ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

শীর্ষে ফারমার্স, ব্র্যাক ও সোনালী ব্যাংক

৭ বছরে ব্যাংকের বিরুদ্ধে ২৬ হাজার অভিযোগ

প্রকাশিত: ০৪:৪৩, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

৭ বছরে ব্যাংকের বিরুদ্ধে ২৬ হাজার অভিযোগ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ব্যাংকিং সেবা নিয়ে গ্রাহক অভিযোগ বাড়ছেই। গত বছরের ডিসেম্বর মাসেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাস্টমার সার্ভিসেস বিভাগে (সিএসডি) প্রায় ৫০০ অভিযোগ এসেছে। এ মাসে প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে সবার শীর্ষে ছিল ফারমার্স ব্যাংক। এছাড়া দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে ছিল বেসরকারী ব্র্যাক ব্যাংক ও রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক। এদিকে, গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত (সিএসডি চালুর পর থেকে) বিভিন্ন ব্যাংকের বিরুদ্ধ প্রায় সাড়ে ২৬ হাজার অভিযোগ জমা পড়েছে। এসব অভিযোগের সিংহভাগই নিষ্পত্তি হলেও ঘুরেফিরে ব্যাংকের বিরুদ্ধে একই রকম অভিযোগ আসছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১১ সালের ১ এপ্রিল গ্রাহক স্বার্থ সংরক্ষণ কেন্দ্র (সিআইপিসি) গঠন করে। পরিধি বাড়তে থাকায় পরে একে ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি এ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিসেস (এফআইসিএসডি) নামে পূর্ণাঙ্গ বিভাগে রূপ দেয়া হয়। জানা গেছে, সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়া গ্রাহকরা ব্যাংকের সেবা পেতে কোন ধরনের হয়রানি বা প্রতারণার শিকার হলেই এ বিভাগে অভিযোগ দায়ের করছে। ফলে গ্রাহক হয়রানির অভিযোগ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। আর এসব অভিযোগের মধ্যে উল্লেখযোগ্য আসছে ঋণ ও অগ্রিম, স্বীকৃত বিলের মূল্য পরিশোধ না হওয়া, ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড, চেক জালিয়াতি, রেমিট্যান্স, মোবাইল ব্যাংকিং, অতিরিক্ত চার্জকর্তন, নোটস ও কয়েনস, ব্যাংক গ্যারান্টি, মিথ্যা তথ্য দিয়ে ব্যাংক থেকে অর্থ উত্তোলন ও স্থায়ী আমানতের (এফডিআর) টাকা তুলতে না পারাসহ অন্যান্য অভিযোগ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা যায়, সিআইপিসি চালুর পর থেকে গত বছরের পর্যন্ত এফআইসিএসডিতে মোট অভিযোগ করেছেন ২৫ হাজার ৬৫৬ গ্রাহক। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ২৫ হাজার ৬৪৮টি অভিযোগ। অভিযোগ নিষ্পত্তির হার ৯৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ। এ সময়ে লিখিতভাবে প্রাপ্ত অভিযোগের সংখ্যা ছিল ১৪ হাজার ৮৬১টি। যার মধ্যে ১৪ হাজার ৮৫৩টিই নিষ্পত্তি হয়েছে। অন্যদিকে, এ সময়ে টেলিফোনে আসা অভিযোগ ছিল ১০ হাজার ৩৯৬টি; যার সবগুলোই নিষ্পত্তি হয়েছে। একই সময়ে অনলাইনে প্রাপ্ত অভিযোগেরও সবকয়টি নিষ্পত্তি হয়েছে। এ সময় পর্যন্ত অনলাইনে আসা প্রাপ্ত অভিযোগ ছিল ৩৯৯টি। প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর মাসে প্রাপ্ত অভিযোগের সংখ্যা ছিল ৪৯৫টি। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ৪৮৭টি। নিষ্পত্তির হার ৯৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। এ সময়ে লিখিতভাবে ১৯৭টি, টেলিফোনে ২৮৯টি ও অনলাইনে ৯টি অভিযোগ আসে। এর মধ্যে অনলাইন ও টেলিফোনে পাওয়া অভিযোগের শতভাগ নিষ্পত্তি হলেও লিখিত অভিযোগের ৮টি অনিষ্পন্ন ছিল। প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, ডিসেম্বর মাসে প্রাপ্ত অভিযোগসমূহের মধ্যে সাধারণ ব্যাংকিং সংক্রান্ত অভিযোগ ছিল ১৭১টি। এরপরেই রয়েছে ঋণ ও অগ্রিম সংক্রান্ত ৬১টি, এলসির বিপরীতে আমদানি বিল পরিশোধ না করা সংক্রান্ত ৫০টি, কার্ড সংক্রান্ত ৫৮টি, নোটস এ্যান্ড কয়েনস সংক্রান্ত ১৭টি, যথাযথ সেবা না পাওয়া সংক্রান্ত ৪০টি, ফিজ এ্যান্ড চার্জেস সংক্রান্ত ১৮টি, চেক জালিয়াতি সংক্রান্ত ১টি, রেমিট্যান্স সংক্রান্ত ৫টি, ব্যাংক গ্যারান্টি সংক্রান্ত ৯টি, মোবাইল ব্যাংকিং সংক্রান্ত ৪টি ও অন্যান্য অভিযোগ ৫৭টি। এদিকে, গ্রাহক অভিযোগের সার্বিক দিক নিয়ে এফআইসিএসডি থেকে প্রতি অর্থবছরে একটি প্রকাশনা বের করা হয়। যদিও গত অর্থবছরের প্রকাশনা এখনও প্রকাশ করা হয়নি। তবে সর্বশেষ ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রকাশনা বের করা হয়। ওই প্রকাশনার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বিভিন্ন ব্যাংকের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকে ৪ হাজার ৫৩০টি অভিযোগ আসে। এর মধ্যে ২ হাজার ৩৮৪টি অভিযোগ ফোনে ও ২ হাজার ১৪৬টি অভিযোগ লিখিতভাবে করেন বিভিন্ন ব্যাংকের গ্রাহক। আর এসব অভিযোগের শতভাগ নিষ্পত্তি হয় বলে ওই প্রকাশনায় দাবি করা হয়। এর আগে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৩ হাজার ৯৩০টি, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৪ হাজার ৪৭৬ ও ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৪ হাজার ২৯৬টি অভিযোগ করেছিলেন গ্রাহক।
×