চলমান পাক-ভারত উত্তেজনার পারদ কমাতে আরও একটি পদক্ষেপ নিয়েছে ইসলামাবাদ। এই নয়া পদক্ষেপের অংশ হিসেবে ভারতে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার সাবেক পাক রাষ্ট্রদূত সোহেল মাহমুদ তার কর্মস্থল নয়াদিল্লীতে ফেরত যাচ্ছেন। খবর এক্সপ্রেস ট্রিবিউন ও টাইমস অব ইন্ডিয়া অনলাইনের।
গত মাসে কাশ্মীরের পুলওয়ামায় জঙ্গী হামলার পর পরমাণু সমৃদ্ধ এই দুই চিরবৈরী প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনা শুরু হলে সোহেল মাহমুদ ইসলামাবাদ ফিরে যান। পাশাপাশি ভারত-পাকিস্তানের মধ্যেকার কর্তারপুর করিডর খুলে দেয়া নিয়ে আলোচনা এগিয়ে নেয়ার পরিকল্পনাও করেছে ইসলামাবাদ। মঙ্গলবার প্রকাশিত পাক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়। সাম্প্রতিক পাক-ভারত উত্তেজনা নিয়ে উভয় দেশের কূটনীতিকদের তলব করা হয়। পাক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়, পাকিস্তানে নিযুক্ত ভারতের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার তার দেশে পাকিস্তানের দূতকে নিজ দায়িত্ব পালনের বিষয়টি আমাদের জানিয়েছেন। একই দিন ভারতের এই দূত বলেন, আগামী ১৪ মার্চ পাকিস্তানের প্রতিনিধিদল নয়াদিল্লী সফর করতে পারেন। এই সফরে কর্তারপুর করিডর খুলে দেয়া নিয়ে আলোচনার বিষয়টি নিশ্চিত হতে পারে। এরপর ভারতীয় প্রতিনিধিদল ফিরতি সফরে আগামী ২৮ মার্চ ইসলামাবাদ সফরে যাবেন। উত্তেজনা প্রশমনে ইসলামাবাদ আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। আর তা হলো ইসলামাবাদ ভারতকে জানাবে যে, তারা পাক-ভারত সেনাবাহিনীর সিনিয়র কর্মকর্তাদের মধ্যে সাপ্তাহিক বৈঠক ফের চালু করতে চায়। তবে গত দুই সপ্তাহে উভয় দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে আলোচনা হয়েছে কি না তা স্পষ্ট করা হয়নি। এসব পদক্ষেপ দেখে মনে হচ্ছে যে, দেশ দুটির মধ্যে উত্তেজনা প্রশমনের অংশ। পাকিস্তানের এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানায়, কয়েক প্রভাবশালী দেশের পরোক্ষ পদক্ষেপে এসব হতে পারে বলে ওই সূত্র মনে করেন। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত দক্ষিণ এশিয়ার পরমাণু সমৃদ্ধ দেশ দুটির মধ্যেকার উত্তেজনা প্রশমনে কাজ করেছে। জঙ্গীদের বিরুদ্ধে পাকিস্তান অভিযান শুরুর কয়েক ঘণ্টা পর দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই বিবৃতি প্রকাশ করে।
পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহরিয়ার আফ্রিদি বলেন, অন্তত ৪৪ জন সন্দেহভাজন জঙ্গীকে আটক করা হয়েছে। আটক এসব জঙ্গীদের মধ্যে হামাদ আজহার ও মুফতি আব্দুর রউফ রয়েছে। হামাদ আজহার মাওলানা মাসুদ আজহারের ছেলে আর মুফতি আব্দুর রউফ নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন জয়শ-ই-মোহাম্মদ প্রতিষ্ঠাতার ভাই।
এদিকে পাক-ভারত উত্তেজনা প্রশমনে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত উভয় দেশের একদল শিক্ষার্থী সমাবেশ করেছেন। ওই সমাবেশে ভারত ও পাকিস্তানের শিক্ষার্থীরা পাক-ভারত যুদ্ধ চাই না বলে স্লোগান দেন। এই সমাবেশের নাম দেয়া হয়, ভারত-পাকিস্তান সৌহার্দ্য সমাবেশ। শনিবারের ওই সমাবেশে উভয় দেশের প্রায় এক শ’ শিক্ষার্থী অংশ নেন। অক্সফোর্ড ক্যাম্পাসের ঐতিহাসিক ‘র্যাডক্লিফ ক্যামেরার’ সামনে সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে উভয় দেশের শিক্ষার্থীরা ‘যুদ্ধ চাই না’ লেখা প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করে। সমাবেশে বাংলা, উর্দু, পাঞ্জাবী ও ইংরেজী ভাষায় লেখা নানা যুদ্ধবিরোধী কবিতা আবৃত্তি করা হয়। আর ফায়িজ আহমেদ নামে এক শিক্ষার্থী ‘হাম দেখেঙ্গে’ নামে একটি জনপ্রিয় গান গেয়ে শোনান। অক্সফোর্ড ভার্সিটির ভারত-পাকিস্তানের ২০১৮ শিক্ষা বর্ষের রোডস স্কলাররা শনিবারের ওই সমাবেশের আয়োজন করে। রাহুল বাজাই নামে এক রোডস স্কলার বলেন, আমরা দীর্ঘদিন পাক-ভারত উত্তেজনার ফল দেখে আসছি। তবে তিনি মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের এই উত্তেজনায় হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়। কারণ দুটি দেশই সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। তারা উভয়ে নিজেদের সমস্যার সমাধান করার ক্ষমতা রাখে।