ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

৫৭ ধারা বিলুপ্ত ॥ আইসিটি প্রযুক্তি আইন খসড়া অনুমোদন

প্রকাশিত: ০৬:০১, ৩০ জানুয়ারি ২০১৮

৫৭ ধারা বিলুপ্ত ॥ আইসিটি প্রযুক্তি আইন খসড়া অনুমোদন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের (আইসিটি) বিতর্কিত ৫৭ ধারাসহ কয়েকটি ধারা বিলুপ্তির বিধান রেখে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। তবে অপব্যবহার রোধে নতুন আইনে ৫৭ ধারাটি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া মন্ত্রিসভা জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন-২০১৮ এর খসড়া নীতিগতভাবে অনুমোদন দিয়েছে। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, নতুন আইন পাস হলে তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৪, ৫৫, ৫৬, ৫৭ ও ৬৬ ধারা বিলুপ্ত হবে। তার বদলে এসব ধারার বিস্তারিত ব্যাখ্যা করে অপরাধের প্রকৃতি অনুযায়ী শাস্তির বিধান রাখা হচ্ছে নতুন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে। প্রস্তাবিত এই আইনে জামিনযোগ্য ও জামিন অযোগ্য বেশকিছু ধারা রয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। ২০১৬ সালের ২২ আগস্ট ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়া মন্ত্রিসভার নীতিগত অনুমোদন পায়। সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালালে বা তাতে মদদ দিলে যাবজ্জীবন কারাদ- ও সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা জরিমানা করা যাবে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের সাইবার অপরাধের জন্য খসড়ায় সর্বোচ্চ ১৪ বছর জেল এবং এক কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের কয়েকটি ধারায় শাস্তির বিধান আছে, কিন্তু সেগুলো অপর্যাপ্ত। পৃথিবীর অনেক দেশেই এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ আইন আছে। পাশের দেশ ভারতেও একটি বিস্তারিত আইন আছে, তার আদলেই বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন হচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইটে বা অন্য কোন ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন, যা মিথ্যা ও অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেউ পড়লে, দেখলে বা শুনলে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হতে উদ্বুদ্ধ হতে পারেন অথবা যার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করতে পারে বা এ ধরনের তথ্যাদির মাধ্যমে কোন ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উসকানি প্রদান করা হয়, তাহলে এ কাজ অপরাধ বলে গণ্য হবে। এই অপরাধে সর্বোচ্চ ১৪ বছর ও সর্বনিম্ন সাত বছর কারাদ- এবং সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা অর্থদ-ের বিধান রয়েছে বিদ্যমান আইনে। তদন্ত কীভাবে করা হবে সেটা ডিটেইল (বিস্তারিত) করা হয়েছে, যেটা আগে ছিল না বলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় হওয়া মামলাগুলোর কী হবে- জানতে চাইলে শফিউল আলম বলেন, সেই মামলাগুলো চলতেই থাকবে, যেন ধারাটি বাতিল করা হয়নি। দেশের বিভিন্ন স্থানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার অপব্যবহার বিশেষ করে এ ধারায় সাংবাদিকদের নামে মামলার কারণে এ ধারাটির বিরুদ্ধে সমালোচনা ওঠে। ধারাটি বাতিলের দাবি ওঠে বিভিন্ন মহল থেকে। ২০১৬ সালের বছরের ২২ আগস্ট ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিলেও খসড়াটি আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আইনমন্ত্রীকে দায়িত্ব দেয়া হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, যারা কনসার্ন স্টেক হোল্ডার (সংশ্লিষ্ট সুবিধাভোগী) তাদের নিয়ে বৈঠক করে এটাকে (খসড়া আইন) আরেকটু পরিশীলিত করবেন। এ প্রেক্ষাপটে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে কয়েক দফা সভা করার পর গত বছরের ২৯ নবেম্বর এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় খসড়াটি চূড়ান্ত করা হয়। এর পরই খসড়াটি অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভা বৈঠকে পাঠিয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ। জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইনটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রস্তাব করা হয়েছে। আইনটি অধীনে একটি কর্র্তৃপক্ষ গঠন করা হবে। এটি ২২টি মন্ত্রণালয়কে সমন্বয় করে কাজ করবে। এই কর্র্তৃপক্ষের মাধ্যমে কর্মকর্তাদের দক্ষতা উন্নয়নই বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
×