ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সুধীর বরণ মাঝি

নবম-দশম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়

প্রকাশিত: ০৮:১৪, ২৫ জুলাই ২০১৮

নবম-দশম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়

শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া শিক্ষক হাইমচর কলেজ, হাইমচর-চাঁদপুর। মোবাইল : ০১৭৯৪৭৭৭৫৩৫ প্রথম অধ্যায় প্রস্তুতি-৩ সৃজনশীল ৩। এশিয়া মহাদেশের ‘এ’ রাষ্ট্রের একটি প্রদেশের জনগণ পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন করে আসছে। তাই আগামী প্রাদেশিক নির্বাচনে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের বিপক্ষে কয়েকটি দল জোটবদ্ধ হয়ে অংশ নিতে যাচ্ছে। সংবাদপত্রে এ ধরনের একটি সংবাদ পড়ে দশম শ্রেণির ছাত্রী সাদিয়া তার পাঠ্যবইয়ের পড়া একটি নির্বাচনের সাথে এ নির্বাচনের মিল খুঁজে পেল। সেই সাথে প্রত্যাশা করল এ নির্বাচনের পরিণতি যেন পাঠ্যপুস্তকের সেই নির্বাচনের মতো না হয়। ক) কোন সাল থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি শহিদ দিবস হিসেবে পালন করা হয় ? খ) আইয়ুব খান প্রবর্তিত মৌলিক গণতন্ত্রের ধারণাটি ব্যাখ্যা কর। গ) সাদিয়া তার পড়া কোন নির্বাচনের সাথে সাদৃশ্যকল্পের নির্বাচনের মিল খুঁজে পেল ? ব্যাখ্যা কর। ঘ) “উক্ত নির্বাচন বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিকে সুদৃঢ় করে।” উক্তিটি বিশ্লেষণ কর। উত্তর ঃ ক) ১৯৫৩ সাল থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি শহিদ দিবস হিসেবে পালন করা হয়। উত্তর ঃ খ) আইয়ুব খান প্রবর্তিত মৌলিক গণতন্ত্র নামক পদ্ধতিটি ছিল তার সামরিক শাসনকে দীর্ঘায়িত করার একটি অগণতান্ত্রিক পদ্ধতি। এতে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে মোট ৮০ হাজার নির্বাচিত কাউন্সিল সদস্য নিয়ে নির্বাচকমন্ডলী গঠন করা হয়। যারা প্রেসিডেন্ট , সংসদ সদস্য ও গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্বাচনের ভোটার হিসেবে ভোট দিত। এটি ছিল গুরুত্বপূর্ণ পদের নির্বাচনের ক্ষেত্রে এক পরোক্ষ বা মধ্যস্থতাকারী ব্যবস্থা, যেখানে জনগণের ইচ্ছা অনিচ্ছার কোন মূল্য থাকত না। ১৯৮০ সালে ৮০ হাজার নির্বাচিত কাউন্সিল সদস্যদের ভোটে আইয়ুব খান প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। উত্তর : গ) উদ্দীপকের নির্বাচনের সাথে ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনের মিল দেখা যায়। পূর্ব পাকিস্তান তথা পূর্ব বাংলার মানুষের স্বাধীকার আদায়ের প্রথম আনুষ্ঠানিক ভিত্তি ছিল যুক্তফ্রন্টের এ নির্বাচন। পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্মের পর পাকিস্তানি শাসকদল মুসলিম লীগ ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য দীর্ঘদিন কোন নির্বাচনের ব্যবস্থা করেনি। এছাড়া প্রাদেশিক সরকার নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের টালবাহানা পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের নিকট স্পষ্ট হয়ে উঠে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের চরিত্র। পূর্ব পাকিস্তানে মুসলিম লীগের পরাজয় ঘটানোর জন্য ৪টি বিরোধী রাজনৈতিক দল যুক্তফ্রন্ট গঠন করে। যুক্তফ্রন্ট ২১দফার ভিত্তিতে প্রচারণা চালায়। এ নির্বাচনে জনগণ যুক্তফ্রন্টের ২১দফাকে তাদের স্বার্থরক্ষার সনদ বলে বিবেচনা করে। ১৯৫৪ সালের মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট ২৩৭টি মুসলিম আসনের মধ্যে ২২৩টি আসন লাভ করে। ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ পায় মাত্র ৯টি আসন। এ নির্বাচনে মুসলিম লীগের রাজনীতির অবসান ঘটে। উত্তর : ঘ) বাংলা ইতিহাসের পথপরিক্রমায় ১৯৫৪ সালের নির্বাচন একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পর থেকে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের আচরণ ছিল বিমাতাসুলভ। তারা প্রথমেই আঘাত হানে বাঙালি ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর। উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা দিয়ে চালিয়ে দেওয়ার পাঁয়তারা করে। কিন্তু বাঙালিরা এর বিরুদ্ধে প্রবল আন্দোলন গড়ে তোলে এবং দাবী মানতে বাধ্য করে। ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে জাতীয়তাবাদী যে চেতনার উন্মেষ ঘটে তাতে সমর্থন যোগায় যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন। যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনি ইশতেহারের ২১ দফার প্রথম দাবিটি ছিল বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যমত রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা করা। এরূপ দাবি বাঙালি জাতিকে যুক্তফ্রন্টের প্রতি সমর্থন যোগাতে সহায়তা করে। বাঙালিদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে সহায়তা করে। সবাইকে জাতীয়তাবাদী ধ্যানধারনায় প্রলুব্ধ করে। বাঙালিদেরকে শাসন কায়েম করতে উৎসাহিত করে। স্বাধীকার আদায়ের পথকে মসৃণ করে তোলে। বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার অনুপ্রেরণা দেয়। পাকিস্তানি কেন্দ্রীয় সরকারের শাসন শোষণ থেকে মুক্ত হওয়ার পথে আশার আলো জাগায়। অর্থাৎ বলা যায়, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালি জাতীয়তাবাদের যে ভিত্তির সূচনা হয়েছিল, যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনের মাধ্যমে তা আরও সুদৃঢ় হয়েছিল।
×