ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

স্থিতিশীল, সমৃদ্ধ এশিয়া চাই

প্রকাশিত: ০৪:২১, ২৯ জানুয়ারি ২০১৮

স্থিতিশীল, সমৃদ্ধ এশিয়া চাই

জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারো কোনো প্রতিবেশী চীনের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, দুই দেশের সম্পর্ক এখন গুরুত্বপূর্ণ স্তরে রয়েছে। আমরা ইতিবাচক অগ্রগতি দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু কিছু ঝামেলা ও বাধা রয়ে গেছে। রবিবার বেজিংয়ে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি বলেন, উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচী নিয়েও আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। চীনা প্রতিপক্ষ ওয়াং ই-কে উদ্দেশ করে তারো কোনো বলেন, পৃথিবীর দ্বিতীয় ও তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হচ্ছে চীন-জাপান। এশিয়া ও বিশ্বের স্থিতিশীলতা, সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে এই দুই দেশের বিরাট দায়িত্ব রয়েছে। খবর ইয়াহু নিউজ অনলাইনের জবাবে ওয়াং বলেন, জাপানী প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের কাছ থেকে দুই দেশের সম্পর্কোন্নয়ন নিয়ে ইতিবাচক মন্তব্য আমরা পেয়েছি। কিন্তু কিছু জটিলতা পিছু ছাড়ছে না। চীন সফরে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার জোর দাবি জানিয়েছে জাপানী পররাষ্ট্রমন্ত্রী। গত বছরের আগস্টে দেশটির হোক্কাইডো দ্বীপের ওপর দিয়ে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল উত্তর কোরিয়া। সেই প্রেক্ষাপট মাথায় রেখে পিয়ংইয়ংয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ঐক্যবদ্ধভাবে তৎপরতা চালানোর ওপর জোর দেন তারো কোনো। তিনি বলেন, আমাদের কেবল দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক রক্ষার চেষ্টা করলেই চলবে না। পুরো বিশ্ব যে সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে, তা মোকাবেলায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। বিশেষ করে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে একতাবদ্ধ হতে হবে। আগামী বসন্তে জাপানের রাজধানী টোকিওতে চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে একটি ত্রিদেশীয় সম্মেলনের আয়োজনের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন কোনো। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংসহ দেশটির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে কোনোর বৈঠকের কথা রয়েছে। ২০১২ সালে পূর্ব চীন সাগরের বসতিহীন একটি দ্বীপ জাপান জাতীয়করণের ঘোষণা দিলে চীন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায়। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। ২০১৪ সালে শিনজো আবে চীন সফরে গেলে সম্পর্কের স্বাভাবিক রূপ ফিরে আসে। কিন্তু সেনকাকু দ্বীপ নিয়ে বিরোধে পারস্পরিক অবিশ্বাস তুঙ্গে উঠতে থাকে। চীন দ্বীপটিকে দিয়াউস নামে ডাকে। তাইওয়ানও দ্বীপটির মালিকানা দাবি করে আসছে। চলতি মাসের শুরুতে চীনের পারমাণবিক হামলার ক্ষমতাসম্পন্ন সাবমেরিন জাপানী জলসীমা ঘেঁষে অভিযান চালালে টোকিও ক্ষোভ প্রকাশ করে। চীনা পতাকাবাহী সাবমেরিনটিকে জাপানী জলসীমার বাইরে ভেসে উঠতে দেখা গেছে। তখন জাপানী প্রতিরক্ষামন্ত্রী শুনোরি অনোদারো বলেছিলেন, চীন একতরফা উত্তেজনা বাড়াচ্ছে। আমরা তাদের আচরণে ক্ষুব্ধ। ভবিষ্যতে এমন ঘটনা ঘটালে তৎক্ষণাৎ জবাব দেয়া হবে। চলতি মাসে তিনটি চীনের কোস্টগার্ড জাহাজের জাপানী জলসীমায় অনুপ্রবেশের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই অঞ্চলে জাপানী নৌবাহিনী টহল দিতে কিংবা অনুপ্রবেশ শনাক্ত করতে পারে কিনা, তা পরীক্ষা করে দেখতেই চীন এই জলসীমা লঙ্ঘন করেছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর জাপান প্রতিবেশী চীনের অধিকাংশ ভূমি দখল ও বর্বর গণহত্যা চালানোর পর থেকে দুই দেশের মধ্যে তিক্ত শত্রুতার রেশ রয়ে গেছে। অধিকাংশ চীনা মনে করেন, জাপান ওই গণহত্যার জন্য যথাযথ অনুশোচনা করেনি। চীনা কমিউনিস্ট পার্টি সেই অনুভূতি কাজে লাগিয়ে দেশটিতে জাতীয়তাবাদী প্রচার চালাচ্ছে। তবে যে কোন সময়ের চেয়ে বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে জোরালো সামরিক সম্পর্ক রয়েছে। পূর্ব চীন সাগরের ওই দ্বীপটিতে চীনের মালিকানা দাবির জবাবে নিজেদের অবস্থান শক্ত করার জন্য যথাযথ প্রমাণ উপস্থাপন করতে টোকিওতে জাপান একটি জাদুঘর উদ্বোধন করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গেও চীনের ইতিবাচক সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু সিউলে যুক্তরাষ্ট্রের স্থাপিত আধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থাড অপসারণের দাবি জানানোর পর বেজিং-সিউল সম্পর্কে তিক্ততা তৈরি হয়। দক্ষিণ কোরিয়া ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সরাতে অস্বীকার করে। কিন্তু এই ব্যবস্থা আরও সম্প্রসারিত না করার শর্তে চীন তার অবস্থান নরম করে।
×