ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নিয়ম না মেনে ৬৬ ভাগ ভবন ;###;৯৮ ভাগ হাসপাতাল ক্লিনিক ঝুঁকিপূর্ণ

তদারকির অভাবেই মৃত্যুপুরী

প্রকাশিত: ১০:৪০, ৩ এপ্রিল ২০১৯

তদারকির অভাবেই মৃত্যুপুরী

রাজন ভট্টাচার্য ॥ প্রায় দুই কোটি মানুষের শহর রাজধানী ঢাকা। সুইডেনে যেখানে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ২১ জনের বসতি সেখানে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ অনেক এলাকায় এই আয়তনের মধ্যে প্রায় ৫৯ হাজার মানুষের বসবাস। তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অধিক জনসংখ্যাই দুর্যোগের কারণ। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে, আইন না মানার প্রবণতা ও প্রয়োজনীয় তদারকির অভাব। যার প্রেক্ষিতে ইচ্ছামতো গড়ে উঠেছে ইমারত। যেখানে বিল্ডিং কোডের তোয়াক্কা করা হয়নি। ভবনে অগ্নি নির্বাপণে নেয়া হয়নি কার্যকর কোন ব্যবস্থা। নিয়ম না মেনে নির্মাণ হয়েছে ৬৬ ভাগ ভবন। অর্থাৎ মানুষ নিজেরাই ঢাকাকে তৈরি করেছে মৃত্যুকূপে। ফলে একের পর এক ঘটছে আগুনের ঘটনা। অকালে ঝরছে তাজা প্রাণ। বাড়ছে স্বজনহারা মানুষের সংখ্যা। বাড়ছে দীর্ঘশ^াস। এখন আলোচনা একটাই আর কত মৃত্যু হলে নিরাপদ হবে এই মানুষের নগরী। বনানীর ফারুক-রূপায়ণ টাওয়ারে অগ্নিকা-ের ঘটনায় ২৬ জনের মৃত্যুর পর ফের নগরীতে মৃত্যুঝুঁকিতে বসবাসের বিষয়টি আলোচনায় আসে। সব মহল থেকেই শুরু হয় তৎপরতা। প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে, আগুন লাগা ভবনটির অনুমোদন ১৮তলা পর্যন্ত। কিন্তু নির্মাণ হয়েছে ২৩তলা। এ ব্যাপারে রাজউকের পক্ষ থেকে ভবন মালিকদের কয়েকদফা নির্দেশনা দেয়া হলেও তা ভ্রুক্ষেপ করেননি। তাছাড়া আগুন লাগা ভবনটিতে দ্রুত বহির্গমন ও অগ্নি নির্বাপণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ছিল না। সামান্য যা ছিল তাও অকার্যকর। এই অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে ফারুক-রূপায়ণ টাওয়ারের দুই মালিককে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই যখন অবস্থা তখন গুলশান সিটি করপোরেশন মার্কেটসহ আরও চারটি স্থাপনায় আগুন লাগার পর নগরজুড়ে এখন আগুন আতঙ্ক। যার প্রেক্ষিতে সোমবার থেকে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ২৪ টিম পৃথকভাবে ঢাকার বিভিন্ন ভবন পরিদর্শন শুরু করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবারের মন্ত্রী পরিষদের বৈঠকে অগ্নিকা-ের ঘটনা থেকে বাঁচতে ১৫ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন। অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপণ আইন-২০০৩ এবং ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড-২০১২ অনুসারে ঢাকার সব বহুতল ভবনে অগ্নিনির্বাপণে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে সে বিষয়ে একটি যৌথ প্রতিবেদন চেয়েছে হাইকোর্ট। চার মাসের মধ্যে কমিটি করে এ প্রতিবেদন দেবেন রাজউক, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ও ফায়ার সার্ভিস এবং সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ। এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে সোমবার বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মোঃ ইকবাল কবিরের হাইকোর্ট বেঞ্চে রুলসহ এ আদেশ দেন। এছাড়া ফায়ার সার্ভিসের যন্ত্রপাতি, গাড়িসহ কেমন জনবল আছে তা এক মাসের মধ্যে আদালতকে জানাতে তাদের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ৩১ মার্চ রিট আবেদনটি দায়ের করেন গুলশান সোসাইটির মহাসচিব সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শুক্লা সারওয়াত সিরাজ। এদিকে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেছেন, নক্সা না মেনে নির্মাণ করা ও অগ্নিনির্বাপণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না থাকা ভবনগুলো চিহ্নিত করে ঝুঁকিমুক্ত করা হবে। চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি চকবাজারের চুড়িহাট্টায় অগ্নিকা-ে ৭১ জনের মৃত্যুর পর প্রায় প্রতিদিনই ঢাকা শহরে আগুন লাগার ঘটনা আছেই। কোন কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না আগুন। ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষসহ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নগরীর ৯৫ ভাগ ভবন অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে। এসব ভবনে অগ্নি নিরাপত্তায় নেয়া হয়নি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। যেমন ছিল না বনানীর এফ-আর টাওয়ারেও। আর পুরান ঢাকার নিমতলীর অগ্নিকা-ে শতাধিক মানুষের মৃত্যুর ঘটনা তো স্মরণকালের দুঃসহ স্মৃতি হয়ে আছে। সবচেয়ে ঘনবসতির শহর ॥ জাতিসংঘের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতির শহর ঢাকা। দিনদিন এখানে বসতির হার বেড়েই চলছে। তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভারতের মুম্বাই। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ঢাকায় প্রতি বর্গকিলোমিটারে বাস করছেন ৪৪ হাজার ৫০০ জন। আর মুম্বাইয়ে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৩২ হাজার ৪০০ জনের বেশি। জাতিসংঘ তহবিল (ইউএনএফপিএ) ও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য মতে, ২০১৭ সালে ঢাকায় প্রতিদিন নতুন মুখ যুক্তের হার ছিল ১ হাজার ৭০০ জন। গ্রাম ও জেলা শহর থেকে যারা আসছেন তারা স্থায়ীই হয়ে যাচ্ছেন এই শহরে। এতে বেড়েই চলেছে ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকার (মেগাসিটি) জনসংখ্যা। গার্ডিয়ানে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, উত্তর আমেরিকার মধ্যে নিউইয়র্ক সিটি হচ্ছে সবচেয়ে ঘনবসতির। গত বছরই ইউএনএফপিএর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পৃথিবীর মেগাসিটিগুলোর মধ্যে ঢাকার জনঘনত্ব সবচেয়ে বেশি। প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৪৩ হাজার ৫০০ মানুষ বাস করেন; বছর ঘুরতেই যা বাড়ল হাজার খানেক। এভাবে চলতে থাকলে বড় ধরনের হুমকির মুখে পড়বে ঢাকা। হারাবে বসবাসের উপযোগিতা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তদারকির অভাবেই চোখের সামনে ঢাকা মৃত্যুপুরী হয়ে উঠেছে। ২০১০ সালের ৩ জুনের বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যায় রাসায়নিকের আগুনে জ্বলে উঠেছিল নিমতলী। যাতে প্রাণ হারান ১২৪ জন। মুহূর্তেই ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। সেদিনের ভয়াবহ দুর্ঘটনা আর আগুনের লেলিহান শিখা এখনও ভুলতে পারেনি এলাকার মানুষ। সেই ধ্বংসযজ্ঞ, লাশের মিছিল কোনভাবেই মন থেকে সরেনি। নয় বছর আগের আতঙ্ক এখনও তাড়া করে ফেরে স্থানীয় বাসিন্দাদের। সেদিন চোখের সামনে তাজা প্রাণগুলো পুড়ে কয়লা হয়েছিল। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে চারদিকে পড়ে ছিল লাশগুলো। তবুও বাড়েনি সচেতনতা। কবে ঢাকায় এরকম ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ঘটনা থামবে তা নির্দিষ্ট করে বলার কোন সুযোগ নেই। এ নগর সবদিক থেকে মানুষের জন্য নিরাপদ হবে কিনা তাও অনিশ্চিত। জনবহুল ভবন যেমন হাসপাতাল, শপিং মল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো ২ হাজার ৬১২টি ভবনে ফায়ার সার্ভিস ডিফেন্সের জরিপে দেখা গেছে, মাত্র ৭৪টি ভবনে অগ্নি নির্বাপণের ব্যবস্থা সন্তোষজনক। বাকি ২ হাজার ৫৩৮ ভবন অগ্নিঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ৯৫ ভাগ ভবন নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ॥ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) পরিকল্পনাবিদ মাজহারুল ইসলাম বলেন, রাজধানীর ৯৫ ভাগ ভবনে অগ্নি নির্বাপণের ব্যবস্থা নেই। ইমারত নির্মাণ বিধিমালায়ও যেসব নির্দেশনা আছে তা যাচাই-বাছাই করা হয় না। ফলে এফআর টাওয়ারে আগুন লাগার পর ইমার্জেন্সি সাইরেন বাজেনি। ফলে ভবনে কি ঘটেছে তা বুঝতে সময় লাগে সবার। ছড়ায় আতঙ্ক। অনেকে আতঙ্কে ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ে মারা যান। রাজধানীর কাওরানবাজারে এনটিভি ভবনে অগ্নিকা-ের সময়ও লাফিয়ে পড়ার দৃশ্য চোখে পড়ে। নিয়ম না মেনে ৬৬ ভাগ ভবন ॥ রাজধানীর ৬৬ শতাংশ ভবনই রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউকের) নিয়ম না মেনে নির্মাণ করা হয়েছে। ২০১৮ সালে রাজউকের একটি জরিপে উঠে আসা তথ্য গত তিন ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তরে জানিয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত রাজউকের আওতাধীন এক হাজার ৫২৮ বর্গকিলোমিটার এলাকায় দুই লাখ ৪ হাজার ১০৬ ভবন জরিপ করা হয়েছে। এতে পূর্বনির্মিত এক লাখ ৯৫ হাজার ৩৭৬ ভবনের মধ্যে এক লাখ ৩১ হাজার ৫৮৩ (৬৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ) ভবনে বিভিন্ন ধরনের ব্যত্যয় পাওয়া গেছে এবং নির্মাণাধীন আট হাজার ৭৩০ ভবনের মধ্যে তিন হাজার ৩৪২ (৩৮ শতাংশ) ভবনের অনুমোদিত নক্সায় ব্যত্যয় পাওয়া গেছে। মন্ত্রীর তথ্য মতে, জরিপকৃত ভবনের মধ্যে মোট এক লাখ ৩৪ হাজার ৯২৫তে (৬৬ শতাংশ) অনুমোদিত নক্সার ব্যত্যয় ঘটানো হয়েছে। এদিকে সোমবার রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি (এনএসইউ) অডিটরিয়ামে এনএসইউ ল’ ফেস্ট সিজন-২ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, সুইডেনে প্রতি বর্গকিলোমিটারে বাস করে মাত্র ১০ জন। ঢাকার মিরপুর, মোহাম্মদপুর এলাকায় প্রতি বর্গকিলোমিটারে বসবাস করে ৫৯ হাজার মানুষ। গুলশান ও বনানীর মতো অন্যান্য অভিজাত এলাকায় প্রতি বর্গকিলোমিটারে বসবাস করে ২৪ হাজার মানুষ। ‘আলহামদুলিল্লাহ’ এই দেশের প্রতি, ঢাকার প্রতি আল্লাহ তায়ালার বিশেষ নজর আছে। না থাকলে বসবাস করা সম্ভব হতো না। আগুনের ঝুঁকিতে হাসপাতাল ॥ অগ্নিঝুঁকি মোকাবেলায় ঢাকা মহানগরীর ৯৮ ভাগ হাসপাতাল ও ক্লিনিকই ঝুঁকিপূর্ণ বলে দাবি করেছে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ। সংস্থাটির করা এক জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে। এসব হাসপাতাল বা ক্লিনিকে আগুন লাগলে ঝুঁকি মোকাবেলায় করণীয় সম্পর্কে সরকারী-বেসরকারী কোন হাসপাতাল বা ক্লিনিক কর্তৃপক্ষেরই কোন প্রকার প্রশিক্ষণ নেই। তাই অগ্নিনির্বাপণে ব্যবহৃত সকল প্রকার সরঞ্জাম সঠিক নিয়মে পরিচালনার কৌশল জানতে সরকারের কাছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নিয়মিত প্রশিক্ষণ প্রদান করতে ও হাসপাতাল এলাকায় বিশেষায়িত ফায়ার স্টেশন চালুর জন্য জোর দাবি জানিয়েছেন হাসপাতালের মালিক ও পরিচালকরা। সম্প্রতি রাজধানীর কাজী আলাউদ্দীন রোডে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরে সংস্থাটি কর্তৃক ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার হাসপাতালসমূহের মালিক, পরিচালক ও তাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এসব দাবি জানানো হয়। হাসপাতালসমূহের অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতিকল্পে করণীয় শীর্ষক সভায় রাজধানী ও এর আশপাশের প্রায় ৪ শতাধিক মালিক ও প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। সভায় সংস্থাটির মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার আলী আহমেদ খান (অব) বলেন, মূলত হাসপাতালগুলোর আগুনের ৭০ শতাংশই লেগে থাকে বৈদ্যুতিক ত্রুটি থেকে। অধিকাংশ সরকারী হাসপাতালের ভবনগুলোই অনেক পুরোনো। ওইসব ভবনের বৈদ্যুতিক লাইনগুলোও পুরোনো। এ জন্য বিদ্যুতের ভোল্টেজ সামান্য ওঠা-নামা করলেও অগ্নিকা-ের সূত্রপাত হয়ে যায়। হাসপাতালগুলোর অগ্নিঝুঁকি কমাতে সর্বপ্রথম পুরোনো বৈদ্যুতিক লাইনগুলো পরিবর্তন করা দরকার। এরপর হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। মহাপরিচালক বলেন, পুরনো হাসাপাতালগুলোর জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা স্থাপন কিছুটা কষ্টসাধ্য হলেও নিরাপত্তা ব্যবস্থার সঙ্গে কোন আপোস করা যায় না। হাসপাতাল চালুও রাখতে হবে আবার তা নিরাপদও রাখতে হবে। তিনি জরুরী মুহূর্তে হাসপাতাল থেকে বের হয়ে আসার জন্য পজিটিভ প্রেশারে আইসোলেটেড বহির্গমন জরুরী সিঁড়ি সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ফায়ার ডোর স্থাপনের মাধ্যমে এ ধরনের ইমার্জেন্সি এক্সিট সংরক্ষণ করতে পারলে জীবনহানির আশঙ্কা কমে যাবে। হাসপাতাল-গুলোর অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা একটি স্পর্শকাতর ও উদ্বেগজনক বিষয়। স্বাভাবিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ে হাসপাতালের দুর্ঘটনায় জীবনহানির আশঙ্কা অনেক বেশি থাকে। কারণ একটি হাসপাতালে যারা অবস্থান করেন তাদের বেশিরভাগই থাকেন রোগী, যাদের পক্ষে অন্যের সাহায্য ছাড়া দুর্ঘটনার সময় বের হয়ে আসা সম্ভব নয়। এ কারণে এসব প্রতিষ্ঠানের জন্য পূর্ব প্রস্তুতির বিকল্প নেই। সভায় অধিদফতরের পরিচালক শাকিল নেওয়াজ বলেন, আমরা হাসপাতালগুলোতে, যে সার্ভে কার্যক্রম পরিচালনা করেছি তাতে দেখা যায় ঢাকা মহানগরীর ৪৩৩ হাসপাতাল ও ক্লিনিকের মধ্যে ২৪৯ ঝুঁকিপূর্ণ এবং ১৭৩ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তবে আমাদের সার্ভেকৃত হাসপাতালের মোট সংখ্যার ৯৮ শতাংশই ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি জানান, ধারণক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি রোগী, ভবনে র‌্যাম্প ও জরুরী সিঁড়ির অভাব, স্টোরিং গাইডলাইনের অভাব, দক্ষ ফায়ার সেফটি প্রফেশনালের অভাব, ফায়ার ডিটেকশন ও প্রটেকশন সিস্টেম এর অভাব, আর্থিং ব্যবস্থা না থাকা, এলপিএস (লাইটিং প্রটেকশন) সিস্টেম না থাকা, পর্যাপ্ত পানির অভাব, আবাসিক ভবনে হাসপাতাল স্থাপন, ইভাকুয়েশনের জন্য পর্যাপ্ত জায়গার অভাব ইত্যাদির কারণে হাসপাতালগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে।
×