ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ডিবি ইন্সপেক্টর খুনের কথা আদালতে স্বীকার করল মানিক

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ৮ এপ্রিল ২০১৮

ডিবি ইন্সপেক্টর খুনের কথা আদালতে স্বীকার করল মানিক

শংকর কুমার দে ॥ ‘হত্যাকা-ের পরদিন সকালে টিভিতে দেখি গুলিতে নিহত লোকটা পুলিশের লোক’Ñ এক খুনীর আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী। এই খুনীর নাম নূর মোহাম্মদ মানিক। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) জালাল উদ্দীন হত্যাকা-ের খুনী সে। আদালতে জবানবন্দী দেয়ার পর এই খুনীকে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। গত ৩ এপ্রিল ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট খুরশিদ হকের আদালতে স্বীকারোক্তি দেয় মানিক। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। আদালতে দেয়া জবানবন্দীতে মানিক বলেছে, হাসান (বন্দুকযুদ্ধে নিহত) তার বাসা থেকে দুইটা পিস্তল এনে লোকটাকে গুলি করতে থাকে। অন্ধকারে লোকটাকে চিনতে পারি নাই। পরে গুলি খেয়ে লোকটা ‘ও স্যার’ বলে চিৎকার করে। পরে আমি ও হাসান মিলে ছাদের দক্ষিণ দিক দিয়ে পালাই। আমি আমার বাসাতে যাই। পরের দিন সকালে টিভিতে দেখি গুলিতে নিহত লোকটা পুলিশের লোক বলে জানতে পারিÑ ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক জালাল উদ্দীন। আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে মানিক বলেছে, আমি আর হাসান দেখছিলাম কারা আসে। ঘরের দক্ষিণ দিকের চিপা দিয়ে একজন লোককে ছাদে ওঠার চেষ্টা করতে দেখি। আমি ও হাসান ওই লোকটার মাথা দেখে তার মাথায় ইট মারি। এর মধ্যে হাসান তার বাসা থেকে দুইটা পিস্তল এনে লোকটাকে গুলি করতে থাকে। অন্ধকারে লোকটাকে চিনতে পারি নাই। ঘটনার দিন প্রধান আসামি হাসানের সঙ্গে সেও ছিল বলে জানিয়েছে আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে। গত ৩ এপ্রিল ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট খুরশিদ হকের আদালতে স্বীকারোক্তি দেয় মানিক। এর আগে গত ২ এপ্রিল রাতে মিরপুর বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয় তাকে। গত ১১ জানুয়ারি মিরপুরের মধ্য পীরেরবাগের ২৯৯/৯/১/এ নম্বর বাসার চতুর্থ তলায় বসবাসরত দুই সার্জেন্ট মামুনুর রশীদ ও সোহেল রানার সরকারী দুটি আগ্নেয়াস্ত্র চুরি হয়। এ ঘটনার প্রায় আড়াই মাস পর চুরি হওয়া পিস্তল দুটি উদ্ধার করতে গত ১৯ মার্চ রাতে পীরেরবাগের ১০৫/১/এ নম্বর বাসার দোতলার ছাদে টিনশেড বাসায় অভিযান চালাতে গিয়ে নিহত হন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পল্লবী জোনাল টিমের পরিদর্শক জালাল উদ্দিন ওরফে জাহাঙ্গীর। এর তিন দিনের মাথায় ২২ মার্চ রাতে মধ্য পীরেরবাগের ভাঙ্গা ব্রিজ এলাকায় ডিবি পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় প্রধান সন্দেহভাজন আসামি হাসান আলী। মানিক আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিতে বলেছে, গত ১৯ মার্চ আমি ও হাসানের বন্ধু সাইদুল মিলে মধ্য পীরেরবাগের হাসানের বাসায় যাই। হাসানের বাসার পাশে একটি কক্ষে বসে রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টার দিকে আমরা তিনজন মিলে ইয়াবা খাই। সাইদুল ইয়াবা খাওয়া শেষে চলে যায়। এ সময় আমি ও হাসান দরজার সামনে পাটি বিছিয়ে গল্প করছিলাম। এর মধ্যে হাসানের স্ত্রী আমাদের কাছে এসে বলে বাসার পেছন দিক থেকে কারা যেন টর্চ লাইট মারছে। হাসানের স্ত্রী ঘরের লাইট বন্ধ করে দেয়। আলোচিত এ ঘটনার তিনদিনের মাথায় সাক্ষী হিসেবে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেয় বন্দুকযুদ্ধে নিহত হাসানের স্ত্রী তানিয়া বেগম। সেই জবানবন্দীতে তানিয়া তার স্বামী পিস্তল দিয়ে পুলিশকে গুলি করার কথা উল্লেখ করেছে। তানিয়া জবানবন্দীতে বলেছে, ‘আমার স্বামী হাসান ও তার বন্ধু মানিক ঘরের বাইরে ছাদের ওপর মাদুর বিছিয়ে বসে ছিল। এর কিছু সময় পর কুকুরের ডাক শুনতে পাই। আমি ঘর থেকে বের হয়ে দেখি আমার স্বামী ও তার বন্ধু মানিক ছাদের কোনায় দাঁড়িয়ে একজন লোককে লক্ষ্য করে আমার স্বামীর হাতে থাকা কালো রঙের পিস্তল দিয়ে দুটি গুলি করছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সূত্র জানায়, গ্রেফতারের পর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়া মানিকের বাবার নাম মৃত হুমায়ূন কবির। গ্রামের বাড়ি বাগেরহাট সদরের সরুই এলাকায়। রাজধানীর মধ্য পীরেরবাগে পাম্পের গলি এলাকায় পরিবারের সঙ্গে থাকে সে। মানিক ছিল বন্দুকযুদ্ধে নিহত প্রধান আসামি হাসানের ইয়াবা খাওয়ার সঙ্গী। মানিক স্থানীয় একটি গার্মেন্টে কাজ করার পাশাপাশি হাসানের সঙ্গে গ্রিলকাটা চোরচক্রের সদস্য হিসেবেও কাজ করতো বলে তারা ধারণা করছেন। মানিকের বিরুদ্ধে মিরপুর থানায় দুটি মাদক মামলা রয়েছে। কয়েক মাস আগে সে জেল থেকে জামিনে বেরিয়ে আসে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, ডিবির পরিদর্শক জালাল হত্যাকা-ে হাসানের সঙ্গে এই মানিক ছিল। এছাড়া তাদের সঙ্গে সাইফুল নামে আরেকজন ছিল। তারা তিনজন একসঙ্গে ইয়াবা খাওয়ার পর সাইফুল ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়। গ্রেফতারের পরপরই মানিক হত্যাকা-ে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দী দিয়েছে। বন্দুকযুদ্ধে নিহত হাসান ও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদানকারী মানিকের অন্যতম সহযোগী সাইফুলকে গ্রেফতারের জন্য খোঁজা হচ্ছে।
×