ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পদ্মা সেতুর ১১তম স্প্যান বসেছে দৃশ্যমান হল ১৬৫০ মিটার

প্রকাশিত: ০৬:২৬, ২৩ এপ্রিল ২০১৯

পদ্মা সেতুর ১১তম স্প্যান বসেছে দৃশ্যমান হল ১৬৫০ মিটার

নিজস্ব সংবাদদাতা, মুন্সিগঞ্জ ॥ পদ্মা সেতুর ১১তম স্প্যান বসেগেছে। সেতুর ৩৩ ও ৩৪ নম্বর খুঁটির ওপর ‘৬সি’ নম্বর স্প্যানটি মঙ্গলবার সকাল ৯টা ২০ মিনিটে বসানো হয়েছে। তাই এখন সেতু দৃশ্যমান হল ১৬৫০ মিটার। এখন সেতুটি দূর দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। জাজিরা প্রান্তে একসাথে ৯টি স্প্যান দেখা কষ্টকর। যতদূর চোখ যায় সেতু দৃশ্যমান। এরপরও সেতুই। সকাল ৭টা থেকে স্প্যানটি বসানোর কাজ শুরু হয়। দেশী বিদেশী প্রকৌশলীরা খুব সহজেরই দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটি বসিয়ে দেন। স্প্যানটির এক পাশ ৩৪ নম্বর খুঁটিতে লিফট্রিং ফ্রেম (ঝুলিয়ে রাখার যন্ত্র) এটি ধরে রেখেছে। এখন স্প্যান ‘৬সি’ ও ‘৬ডি’ এর সাথে জোড়া লাগানো হচ্ছে। স্প্যানটি বসে যাওয়ার পর এস আকৃতির সেতুটি বাক আরও বেশী দৃশ্যমান হয়েছে। আর এই মহেন্দ্রক্ষণটি প্রত্যক্ষ করেছে পদ্মার চরের বহু মানুষ। বিশাল ওজনের স্প্যানটি এত সহজে খুটিতে বসিয়ে দেয়ার এই দৃশ্য কার দেখতে ভাল না লাগে? পদ্মা পাড়ের জমির আলী এই দৃশ্য দেখে বেজাই খুশি। তিনি বলেন, এমন ভাল লাগার ক্ষণটি এখানে এখন ঘন ঘনই দেখতে পাচ্ছি। সেতু সম্পন্ন হইতে আর বেশী দিন লাগবে বলে মনে হয় না। কাজ হইতাছে সমানে। তাই মনে হইতাশে আগামী বছরই সেতু দিয়া চলতে পারুম। দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে ২০২০ সালে ডিসেম্বরে পদ্মা সেতু চালু করা সম্ভব হবে। এর আগে সোমবার সকালে মাওয়ার কুমারভোগ কন্সট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে ভাসমান ক্রেনবাহী জাহাজটি কুমারভোগ কন্সট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে স্প্যানটি ৩৩ ও ৩৪নং খুঁটির সামনে অবস্থান নেয়। তিন হাজার ৬শ’ টন ধারণ ক্ষমতার ‘তিয়ান ই’ নামের ভাসমান ক্রেবাহী জাহাজটি যথা স্থানে নোঙ্গর করানো হয়। এরপর ক্রেন পাজা করে ধুসর রংয়ের ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ও ৩ হাজার ১৪০ টন ওজনের স্প্যানটি বসিয়ে দেয়া হয়। এ মাসে এই নিয়ে দু’টি স্প্যান বসলো। এই প্রথম খুব অল্প সময় অর্থ্য্যাৎ ১৩ দিনের ব্যবধানে দু’টি স্প্যান উঠলো। এর আগে ১০ স্প্যানটি মাওয়া প্রান্তে গত ১০ এপ্রিল বসানো হয়। এছাড়া পরবর্তীতে চলতি মাসেই ১২ নম্বর স্প্যানটিও বসানোর কথা জানিয়েছেন ওই প্রকৌশলী। তবে স্প্যানটি বসানো হবে অস্থায়ীভাবে। এই স্প্যানটি স্থায়ীভাবে বসবে ৩২ ও ৩৩ নম্বর খুঁটির ওপর। কিন্তু ৩২ নম্বর খুঁটিটি পুরোপুরি সম্পন্ন না হবার কারণে এটি ৩২ ও ৩৩ নম্বর খুঁটির কাছাকাছি কোনও খুঁটিতে অস্থায়ীভাবে বসানো হবে। কুমারভোগ কন্সট্রাকশন ইয়ার্ডে জায়গা সংকুলান না হবার কারণে ১২ নম্বর স্প্যানটি অস্থায়ীভাবে খুঁটির ওপর রাখার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। এদিকে মূল সেতুর ২৯৪টি পাইলের মধ্যে ২৫৫টি পাইল সম্পন্ন হয়ে গেছে। বাকি ৩৯টি পাইল খুব অল্প সময়ের মধ্যে স্থাপন করা হবে বলে প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন। সেতুর ৪২টি খুঁটির মধ্যে ২৩টি খুঁটি সম্পন্ন হয়ে গেছে। বাকি ১৯টি খুঁটির কাজও চলছে। পদ্মা সেতুর দায়িত্বশীল প্রকোশলী হুমায়ুন কবির জানান, সেতুর ২, ৩, ৪, ৫, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬, ১৭, ১৮, ২০, ২১, ২৩, ৩৩, ৩৪, ৩৫, ৩৬, ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০, ৪১, ৪২ নম্বর খুঁটি সম্পন্ন হয়েছে। স্ক্রীন গ্রাউটিং পদ্ধতিতে ৭টি করে পাইল বসেছে বা বসছে ১১টি খুঁটিতে। এগুলো হলো ৬, ৭, ৮, ১০, ১১, ২৬, ২৭, ২৯, ৩০, ৩১, ৩২ নম্বর খুঁটি। তিনি জানান, ১ নম্বর পিলারের পাইল ক্যাপ হয়ে পিয়ারের এক লিফট শেষ হয়েছে। ৬ ও ৭ নম্বর খুঁটিতে পাইল ড্রাইভ স¤পন্ন হয়েছে। ১, ৬, ৭ নম্বর খুটি আগামী তিন মাসের মধ্যে সম্পন্ন হয়ে যাবে। ৮ নম্বর খুটিতে ৭টি পাইলের মধ্যে দুইটি পাইল ড্রাইভ স¤পন্ন হয়েছে। ৯ নম্বর খুটির পাইল ক্যাপের কাজ চলছে। ১০ নম্বর খুটির পাইল ড্রাইভের কাজ চলছে। ১১ নম্বর খুটির কাজ শুরু হয়নি, তবে শিঘ্র শুরু হবে। ১২ নম্বর খুটির পাইল ড্রাইভিংয়ের কাজ চলছে। ২৪ নম্বর খুটির পাইল ক্যাপ শেষ। ২৫ নম্বর খুটির পাইল ক্যাপ শেষ হয়ে পিয়ারের দ্বিতীয় লিফট হয়েছে। ২৬, ২৭ নম্বর খুটি এলাকা বিআইডব্লিউটিএ’র ফেরি ও লঞ্চ চলাচল চ্যানেল । যেখানে এখনো কাজ শুরু হয়নি। তাই ড্রেজিং করে দ্রুত সরিয়ে নেয়া হচ্ছে চ্যানেলটি। এরপরই কাজ শুরু হবে। ২৮ নম্বর খুটির ক্যাপের কাজ চলছে। ২৯, ৩০ নম্বর খুটির পাইল ড্রাইভিংয়ের কাজ চলছে। ৩১ নম্বর খুটির পাইলিং শেষে স্ক্রীন গ্রাউটিং হচ্ছে। ১ নম্বর খুঁটি থেকে ২০ নম্বর খুটি পর্যন্ত মাওয়া প্রান্তে আর বাকিগুলো জাজিরায় প্রান্তে। তিনি আরও জানান, চীন থেকে এপর্যন্ত ২১ টি স্প্যান এসছে। এর মধ্যে ১১টি ¯প্যান বসানো হয়েছে। এখনও ১০টি ¯প্যান আছে মাওয়া কুমারভোগ কন্সট্রাকশন ইয়ার্ডে। এর মধ্যে পদ্মা সেতুতে তিনটি হ্যামারের মধ্যে ১৯০০কিলোজুল ক্ষমতা স¤পন্ন একটি হ্যামার সার্ভিসিংয়ে আছে। অপর দু’টি হ্যামার কাজ করছে। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। সেতু নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৩৩ হাজার কোটি টাকা। মূল সেতু নির্মাণের কাজ করছে চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কো¤পানি এবং নদী শাসনের কাজ করছে সিনো হাইড্রো করপোরেশন। দুটি প্রতিষ্ঠানউ চীনের। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো।তবে দু’ প্রান্তের সংযোগ সেতুসহ সেতুটি প্রায় ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ। সংযোগ সেতুর কাজও দ্রুত এগিয়ে চলেছে।
×