিলেন নিজের সময়ে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে প্রবাসের মাটিতে বাংলাদেশের পক্ষে বিশ্ব সমর্থন আদায় এবং শরণার্থী ও সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অর্থ সংগ্রহের জন্য গঠিত হয় ‘স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল’। খালেক ছিলেন এই দলের গর্বিত এক সদস্য। সাবেক জাতীয় ফুটবলার শেখ মোঃ আসলাম যার শিষ্য, সেই আব্দুল খালেক সরদারের জন্ম সাতক্ষীরার মোহাম্মদপুরে। ছোটবেলা থেকেই ছিলেন ফুটবল পাগল। বাবা-মায়ের শত নিষেধ-আপত্তিতেও ফুটবল খেলেছেন। ছিলেন ডিফেন্ডার। আর্থিক সমস্যার কারণে নবম শ্রেণীর বেশি (ছনকা হাই স্কুল) পড়ালেখা করতে পারেননি। কিন্তু অসাধারণ ফুটবল প্রতিভার জন্য ১৯৬৫ সালে চাকরি পেয়ে যান খুলনার গোয়ালপাড়া পাওয়ার হাউসে। খালেকের দল তাতে চ্যাম্পিয়ন হয়ে উন্নীত হয় প্রথম বিভাগে। তারপর তিনি নজরে পড়েন প্রথম বিভাগের ঢাকা মতিঝিলের ওয়াপদা ক্লাবের চোখে। খালেক এ ক্লাবে দাপটের সঙ্গে খেলেন ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত।
×