বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পরিচালিত যে কোন যানবাহনেরই চলন-সক্ষমতা থাকার একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা রয়েছে। সেই সময়সীমাই ইকোনমিক লাইফ। যানবাহন পরিচালনাকারী কোন কর্তৃপক্ষ যানবাহন ক্রয় ও রক্ষণাবেক্ষণে পুঁজি লগ্নি করেন এবং নির্দিষ্ট সময়ের ভেতরেই কাক্সিক্ষত মুনাফা তুলে নেন। কেউ যদি মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ খাইয়ে রোগীকে সুস্থ করতে চান, তবে রোগীর মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে। একই কথা খাটে মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহনের ক্ষেত্রেও। লক্কড়-ঝক্কড় বডিকে মেরামত করা যায় কিন্তু আয়ুষ্কাল পেরুনো গাড়ির ইঞ্জিন তো আর রঙের প্রলেপ দিয়ে নতুনের মতো করে তোলা যায় না। ওই ইঞ্জিন দিয়ে পুনরায় যানবাহন চালানো হলে সেটি স্বাভাবিকভাবেই বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। সেই যান অটোরিক্সাই হোক বা বাস-মিনিবাসই হোক। অটোরিক্সার মতো ছোট বাহনের বেলায় আবার চেসিস না বদলে নতুন ইঞ্জিন সংযোজনও হয়ে উঠতে পারে বিপজ্জনক। এক শ্রেণীর অসাধু গাড়িমালিক ঠিক এ ধরনের কাজই করতে চান। ফাঁকি দিয়ে অপকর্মটি করতে সক্ষম না হলে, অর্থাৎ সড়ক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ কঠোর আইন অনুসরণ করলে মালিকরা অন্যায্য দাবি তোলেন। এটিকে অবশ্য দাবি না বলে আবদার বলাই সঙ্গত।
এটা অনেকেই মানতে চান না যে, প্রতিটি যানবাহনেরই নির্দিষ্ট আয়ু বা ইকোনমিক লাইফ রয়েছে। এই আয়ু ফুরিয়ে যাওয়া মানে সেই যানবাহনের রাস্তায় চলাচলে অনুপযুক্ততা তৈরি হওয়া। ফিটনেসবিহীন অর্থাৎ চলাচলের উপযুক্ততা হারিয়ে ফেলা যানবাহন গায়ের জোরে চালানো হলে যাত্রীরা ঝুঁকির মুখে পড়ে। ছলে-বলে কৌশলে আইনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে অধিক মুনাফা লাভের আশায় যেনতেনভাবে ফিটনেসের ভাব করে অর্থাৎ রঙচঙ এবং কিছু সারাই করে বডির চেহারা বদলে সেই আয়ু-ফুরানো যানবাহন রাস্তায় নামায়। দেশে সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধির একটি কারণ এই অনুপযুক্ত যানবাহনের আধিক্য। দেশে বছরে কমপক্ষে ১২ হাজার থেকে ১৫ হাজার সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। বেশিরভাগ সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী আনাড়ি চালক ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ)-এর দুই বছর আগের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে ন্যূনতম ২৫ শতাংশ গাড়ি চালানো হচ্ছে বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়াই।
ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে চলাচলরত সিএনজিচালিত অটোরিক্সার পুরনো ইঞ্জিন ও গ্যাস সিলিন্ডার প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে ইকোনমিক লাইফ (আয়ুষ্কাল) ৬ বছর বৃদ্ধির দাবি করেছেন মালিকরা। সিএনজি অটোরিক্সার মতো হাল্কা এবং সড়কে অতিরিক্ত সময় ধরে চলাচলকারী যানের ক্ষেত্রে পনেরো বছরই যথেষ্ট সময় বলে মনে হয়। ইঞ্জিন আর সিলিন্ডার বদলালেই কি সেটি অতিরিক্ত ছয় বছর চলাচলের উপযুক্ত হয়ে উঠবে! অধিক মুনাফালোভই এমন অপরিণামদর্শী চিন্তার কারণ। ইকোনমিক লাইফ পেরুনো বাতিল অটোরিক্সা চালালে কী ক্ষতি হবে সেটি চালক তথা যানবাহনের শ্রমিকরা সবচেয়ে ভাল জানেন। তাই এবার তারা বেঁকে বসেছেন। এটি সুলক্ষণ। শ্রমিকরা বেআইনী কিছুতে নিজেদের জড়াতে চাইছেন না। মালিকপক্ষের দাবি অনুযায়ী সিএনজিচালিত অটোরিক্সার আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি করলে তা মোটরযান আইনের লঙ্ঘন হবে বলে দাবি করেছেন তারা। বুধবার ঢাকা জেলা অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়ন প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন।
বিআরটিএ মালিকদের এই অন্যায্য দাবি মেনে নেবে না। কর্তৃপক্ষ জনস্বার্থ পরিপন্থী, মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ এবং মোটরযান আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হবে এমন কোন কার্যক্রমের অংশীদার হবে না- এটাই প্রত্যাশিত।