ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাষ্ট্রপতির ভাষণ

প্রকাশিত: ০৯:২৭, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

রাষ্ট্রপতির ভাষণ

নতুন বছরের শুরুতে নতুন সরকার গঠিত হওয়ার পর নতুন সংসদ তার যাত্রা শুরু করল বুধবার। এই একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি যে ভাষণ দিয়েছেন সেটি তাৎপর্যপূর্ণ নানা বিবেচনায়। জাতির অভিভাবকসুলভ বার্তা ও দিকনির্দেশনা পাওয়া গেছে অভিজ্ঞ রাষ্ট্রনায়কের কাছ থেকে। তার প্রাজ্ঞ ভাষণে নিকট অতীতের রাষ্ট্রিক অগ্রগতির বিশ্লেষণ, ভবিষ্যতের সম্ভাবনা ও আশাবাদ- দুটোই স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। তিনি বহু বিষয়ের ওপর আলোকপাত করেছেন যা দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্যই বিশেষভাবে বিবেচনাযোগ্য ও অনুধাবনযোগ্য। নবগঠিত জাতীয় সংসদের উদ্বোধনী অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির বক্তব্য প্রদানের রেওয়াজ রয়েছে। গণতন্ত্রের জন্য এটি একটি বিশেষ সৌন্দর্য। সংসদীয় গণতন্ত্রে জাতীয় সংসদই রাষ্ট্রীয় সকল পরিচালনার মূল চালিকাশক্তি। সংসদ নেতা তথা প্রধানমন্ত্রী মূল নির্বাহী ক্ষমতার ভরশক্তি হলেও রাষ্ট্রপতি হলেন রাষ্ট্রের চূড়াসম প্রতিষ্ঠান। ফলে রাষ্ট্রপতির প্রশংসা কিংবা সমালোচনা সরকার ও সংসদ সদস্যদের জন্য এক পরম ও শিক্ষণীয় প্রাপ্তি। রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের বক্তব্যের সারকথা যদি একবাক্যে বলতে হয় তবে বলতে হবে, দেশের সকল নাগরিককে ঐক্যবদ্ধ থাকার তাগিদই তিনি দিয়েছেন। তার কারণও ব্যাখ্যা করে তিনি বলেছেন, জাতীয় ঐকমত্য ব্যতীত শান্তি ও সমৃদ্ধি স্থায়ী রূপ পেতে পারে না। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে হলে দেশ থেকে সন্ত্রাস, মাদক, দুর্নীতি ও জঙ্গীবাদ সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করতে হবে- তার এ উপলব্ধি যথাযথ। কেননা এর মধ্য দিয়েই শোষণমুক্ত সমাজ-প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সেই কাজটিকেই ব্রত হিসেবে গ্রহণ করে অক্লান্তভাবে নির্ভীক চিত্তে তার অভিযাত্রা যে গতিশীল রেখেছেন, সেকথা বলাই বাহুল্য। চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণ করায় শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয়, যা দেশে-বিদেশে সকল মহলে প্রশংসিত হয়েছে। বাংলাদেশের জনগণের বিপুল সমর্থনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয়। জনগণের এ রায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জননন্দিত নির্বাচনী ইশতেহার ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’-এর প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থনের বহির্প্রকাশ। সরকার নির্বাচনী ইশতেহারে বর্ণিত প্রতিশ্রুতিসমূহ বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর। বিগত ১০ বছরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরিচালিত সরকার দেশের কল্যাণ ও উন্নয়নের লক্ষ্যে যেসব গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে তার একটি স্বীকৃতি ও প্রশংসা মিলেছে রাষ্ট্রপতির ভাষণে। তিনি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তার প্রধান প্রধান দিকগুলোর উল্লেখ করেছেন। বিগত দশ বছরে দেশে-বিদেশে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি দারিদ্র্যবিমোচন ও সামাজিক উন্নয়নেও সরকারের অর্জন ছিল লক্ষণীয়। ১৩০টি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতায় ৭৬ লাখ ৩২ হাজার ব্যক্তি বা পরিবারকে সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। অতীতের তুলনায় উল্লেখযোগ্যহারে দেশে বিনিয়োগ বেড়েছে। বাংলাদেশ খাদ্যশস্য উৎপাদনে শুধু স্বয়ংসম্পূর্ণতাই অর্জন করেনি বরং উদ্বৃত্ত খাদ্যশস্যের দেশ হিসেবে বিশ্বে পরিচিতি লাভ করেছে। গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা, আইনের শাসন ও অব্যাহত আর্থসামাজিক উন্নয়নের মতো মৌলিক প্রশ্নে সকল রাজনৈতিক দল, শ্রেণী ও পেশা নির্বিশেষে সকলের ঐকমত্য গড়ে তোলার সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য দেশবাসীর প্রতি রাষ্ট্রপতি যে উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন সেটি সর্বস্তরে প্রশংসিত হবে। আমরা আশা করতে পারি, দেশের প্রতিটি সচেতন মানুষ রাষ্ট্রপতির সদিচ্ছার বিষয়টি অন্তরের অন্তস্তলে উপলব্ধি করবেন এবং নিজ নিজ অবস্থান থেকে দেশের কল্যাণের জন্য যথাসাধ্য ভূমিকা রাখবেন। তাহলেই কাক্সিক্ষত অর্জন সম্ভব হবে।
×