ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের মুখে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেন

প্রকাশিত: ১৮:৩৬, ২৪ অক্টোবর ২০১৮

ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের মুখে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেন

অনলাইন ডেস্ক ॥ ভারতবর্ষে দুইশ বছরের ইংরেজ শাসনামলে দুটি ভয়াবহতম দুর্ভিক্ষে না খেতে পেয়ে মারা যায় বাংলা অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ। ইংরেজি ১৭৭০, বাংলায় ১১৭৬ সালে হওয়া প্রথম দুর্ভিক্ষ, যা ‘ছিয়াত্তরের মন্বন্তর’ বলে পরিচিত, তাতে প্রাণহানি হয় এক কোটি মানুষের। পরের দুর্ভিক্ষ হয় ইংরেজি ১৯৪৩, বাংলা ১৩৫০ সালে, যেটিকে বলা হয় ‘পঞ্চাশের মন্বন্তর’, তাতে না খেতে পেয়ে মারা যায় ৩০ লাখের বেশি মানুষ। বাংলায় ওই দুই দুর্ভিক্ষই ঘটে মূলত শাসকশ্রেণির লোভ, ক্ষমতা দখলের লড়াই আর অবিবেচনার ফলে। জাতিসংঘ জানাচ্ছে, সেই একই কারণে, যুদ্ধ আর ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ের বলি হয়ে এই মুহূর্তে নতুন শতাব্দীর ভয়াবহতম দুর্ভিক্ষের মুখে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেন। বিবিসিতে প্রকাশিত এক ভিডিও প্রতিবেদন থেকে এ কথা জানা যায়। ইয়েমেনে বর্তমানে এক কোটি ৩০ লাখ মানুষ অনাহারের শিকার বলে সতর্কতা জানানো হয়েছে জাতিসংঘ থেকে। সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের প্রতি দেশটিতে আর সামরিক হামলা না চালানোর ব্যাপারে আহ্বান জানানো হয়েছে। শিগগির যুদ্ধ না থামালে আগামী তিন মাসের ভেতর দেশটি শতাব্দীর ভয়াবহতম দুর্ভিক্ষের শিকার হতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে জাতিসংঘ থেকে। তিন বছর আগে ইরান সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা রাজধানী ‘সানা’সহ ইয়েমেনের বেশিরভাগ জায়গা দখল করে নিলে যুদ্ধ শুরু হয়। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স সমর্থিত সৌদি আরব আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত দেশটির সরকারের পক্ষাবলম্বন করে হুতিদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। এতে এযাবৎ অন্তত ১০ হাজার মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। বাস্তুচ্যুত হয়েছে লাখ লাখ মানুষ। যুদ্ধের ফলে বর্তমানে দেশটিতে ভয়াবহ অর্থ-তারল্যের সৃষ্টি হয়েছে। প্রচুর পরিমাণে বেড়ে গেছে জিনিসপত্রের দাম, যা সাধারণ মানুষের নাগালে নেই। তারা আটকা পড়েছে সরকার ও বিরোধী পক্ষের লড়াইয়ে দীর্ঘ এক গৃহযুদ্ধের মাঝে। ইয়েমেনে চলমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে জাতিসংঘের কর্মকর্তা লিজ গ্রান্দে বলেন, ‘আমার মতো আরো অনেকের কাছে এটা চিন্তারও অতীত ছিল যে, একবিংশ শতাব্দীতেও আমরা বাংলা, ইথিওপিয়া, সোভিয়েত ইউনিয়নে হয়ে যাওয়া দুর্ভিক্ষের মতো আর কোনো দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন হব। এটা মেনে নেওয়া যায় না।’ ‘সবার প্রত্যয় ছিল যে, তেমন কিছু আর ঘটবে না। কিন্তু সত্যটা হলো চোখের সামনে ইয়েমেনে সেটা ঘটছে। আমাদের আশঙ্কা, প্রায় এক কোটি ৩০ লাখ নিরীহ মানুষ খাবারের অভাবে মৃত্যুর শিকার হতে পারে,’ যোগ করেন গ্রান্দে। ইয়েমেনে উদ্ভূত এ পরিস্থিতিকে মানবজাতির জন্য প্রশ্নাতীতভাবে চরম লজ্জাজনক অভিহিত করে জাতিসংঘের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রত্যেক নতুন দিনের শুরুতে দুর্ভিক্ষের মুখে এই মানুষগুলোর জন্য সম্ভাব্য যেকোনো কিছু করার তাগিদ আমাদের অনুভব করা প্রয়োজন।’ বিবিসির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ইয়েমেনবাসী নিজেদের বাকি দুনিয়া থেকে পরিত্যক্ত বলে মনে করেন। তাঁরা এই ভেবে মর্মাহত যে, সারা দুনিয়ার মানুষ কেন এত দীর্ঘ যন্ত্রণাভোগের মাঝে তাঁদের ফেলে গেছে?’ এক ইয়েমেনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মহল ও ইউরোপীয় দেশগুলোর কাছে আমাদের এই বার্তা যে, দেখো আমাদের কী অবস্থা! দিন দিন পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হয়ে উঠছে। এমন বন্দিদশায় আটকে থাকার মতো কি দোষ আমরা করেছি?’ ইয়মেন যুদ্ধের কথা সবাই ভুলে গেছে বলা হলেও, ইয়েমেনবাসীর মতে, কেউই এ যুদ্ধের কথা ভুলে যায়নি, বরং সবাই অবহেলা করেছে। কেবল যুদ্ধ বন্ধ করার ভেতর দিয়েই উদ্ভূত এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব বলে সবার অভিমত।
×