ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মনিরুল ইসলাম মনি

অস্থির সময়ে রোনাল্ডো-নেইমার

প্রকাশিত: ০৬:২১, ২৪ জানুয়ারি ২০১৮

অস্থির সময়ে রোনাল্ডো-নেইমার

সময়ের অন্যতম সেরা দুই তারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো ও নেইমার তাদের বর্তমান ক্লাবে ভাল সময় অতিবাহিত করছেন না। রোনাল্ডো স্প্যানিশ ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদে ও নেইমার ফরাসী পরাশক্তি প্যারিস সেইন্ট জার্মেইনে (পিএসজি) বিভিন্ন কারণে অস্বস্তির সময় পার করছেন। মেসির ছায়া থেকে বেরিয়ে আসতে বার্সিলোনা থেকে পিএসজিতে এসেছেন ব্রাজিলিয়ান তারকা নেইমার। সেখানে গিয়ে এখন পর্যন্ত খুব বেশি সুবিধা করে উঠতে পারেননি। ১৯৯ মিলিয়ন ইউরোর বিশ্বরেকর্ডে প্যারিসে পাড়ি দেওয়ার পর খুব বেশি ইতিবাচক পরিবর্তন আসেনি নেইমারের ক্যারিয়ারে। বরং প্যারিস সেইন্ট জার্মেইনে যাওয়ার পরপরই এডিনসন কাভানির সঙ্গে অন্তর্কোন্দলে জড়িয়ে বেশ সমালোচিত হয়েছেন। এখন আবার যোগ হয়েছে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। বার্সিলোনার সঙ্গে চুক্তি ভঙ্গের শাস্তি হিসেবে ১০০ মিলিয়ন ইউরো গুনতে হবে। ২০১৩ সালে বার্সিলোনায় যোগ দেওয়ার পর ক্লাবটির সভাপতি জোসেফ মারিয়া বার্টোমেউ নিশ্চয়তা প্রদান করেন যে, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড ১০০ মিলিয়ন ইউরো আয় করবেন। পাশাপাশি চুক্তিতে এটাও উল্লেখ ছিল, যদি তিনি চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করেন, তবে তাঁকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। প্রথমে রিপোর্টে জরিমানার পরিমাণ ৪০ মিলিয়ন উল্লেখ করলেও সম্প্রতি স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যমে বলা হয়, নেইমারকে ১০০ মিলিয়ন ইউরো জরিমানা গুনতে হবে। আগামী নবেম্বের মামলার অংশ হিসেবে চুক্তির কাগজপত্র ব্রাজিলিয়ান কর্তৃপক্ষের কাছে প্রদান করা হবে। এসব কারণে সম্প্রতি নেইমারের রিয়াল মাদ্রিদে যাওয়ার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। নেইমার নাকি জানিয়েছেন, রোনাল্ডো বার্নাব্যুত ছাড়লেই তিনি রিয়ালে যাবেন। এরপর থেকে সি আর সেভেনের রিয়াল ছাড়ার গুঞ্জন আরও জোরালো হয়েছে। পাশাপাশি পর্তুগীজ তাকরার সঙ্গে টানাপড়েন চলছে গ্যালাক্টিকোদের। যে কারণে শোনা যাচ্ছে, রোনাল্ডোর সঙ্গে চুক্তি আর নবায়ন নাও করতে পারে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নরা। নতুন করে চুক্তিটা যদি হয়ে যায়, তাহলে পর্তুগীজ অধিনায়কই হবেন সবচেয়ে বেশি বেতন পাওয়া ফুটবলার। অবশ্য সে সম্ভাবনাটা খুবই ক্ষীণ। গত বছরের শেষভাগে রেকর্ড পাঁচবারের মোত ফিফা ব্যালন ডি’অর জেতা রোনাল্ডো বিশ্বাস করেন, তাঁর বেতনটা আরও বেশি প্রাপ্য। সবচেয়ে বেশি বেতন পাওয়া ফুটবলারের তালিকায় তিনি আছেন পঞ্চম স্থানে। ইউরো কাপ জেতা এই ফুটবলারের বার্ষিক আয় ২১ মিলিয়ন ইউরো। বার্সিলোনা ও আর্জেন্টাইন সুপারস্টার লিওনেল মেসি কিংবা ব্রাজিলিয়ান পিএসজি তারকা নেইমার ডি সিলভা এ মুহূর্তে বেশি বেতন পাওয়া ফুটবলারের তালিকায় আছেন রোনাল্ডোর উপরে। মেসির বার্ষিক আয় ৫০ মিলিয়ন ইউরো আর নেইমার প্রতিবছর পান ৩৬ মিলিয়ন ইউরো। মাঠের ফুটবলে দুর্বিষহ সময় পার করা রিয়াল মাদ্রিদকে এখন মুখোমুখি হতে হচ্ছে মাঠের বাইরের সমস্যায়ও। কিন্তু তারা যেভাবে সমস্যার মোকাবিলা করছে, সেটা মোটেও ফলপ্রসূ হওয়ার কথা নয়। এরই মধ্যে স্পেনের বড় একটি সংবাদমাধ্যম বলেছে, রোনাল্ডো নাকি বদলে ফেলছেন দলটাই! সাবেক ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়েই আবার মাঠে নামতে পারেন সিআর সেভেন। শোনা যাচ্ছে, মাদ্রিদ সভাপতি ফ্লোরেন্টিনো পেরেজের ওপরও বেশ অসন্তুষ্ট সি আর সেভেন। চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জেতার পর পেরেজ তাঁকে কথা দিয়েছিলেন, চুক্তি তো নবায়ন হবেই এবং টাকার অঙ্কটাও হবে আগের থেকে অনেক বেশি। তবে বাস্তবে ঘটছে না তার প্রতিফলন। সবমিলিয়ে রোনাল্ডো ও নেইমার তাদের বর্তমান ক্লাবে বেশ অস্বস্তিতেই আছেন। সান্টিয়াগো বার্নাব্যু ছাড়লে যাবেন কোথায় রোনাল্ডো? এটাও মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন। এক্ষেত্রে সাবেক ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে ফেরার গুঞ্জন শোনা যায় প্রায়শই। কিন্তু শোনা যাচ্ছে, ইংলিশ পরাশক্তিতেও নাকি যাওয়া হবে না সি আর সেভেনের। সেখানকার দরজা নাকি বন্ধ পর্তুগাল অধিনায়কের জন্য! ২০০৯ সালে স্প্যানিশ পরাশক্তিতে যোগ দেয়ার পর গত নয় বছরের মধ্যে সবচেয়ে বাজে মৌসুম কাটাচ্ছেন রোনাল্ডো। অথচ যে দল এখন এত ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে, তারাই কি না গত দুই বছর বিশ্বজয় করে ফিরেছে। জিতেছে আটটি শিরোপা। ব্যক্তিগত অর্জনেও সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন। একের পর এক সাফল্য ঘরে তুলে নিয়েছেন সি আর সেভেন। এরই মধ্যে বার কয়েক রিয়াল কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিরোধ বেধেছিল রোনাল্ডোর। সে সবই পারিশ্রমিক নিয়ে। বিশ্বসেরা হওয়ার সুবাধে রোনাল্ডো যে সুবিধা চাইতেন, তা পুরোপুরি না পেলেই মাঝে-মধ্যে হুঙ্কার দিতেন, রিয়াল ছেড়ে চলে যাবেন। কিন্তু কোথায় যাবেন? তা কেউ না বললেও, পুরনো ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কিন্তু সব সময়ই সি আর সেভেনের জন্য একটি দরজা খোলা রাখতো। মাঝে-মধ্যে রোনালাল্ডোও বলে বেড়াতেন, তিনি ম্যানইউকে খুব মিস করেন। এবারও অনেকের ধারণা ছিল, রিয়াল মাদ্রিদে কোন ঝামেলা হলেই হয়তো ধরা বাধা ম্যানইউকে বেছে নেবেন এবং খুব সহজেই সেখানে চলে আসবেন। কিন্তু এবার সম্ভবত সেই দরজাও রোনাল্ডোর জন্য বন্ধ হয়ে গেলো। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে হয়তো আর চাইলেও আসতে পারবেন না তিনি। কার আর্সেনাল থেকে ইতিমধ্যেই ম্যানইউতে আলেক্সিস সানচেজের নাম লেখানো প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেছে। এ বিষয়ে আর্সেনাল-ম্যানইউ ঐকমত্য হয়ে গেছে প্রায়। হেনরিক মাখাটারিয়ানের লন্ডনে আসাও প্রায় নিশ্চিত। বার্ষিক ১৬ মিলিয়ন ইউরো পারিশ্রমিকে সানচেজ নাম লেখাচ্ছেন রেড ডেভিলসদের দলে। সানচেজের ম্যানইউতে আসা মানেই হলো, রোনাল্ডোকে ম্যানইউর কেনার ব্যাপারে সব ধরনের পরিকল্পনার ইতি ঘটা। এমনকি ম্যানইউ কোচ জোশে মরিনহোরও এ ধরনের কোন ইচ্ছা নেই। আর বর্তমান ক্লাব রিয়ালেও দারুণ ঝামেলায় আছেন রোনাল্ডো। ক্লাবটির সমর্থকরাই এখন আর চান না তিনি দলে থাকুন। চলতি মৌসুমে মাত্র চার গোল করেছেন। রোনাল্ডোর নামের পাশে এই পরিসংখ্যান একেবারেই বেমানান। স্বাভাবিকভাবে এমন ফটবলারকে কেন মাথায় তুলে রাখবেন সমর্থকেরা। তাই মাদ্রিদ শহরে রব উঠেছে, রোনাল্ডোকে আর প্রয়োজন নেই! সম্প্রতি স্প্যানিশ পত্রিকা এএস একটি জরিপ চালিয়েছে রোনাল্ডোকে নিয়ে। মাদ্রিদের সমর্থকরা রোনাল্ডোকে ক্লাবে দেখতে চান, নাকি চান না? দুদিন পরে ঘোষিত জরিপের ফলাফলে রোনাল্ডোর ধরনের পরাজয় হয়েছে। জরিপে অংশ নেওয়া ১ লাখ ২৫ হাজার জনের মধ্যে প্রায় ৬৮ ভাগ মানুষ রোনাল্ডোকে মাদ্রিদে দেখতে চান না বলে মত দিয়েছেন। মাত্র ৩২ ভাগ মানুষ চান রোনাল্ডো বার্নাব্যুতে থাকুক। অথচ এই মৌসুমের আগেও রোনাল্ডো ছিলেন দলের প্রাণভোমরা। শেষ মৌসুমেও করেছিলেন ৪৩ গোল। এর ২০১৪-১৫ ও ২০১৩-১৪ মৌসুমে যথাক্রমে ৬১ ও ৫১ গোল করে হয়েছিলেন সর্বোচ্চ গোলদাতা। অথচ সময়ের কি নির্মম পরিহাস, সেই রোনাল্ডো এখন ঘরে-বাইরে সবখানে অস্থির সময় অতিবাহিত করছেন।
×