ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মঞ্জুর মোর্শেদ সুমন

অর্থনীতিতে ফেরি ব্যবসা

প্রকাশিত: ০৬:০২, ৪ মার্চ ২০১৮

অর্থনীতিতে ফেরি ব্যবসা

একটি সম্ভাবনা শুধু বড় কোন প্রোজেক্ট বা বড় কোন বিনিয়োগেই থাকে না, অর্থ বাজারে তা অনেক আগেই ভুল প্রমাণ হয়েছে। ফেরিওয়ালা বা ফেরি করে পণ্য বিক্রি নতুন কিছু নয়। তবে কালের বিবর্তনে এই ফেরি করা বাণিজ্যে এসেছে পরিবর্তন, এসেছে আধুনিকতার ছোঁয়াও। আমাদের পাড়া, মহল্লা, সড়ক, মহাসড়কের পাশে সচারাচরই চোখে পরে এমন অসংখ্য পণ্যের ফেরিওয়ালা, তারা পণ্যগুলোকে সুন্দরভাবে ভোক্তা বা ক্রেতার সামনে উপস্থাপন করে থাকে। অর্থনৈতিক চিন্তায় কখনই তাদের এই ব্যবসাকে তেমন একটা গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয় না। অথচ এ ধরনের ব্যবসা অনেক ভূমিকা রাখছে আমাদের অর্থনীতিতে। আজকাল পণ্য বিক্রির নতুন মাধ্যম অনলাইন হলেও এর পুরনো সংস্করণ হলো এই ফেরি ব্যবসা। এখন মোবাইল বা ল্যাপটপে বসে পণ্য ক্রয় বা বিক্রয় করা যায়, তার আদি রুপ এই ফেরি করা ব্যাবসা। অনেক নিত্য পণ্য কড়া নাড়ে আমাদের দুয়ারে ফেরিওয়ালাদের মাধ্যমে। শাক, সবজি, মাছ, মাংস, মুরগি, কাপর, জুতা, মসলা, চাল, ডাল, লবণ, ক্রোকারাইজ আইটেম, প্রচলিত, অপ্রচলিত পণ্য, কি নেই ফেরি করা ব্যবসায়। আগে যেখানে টুকরি করে ফেরি হতো এখন সেটা ভ্যানগাড়ি, এমন কি ছোট ছোট কাভার্ড বা খোলা ভ্যানের মাধ্যমে ফেরি হচ্ছে। একজন ফেরিওয়ালা তার ভ্যানগাড়িটি ব্যাটারিচালিত, হরেক রকম নিত্য ব্যবহার্য পণ্যের সমাহার ওই ছোট্ট ভ্যানটিতে। ক্রোকারাইজ, প্লাস্টিক, স্টিল পণ্যে ভরপুর। সে তার ব্যবসা সম্পর্কে কিছু তথ্য প্রদান করে। পণ্য এবং গাড়ি মিলিয়ে পুজি এক লাখ টাকার মতো। দৈনিক বিক্রি পাঁচ হতে সাত হাজার টাকার মতো। সে প্রতিটা বাড়ির সামনে যেয়ে হাক দেয়। ক্রেতা মূলত নারীই বেশি। ফেরিওয়ালার পণ্য সরবরাহ খরচ কম। দোকান ও কর্মচারী খরচ নেই, নেই বিদ্যুত বিলের খরচ। একেক দিন, একেক মহল্লায় ফেরি করে। ক্রেতাদের সঙ্গেও তার ভাল সম্পর্ক। মাঝে মাঝে বাকিতেও বিক্রয় করে। ইতিবাচক দিক হলো সে নিজে একজন উদ্যোক্তা, স্বল্প পুঁজিতে ব্যবসা করছে। আয়ও খারাপ না। হ্যাঁ, ফেরি করা পণ্য সব যে মান সম্মত হয় তা না। তবে মানুষের দৈনিক জীবনের প্রাত্যহিক চাহিদা পূরণে ও পণ্যের সহজ লভ্যতায়, ফেরি করা ব্যবসা ভূমিকা পালন করছে। এর ফলে সৃষ্টি হচ্ছে আত্মনির্ভরশীলতা। সহজ হচ্ছে জীবনযাত্রা। গতিময় হচ্ছে অর্থনীতি। ফেরিওয়ালা বা ফেরি করা ব্যবসা সৃষ্টি করেছে নতুন বাজার। এটাকে কোন কাঠামোর মধ্যে আনতে পারলে বাজার ব্যবস্থা হবে আরও শক্তিশালী। এদেরকে ক্ষুদ্র ঋণের আওতায় আনতে পারলে তৈরি হতে পারে বড় কোন উদ্যোক্তা। যা অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক।
×