ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আমনে পোকার আক্রমণ ॥ দুশ্চিন্তায় কৃষক

প্রকাশিত: ০৪:৩৬, ২৯ অক্টোবর ২০১৭

আমনে পোকার আক্রমণ ॥ দুশ্চিন্তায় কৃষক

স্টাফ রিপোর্টার, গলাচিপা ॥ গলাচিপা, রাঙ্গাবালী ও দশমিনাসহ জেলার বিভিন্ন এলাকার রোপা আমন ক্ষেতে বাদামী গাছফড়িং পোকার আক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। এরই মধ্যে কোন কোন গ্রামের ক্ষেতে পোকার আক্রমণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। পোকার আক্রমণে ব্যাপক ফসলহানির আশঙ্কায় কৃষক দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। পোকার আক্রমণ প্রতিরোধে স্থানীয় কৃষি বিভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে। গলাচিপা ও রাঙ্গাবালী উপজেলায় এবার স্থানীয় ও উফশী মিলিয়ে ৬৯ হাজার হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধানের চাষ হয়েছে। জানা গেছে, গত ১৯ অক্টোবর থেকে একনাগাড়ে চারদিন প্রবল বর্ষণ হয়েছে। এরপর থেকেই বিভিন্ন গ্রামের রোপা আমন ক্ষেতে বাদামী গাছফড়িং পোকার আক্রমণ শুরু হয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও এ কথা বলেছেন। চরবিশ্বাস ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তোফাজ্জেল হোসেন বাবুল মুন্সি জানান, তার ইউনিয়নের উত্তর চরবিশ্বাস, দক্ষিণ চরবিশ্বাস, পূর্ব চরবিশ্বাস, চরআগস্তি, চরমায়া ও চরবাংলাসহ কয়েকটি গ্রামে এরই মধ্যে অন্তত তিন হাজার হেক্টর জমিতে বাদামী গাছফড়িং পোকার আক্রমণ হয়েছে এবং ব্যাপক ফসলহানির আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে। চরমহিউদ্দিন গ্রামের কৃষক নাসির গাজী জানান, কেবল ওই গ্রামে এরই মধ্যে যে পোকার আক্রমণ হয়েছে, তাতে অন্তত তিন হাজার মণ ধান নষ্ট হয়ে গেছে। গলাচিপা ইউনিয়নের বোয়ালিয়া গ্রামের সাবেক ইউপি মেম্বার মোঃ ইদ্রিসুর রহমান জানান, তার ৬০ শতক জমিসহ কয়েকজন কৃষকের অন্তত ১০ একর জমিতে পোকার আক্রমণ ঘটেছে। কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ দুলাল চৌধুরী জানান, পার্শ্ববর্তী দশমিনা উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে তার ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে পোকা ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। রাঙ্গাবালী উপজেলার বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নের মৌডুবী, কাছারীকান্দা, ছাতিয়ানপাড়া, ২২ নম্বর, কাজীকান্দা, চরমোন্তাজ ইউনিয়নের বালিয়াবুনিয়া, উত্তরচরমোন্তাজ, চরআন্ডাসহ বিভিন্ন গ্রাম থেকেও একইভাবে পোকার আক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। দশমিনা উপজেলার আলীপুরা, চাঁদপুরা, বাঁশবাড়িয়া, রনগোপালদীসহ বিভিন্ন এলাকায় পোকার আক্রমণের খবর এসেছে। পোকা আক্রান্ত বকুলবাড়িয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের আমন ক্ষেত সরেজমিনে ঘুরে এসে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল মান্নান জানান, পোকার আক্রমণ হয়েছে, তবে এখনও তা ভয়াবহ আকার ধারণ করেনি। তারপরও আগাম সতর্কতা হিসেবে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে কৃষি বিভাগের স্থানীয় সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সব ধরনের ছুটি বাতিল করে মাঠে কৃষকদের পাশে যেতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দিনাজপুর ভরসা ‘জীবন্ত পার্চিং’ স্টাফ রিপোর্টার দিনাজপুর থেকে জানান, পোকার আক্রমণ থেকে আমন ধানের ক্ষেত রক্ষায় দিনাজপুর অঞ্চলের ৩ জেলার কৃষকের ভরসা শুধুই পরিবেশবান্ধব জীবন্ত পার্চিং ব্যবস্থা। ধান ক্ষেতের ভেতর বিক্ষিপ্তভাবে লাগানো হয়েছে আফ্রিকান জাতের ধৈঞ্চা। যাতে পাখি বসে ক্ষতিকর পোকাগুলোকে খেয়ে ফেলে। এতে একদিকে যেমন পোকার আক্রমণ কমছে, অন্যদিকে ধান ক্ষেতে ধৈঞ্চার গাছ থাকায় জমিতে নাইট্রোজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। ফলে পরিবেশ দূষণকারী কীটনাশকের ব্যবহার যেমন কমছে তেমনি ইউরিয়া সারের ব্যবহারের ওপরও চাপ কমছে। কৃষকরা জানান, গত ৫ বছর থেকে তারা আমন ক্ষেতে জীবন্ত পার্চিং ব্যবহার শুরু করেছে। শুরুতেই এ ব্যবস্থা কৃষকের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বলেন, জীবন্ত পার্চিং থাকায় পাখি বসে পোকাগুলো খেয়ে ফেলে তাই ক্ষেতে পোকার আক্রমণ হয় না। পরিবেশবান্ধব এ পার্চিং প্রথমে কৃষকরা গ্রহণ করতে না চাইলেও বর্তমানে উপকার পাওয়ায় বীজের জন্য কৃষকরা আগাম বলে রেখেছেন।
×