ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দর্শনার্থীদের আগ্রহে মধুমেলার সময় বেড়েছে

প্রকাশিত: ০৭:৩৩, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

দর্শনার্থীদের আগ্রহে মধুমেলার সময় বেড়েছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গাজীপুরের ফাতেমা একজন মৌ খামারি। যিনি চাষের মাধ্যমে উৎপাদিত মধু বিভিন্ন মেলায় বিক্রি ও প্রদর্শন করে থাকেন। আর এই মধু বিক্রি করে স্বচ্ছল এক উদ্যোক্তা তিনি। এ বছরও জাতীয় মৌ মেলা ২০১৮ অংশ নিয়েছেন এবং গড়ে প্রতিদিন বিক্রি করেছেন তিন থেকে চার হাজার টাকার মধু। উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে এই উদ্যেক্তা বলেন, মানুষের ক্রমেই এর প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। আর মেলায় পরিচিতি বাড়ে। কখনোই মেলায় লোকসান হয় না। মেলা ঘুরেও দেখা গেছে, বিভিন্ন মধুর স্টলে মানুষের সরগরম উপস্থিতি। দর্শনার্থীদের এই আগ্রহের কারণে বাড়ানো হয়েছে মেলার সময়ও। সোমবার জাতীয় মৌ মেলা ২০১৮ সমাপনী অনুষ্ঠানে আয়োজক কৃষি মন্ত্রণালয় মেলার সময় বাড়ানোর কথা ঘোষণা দেন। দর্শনার্থীদের আগ্রহের পাশাপাশি এ বছর মেলায় মধু বিক্রিও পূর্বের চেয়ে অনেক বেড়েছে বলেও জানান কর্মকর্তারা। এর আগে সকাল থেকেই মানুষের পদচারণায় বেশ জমজমাট ছিল মেলাস্থল ফার্মগেটস্থ আ. কা. মু গিয়াস উদ্দীন মিলকী অডিটরিয়াম। নানা বয়সী মানুষ এই মেলার এক স্টল থেকে অন্য স্টলে ঘুরে ঘুরে নানা ধরনের মধু দেখেছেন। কেউ কেউ মধুর স্বাধও পরীক্ষা করেছেন। মেলায় সরকারী-বেসরকারী ৫৪টি প্রতিষ্ঠানের ৬০টি স্টল স্থান পেয়েছে। প্রতিটি স্টলেই বিভিন্ন অঞ্চলে চাষ করা সরিষা, ধনিয়া, তিল, কালোজিরা, লিচুর মধু পাওয়া যাচ্ছে। দর্শনার্থীরা মধু পরখ করে নিজেদের প্রয়োজনীয়টি কিনে নিচ্ছেন। মেলায় একটু ছাড় দিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে বলে স্টল মালিকরা জানিয়েছেন। একাধিক মৌ খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সারাবছর মধু সংগ্রহ হলেও এই শীতকালে বেশি সংগ্রহ করা হয়। আর বেশিরভাগ মধু উৎপাদন হয় সরিষা থেকে। তাই খামারিরা তাদের বাক্স নিয়ে সরিষা মৌসুমে সারাদেশে ছড়িয়ে পরে বলে জানান। মেলায় লিচু ও সরিষা মধু চার শ’ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে যা বাহিরে আরও এক শ’ টাকা বেশি দামে বিক্রি হয় বলে জানান। এছাড়াও কালোজিরা মধু বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা কেজি আর সুন্দরবনের মধু ৬০০ টাকা কেজি বিক্রি করতে দেখা গেছে। মেলায় মধুর স্টলে পাওয়া যাচ্ছে কালোজিরার তেলও। যা মেলায় ১৬০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জের শরিফ মৌ খামারের দায়িত্বরত আব্দুর রহমান বলেন, মেলায় একটু ছাড়ে বিক্রি করছি। বেশ সাড়াও পাচ্ছি। আমাদের প্রতিদিনই কয়েক হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে। মেলায় মধু ও তেল ছাড়াও বিভিন্ন ঔষধিগুণ সংম্বলিত বিভিন্ন পণ্য পাওয়া যাচ্ছে। একই সঙ্গে মধু নিষ্কাশনের জন্য যে যন্ত্র তাও স্থান পেয়েছে। বেসরকারী কর্মজীবী হালিমা আক্তার মেলায় মধু কিনে বলেন, মধুর গুণ বলে শেষ করা যাবে না। রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় মেলা হলে এ সকল মধু আমরা পাই। নিয়মিত পাওয়া যায় বলেই মধু খাওয়ার অভ্যাস গড়েছেন তিনি। মেলায় মৌয়াল মধু, সোনারগাঁ মধু খামার, সলিড মধু, মা মধু, বেঙ্গল হানি, মিম হানি, আইওয়ান মধুসগহ নানা নামে বিভিন্ন জায়গার খামারিরা অংশ নিয়েছেন। প্রতিটি স্টলেই বেশ বেচাকেনা ও তথ্য দিতে দেখা গেছে। মা মধু স্টলের মালিক বলেন, বিভিন্ন মৌসুমে আমরা মধু সংগ্রহ করি তবে আগে সংগ্রহে সমস্যায় পরলেও এখন চাষীদের আরও স্থানীয় লোকজনও সহায়তা করে থাকে। এদিকে, সোমবার বিকেলে মেলার সমাপনী অনুষ্ঠান হয়েছে। তবে মেলা চলবে আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত। সমাপনী অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হার্টিকালচার উইংয়ের পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, মানুষের আগ্রহ আর বিক্রিও বেশ ভাল সব বিবেচনায় আধা বেলা মেলার সময় বাড়ানো হয়েছে। প্রথম বছর মেলায় বিক্রি ছিল ১০ লাখ টাকার আর এ বছর দ্বিতীয় দিনের বিকেলের মধ্যেই ১১ লাখ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। ফলে বিক্রির পরিমাণ আরও অনেক বাড়বে বলে আশা করেন তিনি। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রসারণ) মোঃ মোশারফ হোসেন বলেন, সরকারের সক্ষমতা বেড়েছে। সক্ষমতার সঙ্গে টাকা বাজেট বেড়েছে। ফলে এই ধরনের অনেক মেলাই করা যাচ্ছে। সবজি মেলা, যন্ত্রপাতি মেলা, ফুল মেলা ইত্যাদি আমরা করতে পারছি। আর মেলার মাধ্যমে মানুষ আরও ভাল জানতে পারছে সচেতনতা বাড়ছে। নতুনত্ব হিসেবে কাঁঠাল মেলা হবে বলেও সচিব জানান। তিনি আরও বলেন, আমরা পুষ্টিতেও জোড় দিচ্ছি। মধ্যম আয়ের দেশে যেতে হলে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। মধু নিয়ে আমাদের রোডম্যাপ তৈরি করে এগুতে হবে। আমরা আগামী দিনগুলোতে কতদিনের মধ্যে এই সেক্টরকে কোথায় নিয়ে যাব তা নিয়ে সবার সঙ্গে পরামর্শমূলকভাবে কাজ করতে হবে বলেও জানান তিনি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ মহসীনের সভাপতিত্বে সরেজমিন উইংয়ের পরিচালক আব্দুল হান্নান, কেআইবির মহাসচিব খায়রুল আলম প্রিন্সসহ অন্যান্যরা বক্তব্য রাখেন। পরে মেলায় অংশ নেয়া প্রতিষ্ঠানদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা পুরস্কার দেয়া হয়। অংশগ্রহণকারী স্টলগুলোর মধ্যে সরকারী পর্যায়ে প্রথম হয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, দ্বিতীয় বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) এবং তৃতীয় কৃষি তথ্য সার্ভিস। বেসরকারী পর্যায়ে প্রথম হয়েছেন, আল ওয়ান মধু, দ্বিতীয় সলিড মধু এবং তৃতীয় স্বদেশী মধু। উল্লেখ্য রবিবার জাতীয় মৌ মেলার উদ্বোধন করেন কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী। সে সময় তিনি দেশী প্রজাতির সঙ্গে বিভিন্ন মৌমাছির ক্রস করে কী ধরনের প্রজাতি আসতে পারে তা নিয়ে গবেষণার আহ্বান জানান।
×