ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দেশেই এখন বেশি কাজ করতে চাই ॥ ফেরদৌস

প্রকাশিত: ০৭:১৫, ২৬ জুলাই ২০১৮

দেশেই এখন বেশি কাজ করতে চাই ॥ ফেরদৌস

আনন্দকণ্ঠ : ‘জ্যাম’ চলচ্চিত্র প্রসঙ্গে- ফেরদৌস : দীর্ঘ দশ বছর পর প্রয়াত নায়ক মান্না ভাইয়ের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান কৃতাঞ্জলি কথাচিত্র চলচ্চিত্র প্রযোজনা করছে। সিনেমাটি পরিচালনা করবেন নঈম ইমতিয়াজ নেয়ামূল। মূলত ট্র্যাফিক ‘জ্যাম’ নিয়েই চলচ্চিত্রটি। এর বেশি এখনই বলা যাবে না। এ ছবিতে প্রতিষ্ঠিত শিল্পীদের সমাগম দেখা যাবে। সময় উপযোগী একটি গল্প। শেলী ভাবি ছবিটি বানাচ্ছেন। কৃতাঞ্জলি মান্না ভাইয়ের অন্যতম সেরা একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান। অনেক ভাল ভাল বেশকিছু ছবি উপহার দিয়েছে এ প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান। আমি নিশ্চিত ভাল কিছু হতে যাচ্ছে। আমার একটা দায়বদ্ধতার জায়গা আছে। মান্না ভাইয়ের প্রিয় নায়কের তালিকায় আমার নামটা সব সময় বলত, আমি এবং পূর্ণিমা তার পছন্দের নায়ক নায়িকা। আমার মনে হয় সেই হিসেবে দুইজনের দায়বদ্ধতার জায়গাটা আলাদা। আশা করছি ‘জ্যাম’ ছবিটি দর্শকদের পছন্দ হবে। আনন্দকণ্ঠ : ‘মেঘকন্যা’ ২৭ তারিখ রিলিজ হবে কি? ফেরদৌস : এখনও শিউর না। কিছু টেকনিক্যাল সমস্যা আছে। এখনও ১০০% নিশ্চিত না যে ২৭ তারিখে রিলিজ হবে কি-না। আসলে নতুন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সিনেমা রিলিজে একটি জটিলতা তৈরি হয়। আমার মনে হয় এ রকম একটি বিষয়ের মধ্যে তারা পরেছে। এ ছবিতে খুব সুন্দর একটা চরিত্রে দেখা যাবে আমাকে। প্রথমে মনে হবে একটু নেগেটিভ চরিত্রের। একটা প্লেবয় টাইপের ছেলে। অনেকগুলো প্রেম করে তারপর একটি মেয়ের সঙ্গে প্রেম করতে গিয়ে সিরিয়াস হয়ে যায়। কিন্তু মেয়েটি সিরিয়াস থাকে না। এ রকম একটি গল্প নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। ছবিতে খুব ভাল ভাল কিছু ম্যাসেজ আছে। মেকিং খুব ভাল হয়েছে। গানগুলো সুন্দর। চমৎকার সব লোকেশন বান্দরবানের। সবাইকে হলে নিয়ে দেখার মতো একটি সামাজিক গল্প। দর্শক ভাল গল্পের ছবি দেখতে চায়। মেঘকন্যা তেমনই এক ভাল গল্পের ছবি। আনন্দকণ্ঠ : ওপার বাংলার ছবিতে দীর্ঘদিন বিরতি? ফেরদৌস : গত দুই-তিন বছর ধরেই বিরতি। কলকাতায় প্রচুর সময় থাকতে হয়। সে ক্ষেত্রে পরিবারকে সময় দেয়া মুশকিল। বাচ্চারা বড় হয়ে গেছে। আগের মতো ও রকম সময় নেই। যার কারণে ওপার বাংলায় কাজ কমিয়ে দিয়েছি। আগের মতো সে রকম সুযোগ নেই যে প্রতি মাসে গিয়ে সেখানে থাকব। প্লান করে কাজ করে আগাচ্ছি। দেশেই এখন বেশি কাজ করতে চাই। আমাদের দেশে খুব ভাল ছবি হচ্ছে। সেক্ষেত্রে মনে হয় এখানে আমার দরকার। আনন্দকণ্ঠ : ‘কাঠগড়ায় শরৎচন্দ্র’ ছবির কাজের অগ্রগতি? ফেরদৌস : এক লটের কাজ হয়েছে বাকি কাজ ঈদের পর হবে। মাল্টি কাস্টিংয়ের ছবি। এটায় অনেক শিল্পী রয়েছে। সবার সিডিউল মেলানো একটু ঝামেলার ব্যাপারও। ওবায়দুল কাদেরের গল্প নিয়ে একটি ছবির পরিকল্পনা চলছে। আমার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে খুব শীঘ্রই কাজ শুরু করব। আমাকে সাংবাদিকের চরিত্রে দেখা যাবে। আনন্দকণ্ঠ : বাংলাদেশের স্বল্পসংখ্যক মানুষ বাংলা সিনেমা দেখে। বাকি মানুষগুলো ভিনদেশী ছবি দেখে। বাংলাদেশের যারা সিনেমার সঙ্গে যুক্ত তারা কেন বাকি মানুষগুলোকে আমাদের দেশের ছবিতে সংযুক্ত রাখতে পারছে না? ফেরদৌস : এর সবচেয়ে বড় অন্তরায় আমাদের দেশে সিনেমা হলের অভাব। অপ্রতুলতা। মানুষ এখন কষ্ট করে খালি গায়ে গরমে ঘেমে ঘেমে ছবি দেখতে চায় না। এখনকার মানুষের অবস্থান সবদিক দিয়ে ভাল। স্বল্প উন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। আনন্দকণ্ঠ : এ থেকে উত্তরণের উপায়? ফেরদৌস : সিনেমা হলের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। সিনেমা হল তৈরি করতে হবে। বর্তমান সরকার কথা দিয়েছে ৫০টি হল ডিজিটাল করে দেবে। এটা একটি বড় বিষয়। ভাল সিনেমা হল লাগবে। ভাল নির্মাতা, প্রযোজক লাগবে। সিনেমা হলের যখন পরিবেশ ভাল হবে। প্রযোজক দেখবে তার লগ্নিকৃত অর্থ ফেরত পাচ্ছে তখন প্রযোজক প্রযোজনায় লগ্নি করতে আগ্রহী হবে। তার লগ্নিকৃত অর্থ ফেরত পাবে। সে আরও সিনেমার জন্য লগ্নি করবে। মানুষ ভাল সিনেমা দেখতে চায়। আনন্দকণ্ঠ : একজন ভাল শিল্পীর কি কি গুণ থাকা দরকার বলে আপনি মনে করেন? ফেরদৌস : একজন শিল্পী হওয়ার আগে তার সবচেয়ে আগে একমাত্র যেটা দরকার তাকে একজন ভাল মানুষ হওয়া। একজন শিল্পীর শৈল্পীক গুণাবলীর সঙ্গে সঙ্গে ভাল মানুষ হওয়া অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। একজন ভাল মানুষ হলে আপনা আপনি তার মধ্য সবকিছু এসে যাবে। একজন মানুষ যখন ভাল হবে না তখন তার চরিত্রে সমস্যা থাকব তাহলে তার মধ্য ওই জিনিসগুলো আটোমেটিক সবকিছু চলে আসবে। সে জন্য আমার কাছে মনে হয়েছে যে একজন প্রকৃত শিল্পী হতে হলে একজন ভাল মানুষ হওয়াটা অত্যন্ত জরুরী। আনন্দকণ্ঠ : অভিনয় জীবনে কোন চরিত্রটি করার জন্য এখনও মনের ভেতর ইচ্ছা পোষণ করেন? ফেরদৌস : এ রকম অনেক হাজারও চরিত্র রয়েছে। যখন কোন সুন্দর চরিত্র দেখি তখন মনে হয় আমি কেন এটা করতে পারলাম না। এটা প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে ভাল সিনেমা দেখলে এটা মনে হয়। সঞ্জয় দত্তের বায়োপিক নিয়ে সঞ্জু করছে। ওই দেশে জন্মগ্রহণ করলে এ রকম একটি সিনেমা করতে পারতাম। এটা একটা অতৃপ্তির ব্যাপার। টাইটানিক এখনও যদি দেখি আমার মনে হয় কেন করতে পারলাম না। দেবদাসের চরিত্র এতবার হয়েছে আমার মনে হয় কেন করতে পারলাম না। এটা প্রত্যেক শিল্পীরই অতৃপ্তি থেকে যায়। এই তৃষ্ণা যতদিন থাকবে প্রতিটি শিল্পীর কাজের প্রতি তাগিদ বেছে থাকার আনন্দ থাকে। আনন্দকণ্ঠ : দীর্ঘ ২৮ বছর পর চলচ্চিত্রাঙ্গনে চতুর্থবারের মতো আবারও শুরু হচ্ছে ‘নতুন মুখের সন্ধানে’ প্রতিযোগিতা। অনেকেই বলছেন পুরাতন যারা রয়েছে তারা বেকার কাজ নেই। নতুন করে বেকার মুখ খোঁজার মানে কি! এ প্রসঙ্গে কি বলবেন? ফেরদৌস : এর সঙ্গে আমি একমত না। এমনিতে আমাদের ছবির সংখ্যা কমে গেছে। ছবি রিলিজ করে টাকা না পাওয়ার কারণে প্রযোজক লগ্নি করতে চায় না। নতুনদের প্রতিদিনই দরকার আছে। প্রতিদিনই নতুন ছেলে মেয়ে আসতে পারবে। নতুনদের পাশাপাশি পুরাতনদের যার যার অবস্থান মতো কাজে লাগাতে হবে। কিন্তু আমাদের দেশে এই ট্রেন্টটা নেই। নির্মাতারা কনফিউজড থাকে একজন সিনিয়ার শিল্পীকে কতটুকু ব্যবহার করা যায়। এ ব্যাপারটায় বড় অন্তরায় আমাদের এখানে আছে। বাট আমি সাপোর্ট দেই নতুন মুখ সন্ধানের।
×