ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

এবারও বাজে আম্পায়ারিংয়ে ক্ষতি হলো বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ০৮:১৯, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৮

  এবারও বাজে আম্পায়ারিংয়ে ক্ষতি হলো বাংলাদেশের

মোঃ মামুন রশীদ ॥ বারবার বাজে আম্পায়ারিংয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটে ডেকে এনেছিল অসহনীয় ক্ষতি। দারুণ কোন অর্জনের ম্যাচগুলোয় আম্পায়ারদের বাজে সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ দলকে বঞ্চিত করেছে। এবারও বাজে আম্পায়ারিং হয়েছে, তবে চরম ভুল সিদ্ধান্তটা পক্ষে এসেছে দলের। কিন্তু এবারের ভুল সিদ্ধান্ত পক্ষে আসলেও তা দলকে ছন্দহীন করে তোলে আর তাতে খারাপ পরাজয়ে বড় একটি অর্জন থেকে বঞ্চিত হয়েছে। দ্বিতীয় ম্যাচে মিরপুরেই রেকর্ড ২১১ রানের সংগ্রহ গড়েছিল বাংলাদেশ দল। ব্যাটসম্যানরা দারুণ প্রশংসিত ব্যাটিং করেছিলেন। কিন্তু সেই ব্যাটসম্যানরা আত্মাহুতি দিলেন একে একে শনিবার সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় ও শেষ টি২০ ম্যাচে। ব্যতিক্রম ছিলেন শুধু লিটন। শুরু থেকেই ঝড় তুলেছিলেন, কিন্তু চতুর্থ ওভারের শেষ বলে ‘নো-বল’ বিতর্কেই হয়তো বাংলাদেশের সেই ফুঁসে ওঠা ব্যাটিংয়ে ভাটার টান আসলো। রিপ্লেতে দেখা গেছে ক্যারিবীয় পেসার ওশান টমাসের পা লাইনের ভেতরে থাকলেও আম্পায়ার তানভীর আহমেদ ‘নো’ বল ডেকেছেন। তাই ক্যাচ আউট হয়েও বেঁচে যান ১৩ বলে ৩৩ রানে থাকা লিটন। তবে ক্যারিবীয় অধিনায়ক কার্লোস ব্রেথওয়েট তা কোনভাবেই মানতে না পেরে রিভিউ চেয়েছিলেন। তাতেও রাজি হয়নি আম্পায়ার। পরে দীর্ঘক্ষণ বিতর্ক হয়, ম্যাচ রেফারি ও আম্পায়াররা তাদের সিদ্ধান্তে অটল থাকলে খেলা আবারও শুরু হয়। আর তারপরই ছন্দ হারিয়ে ফেলা বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা একের পর এক উইকেট বিলিয়ে দিয়েছেন। তবে একমাত্র লিটনই ২৫ বলে ৪৩ রানের একটি দারুণ ইনিংস খেলেন। ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচে প্রথম ভুল সিদ্ধান্তের চরম খেসারত দিতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। নিশ্চিত ‘নো বল’ না ডাকায় বেঁচে গিয়েছিলেন রোহিত শর্মা। শেষ পর্যন্ত দুর্দান্ত ইনিংস খেলে ভারতকে জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সংগ্রহ এনে দিয়েছিলেন। ফলে প্রথমবার বিশ্বকাপের শেষ আটে খেলা টাইগারদের গর্বটা আর বড় হয়নি। সর্বশেষ এবার এশিয়া কাপের ফাইনালেও বিতর্কিত সিদ্ধান্তে লিটন দাস আউট হওয়াতে হেরে যায় বাংলাদেশ। বারবার এমন বাজে সিদ্ধান্তে ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। তবে এবার বাজে একটি সিদ্ধান্ত পক্ষেই আসে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল আগে ব্যাটিংয়ে নামার পর টর্নেডো ব্যাটিং করেছিলেন এভিন লুইস। তার ঝড়ো ব্যাটিংয়ের পর বাংলাদেশী বোলারদের দারুণ প্রত্যাবর্তনে শেষ পর্যন্ত ১৯.২ ওভারে ১৯০ রানে গুটিয়ে যায় ক্যারিবীয়রা। জবাব দিতে নেমে দারুণভাবেই শুরু করে বাংলাদেশ দলও। পেসার টমাসের করা চতুর্থ ওভারে ৩০ রান তুলে নেন লিটন ৩ ছক্কা ও ২ চার হাঁকিয়ে। আগের ম্যাচেও ফিফটি হাঁকানো এ ডানহাতি ওপেনার ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছিলেন। খেলেছিলেন ৩৪ বলে ৬০ রানের ইনিংস। টমাসের করা চতুর্থ ওভারেই শেষ বলে তিনি লং অফে ক্যাচ দিয়েছিলেন তা ধরেছিলেনও ফিল্ডার। কিন্তু আম্পায়ার তানভীর ‘নো’ ডাকেন। যদিও রিপ্লেতে দেখা যায় টমাসের পা বল ছোড়ার সময় লাইনের ভেতরেই ছিল। তাই ক্যারিবীয় অধিনায়ক রিভিউ আবেদন করলেও তা নাকচ করে দেন তানভীর। তাই ব্রেথওয়েট টিভি আম্পায়ার গাজী সোহেলের সঙ্গে তর্কে লিপ্ত হন। খেলা বন্ধ হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত ম্যাচ রেফারি জেফ ক্রো মাঠে নেমে সীমানা দড়ির কাছে এসে ব্রেথওয়েটকে বুঝিয়ে শান্ত করেন। প্রায় ১০ মিনিট খেলা বন্ধ ছিল। ৪ ওভারে ১ উইকেটে ৬২ রান নিয়ে তখন দারুণ অবস্থানেই ছিল বাংলাদেশ। খেলা আবার শুরু হওয়ার পর ফ্রি-হিটে ছক্কা হাঁকান সৌম্য সরকার। ১৪ বলে তখন ৩৪ রানে দাঁড়িয়ে বিধ্বংসী লিটন। দেশের পক্ষে দ্রুততম ফিফটি করা মোহাম্মদ আশরাফুলের (২০ বলে) রেকর্ড ভাঙ্গার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। পঞ্চম ওভার থেকেই ঝপ করে বিপর্যয় নেমে আসে। ‘নো বল’ বিতর্কে বঞ্চিত ক্যারিবীয়রা যেন উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। আর ছন্দ হারিয়ে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা আত্মাহুতির পথ বেছে নেন। একে একে সাজঘরে ফেরেন সৌম্য (৯), সাকিব (০), মুশফিকুর রহীম (১)। ফ্যাবিয়ান এ্যালেনের স্পিনেই যেন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে বাংলাদেশ দল। এরপর পল এসে ধস নামিয়ে দেন। তার বোলিং যতটা ভয়ানক ছিল, তারচেয়ে বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের অহেতুক শট খেলাটাই ছিল চরম বিপদে পড়ার মূলে। বিপদের কান্ডারি মাহমুদুল্লাহ রিয়াদও ৯ বলে ১১ রান করে বাজে শটে আউট হয়ে যান। এমনকি লিটনও অন্যপ্রান্তে নির্ভরযোগ্যদের ব্যর্থতা দেখতে দেখতে খেই হারিয়ে ফেলেন। তিনিও ২৫ বলে ৩ চার, ৩ ছক্কায় ৪৩ রান করে সাজঘরে ফেরেন। অর্থাৎ হুট করে নেমে আসা বিপদের মাঝে পরবর্তী ১১ বলে মাত্র ৯ রান করেছেন শুরুতে দারুণ বিধ্বংসীরূপে আবিভর্‚ত লিটন। আম্পায়ারিং বিতর্কের পরই বাংলাদেশের দারুণ ব্যাটিংয়ে আচ্ছন্ন একটি ভাব চলে আসে। গতি, ছন্দ আর মানসিক শক্তি হারিয়ে ফেলা বাংলাদেশের ব্যাটস্যমানদের ওপর ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছেন পল। তিনি ৪ ওভারে মাত্র ১৫ রান দিয়ে নেন ৫ উইকেট। এটি ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে আন্তর্জাতিক টি২০ ম্যাচেসেরা বোলিং নৈপুণ্য। এর আগে সেরা ছিল ড্যারেন সামি ২০১০ সালের ২৮ ফেব্রæয়ারি পোর্ট অব স্পেনে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ২৬ রানে ৫ উইকেট নিয়ে সেরা ক্যারিবীয় বোলিং নৈপুণ্যের রেকর্ড গড়েছিলেন। পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারে ৪ উইকেটে ৭০ রান নিয়ে যদিও ঠিক পথেই ছিল বাংলাদেশ দল। কিন্তু পলের ভয়ানক বোলিংয়ে ১৭ ওভারে ১৪০ রানেই গুটিয়ে যায়। আরেকবার তাই ‘বাজে আম্পায়ারিংয়ের’ কবলে পড়ে হার দেখতে হয়েছে। ১৭টি দ্বিপাক্ষিক সিরিজে কখনই বাংলাদেশ দল তিন ফরমেটে প্রতিপক্ষকে সিরিজ হারাতে পারেনি। এবার ক্যারিবীয়দের টেস্ট সিরিজে ২-০, ওয়ানডে সিরিজে ২-১ ব্যবধানে হারানোর পর সেই বিরল অর্জনের সুযোগ এসেছিল। কিন্তু তা আর হয়নি ১-১ সমতায় থাকা টি২০ সিরিজের শেষ ম্যাচ হেরে যাওয়ায়।
×