ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

উত্তরাঞ্চলে বাগানের প্রসার-বারোমাসি আম আসছে

প্রকাশিত: ১০:৫১, ৩০ এপ্রিল ২০১৯

উত্তরাঞ্চলে বাগানের প্রসার-বারোমাসি আম আসছে

সমুদ্র হক ॥ উত্তরাঞ্চলের আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী কেন্দ্রীভূত না থেকে বিকেন্দ্রীকরণের ধারায় এগিয়ে যাচ্ছে। গত ক’বছর ধরে রংপুরে হাড়িভাঙ্গা আম বলতে গেলে আমের হাড়ি ভেঙ্গে দিয়েছে। হাঁড়িভাঙ্গা জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আমের চাষ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে বগুড়া অঞ্চলের দিকে। ইতোমধ্যে বগুড়া, পাবনা, জয়পুরহাট, সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী এলাকায় আমের আবাদ বেড়েছে। এর আগে নওগাঁ অঞ্চলের আমও স্বাদে অনেকটা রাজশাহীর কাছাকাছি প্রমাণ দিয়েছে। দিনাজপুর অঞ্চলের লিচুর সুনামের সঙ্গে হালে আমের ম ম গন্ধ ছড়িয়েছে। কৃষি বিভাগ সূত্রের খবর, এবারের মধুমাসের মৌসুমে রাজশাহী চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রংপুরে আম বাজার মাতিয়ে দেবে। বর্তমানে বারি-৪ ও বারি-১১ জাতের আম অধিক ফলন দিচ্ছে। বারি-১১ জাতটি বছরে তিন বার ফলন দেয়ায় বারোমাসি আমের পরিচিতি পাচ্ছে। তবে জাতটি এখনও প্রতিটি এলাকায় পৌঁছেনি। আশা করা হয়েছে শীঘ্রই পৌঁছে যাবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের খবর : দেশে সব ধরনের ফলের আবাদ বেড়েছে। সঙ্গে বিদেশী নতুন ফলের নানা জাতের আবাদ হচ্ছে। যেমন ড্রাগন, স্ট্রবেরি, মাল্টা কেনু ইত্যাদি। হালে আঙ্গুর ফলছে। যদিও এগুলো শীতের ফল তারপরও বছরের অনেকটা সময় ধরে থাকে। বাঙালীর জ্যৈষ্ঠের মধুমাসের অন্যতম ফল আম, কাঁঠাল। সঙ্গী হয়ে আসে লিচু, জাম, তরমুজ ও বাঙ্গী। সব ছাপিয়ে আমই মধুমাসের অন্যতম ফল। আম পছন্দ করে না, মুখে দেয় না এমন মানুষ খুঁজেও পাওয়া যাবে না। একই সূত্রের খবর : সারাদেশে বর্তমানে ফলের আবাদ হয় ৭ লাখ ১৬ হাজার হেক্টরে। এর মধ্যে আমের আবাদ হয় এক লাখ ৭৫ হাজার হেক্টর জমিতে। আমের আবাদটি বাগানভিত্তিক। চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট এলাকা আমবাগানের বড় বাগান। চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীর আম দেশকে বিশে^র কাছে পরিচিতি দিয়েছে। রাজশাহী অঞ্চলের আমের জাতগুলোর মধ্যে বেশি স্বাদের আম ল্যাংড়া, ক্ষীরসাপাতি, গোপালভোগ, রাজভোগ, মোহনভোগ, দুধরাজ, রানীপছন্দ, ফজলি, আশি^না। মৌসুমের সব শেষে আসে ফজলি ও আশি^না। চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম গবেষণা ইনস্টিটিউট আম্রপালীসহ কয়েকটি জাতের উদ্ভাবন করেছে। নওগাঁর কয়েকটি উপজেলা (নিয়ামতপুর, পতœীতলা, মহাদেবপুর) চাঁপাইনবাবগঞ্জের কাছাকাছি হওয়ায় আম বাগান সম্প্রসারিত হয়েছে। নওগাঁ অঞ্চলে প্রায় দশ বছর ধরে মিষ্টি স্বাদের আম ফলছে। রংপুর অঞ্চলের আম হাড়িভাঙ্গা গত ক’বছর ধরে দাপটের সঙ্গে বাজারে অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। এর সঙ্গে ক্ষীরসাপাতি, আম্রপালী, চন্দ্রমল্লিকা, গৌরমতি, নাকফজলি, ছায়াতাপরি, লাখনা জাতের আম ফলছে। রংপুর অঞ্চলে চলতি মৌসুমে প্রায় সাড়ে সাত হাজার হেক্টরে আমের আবাদ হয়েছে। ফলন আশা করা হয়েছে এক লাখ টন। রংপুর অঞ্চলেও বাগান করে আমের আবাদ হচ্ছে। উদ্ভিদবিদ খন্দকার মেসবাহুল ইসলাম জানিয়েছেন ৯৫ শতাংশ আম গাছেই এবার ফলন ভাল। তবে কয়েক কৃষক এমনও বলেছেন ফাল্গুন মাসের বৃষ্টি ও শিলাপাতে আম্রমঞ্জরীর কিছু ক্ষতিও হয়েছে। বগুড়া অঞ্চলে গত তিন বছর ধরে আম আবাদের নীরব বিপ্লব ঘটেছে। আম বাগান সম্প্রসারিত হচ্ছে। ষাটের দশকে বগুড়া-রংপুর সড়ক ধারে গোকুল এলাকায় বিশাল আম বাগান ছিল। সেই আম বাগান কেটে ভবন গড়ে উঠেছে। প্রবীণরা বলেন, বগুড়ায় ওই সময় (ষাটের দশক) আমের হিসাব ছিল সংখ্যায়। সেরের (তখনও কেজির হিসাব ব্যাপক চালু হয়নি) হিসাবে নয়। প্রতি দুই শ’ আম গুনে শ’য়ের হিসাব হতো। অর্থাৎ আপনি এক শ’ আম কিনলে দুই শ’ আম পেতেন। বগুড়ার মাটি আম আবাদের অনুকূলে ছিল। সেই জায়গাটিতে ফিরছে বগুড়া অঞ্চল। বগুড়া আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণের খবর : ২০১৬ সালে বগুড়া অঞ্চলের চার জেলা বগুড়া, জয়পুরহাট, পাবনা, সিরাজগঞ্জে আম বাগান ছিল ৮ হাজার ১শ’ হেক্টর। উৎপাদন হয় প্রায় ৮৪ হাজার টন। এর মধ্যে বগুড়ায় ছিল ৩ হাজার ৫শ’ ৫৭ হেক্টর। উৎপাদন হয় ৩৯ হাজার টন। পরবর্তী বছর চার জেলায় আম বাগান বেড়ে প্রায় ৯ হাজার হেক্টরে পৌঁছে। উৎপাদন হয় ১ লাখ ২৬ হাজার টন। গত বছর (২০১৮) বগুড়ায় আমের আবাদ হয় ৩ হাজার ৭শ’ হেক্টর। উৎপাদিত হয় ৪২ হাজার টনেরও বেশি। চলতি বছর (২০১৯) বগুড়ায় আমের আবাদ হয়েছে ৩ হাজার ৮শ’ হেক্টরে। বগুড়ায় আমের চাষ হচ্ছে বাগান করে। প্রায় ৪শ’ ব্যক্তি আম বাগান গড়ে তুলেছেন। তাদের একজন গাবতলির কাগইল এলাকার আব্দুর রহিম বললেন, এবার আমের ফলন ভাল। আবহাওয়া অনুকূলেই আছে। যদিও কিছুদিন আগে বৃষ্টি ও শিলাপাত হয়েছিল। তাতে ক্ষতি তেমন হয়নি। সদরের বারোপুরে একটি আম বাগান পরিচর্যা করছিলেন আমিরুল ইসলাম। বললেন, মুকুল ও গুটি ভাল আছে। আম ভালই ফলবে। বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুল আলম বলেন, বগুড়া অঞ্চলে আমের বাগান বাড়ছে। রাজশাহীর কিছু জাতের আম বগুড়া অঞ্চলেও ফলছে। প্রতি বছর আমের চারা বিক্রি ও বাগান বাড়ছে। বগুড়াতেও ক্ষীরসাপাতি, ল্যাংড়া, গোপালভোগ, হাড়িভাঙ্গা, নাকফজলী আম ফলছে। এর পাশাপাশি বারি-৪, বারি-১১ ও উন্নতজাতের আম্রপালী আম উৎপাদিত হচ্ছে বাগানে। বাগানের বাইরে অনেকেই বাড়ির ছাদে আম বাগান করছে।
×