
ছবি: জনকণ্ঠ
টেকনাফে দালালচক্র এনজিও’র মিটিং, প্রশিক্ষণ কিংবা ‘চাকরির সুযোগ’ দেখিয়ে স্থানীয় যুবক ও কিশোরদের টার্গেট করছে। পরে কৌশলে পাচার করে দিচ্ছে মালয়েশিয়ার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে। এইসব দালালচক্র মূলত অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল পরিবারকে টার্গেট করে, যাদের সামনে ভালো ভবিষ্যৎ ও উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখানো হয়।
সম্প্রতি টেকনাফের হোয়াইক্যং উনচিপ্রাং এলাকার শামসুল আলমের ছেলে রিদুয়ান, মৃত মোক্তার আহমদের ছেলে রাসেল ও মুহাম্মদ হোসেনের ছেলে দেলোয়ার—এই তিন কিশোরকে এনজিওর মিটিংয়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে টাকা দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে দালালরা প্রথমে টেকনাফের নির্দিষ্ট এক এলাকায় জড়ো করে। সেখান থেকে জোরপূর্বক মালয়েশিয়া পাঠানোর কথা বলে ইঞ্জিনচালিত বোটে তুলে দেওয়া হয়। এরপর থেকে ওই তিন কিশোরের আর কোনো খোঁজ মেলেনি। ভুক্তভোগী পরিবারের সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য উঠে আসে।
সংবাদ সম্মেলনে ভিকটিম দেলোয়ারের মা রোকেয়া বেগম বলেন, মৃত মুহাম্মদ হোছনের ছেলে আবুল কালাম, শামসুল আলমের ছেলে ইব্রাহীম, ছৈয়দ হোছাইন মিন্টুর স্ত্রী রেহেনা আক্তার, মৃত কালাম হোছাইনের ছেলে নুর হোছাইন, মৃত নজুম উদ্দিনের ছেলে জসিম উদ্দিন ও জিয়া উদ্দিন বাবুল, নুরুল হকের ছেলে নুর মুহাম্মদ, মৃত শফি আহমদের ছেলে আব্দুল হামিদসহ একটি দালালচক্র মিলেই কিশোরদের পাচার করে দেয়। পরবর্তীতে সন্তানদের ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলে জনপ্রতি দুই লাখ টাকা করে মোট ছয় লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি। টাকা নেওয়ার পরও সন্তানদের না পেয়ে দালালদের বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় অভিযোগ দায়ের করলে ভুক্তভোগী পরিবারের উপর হামলা চালায় দালালচক্র।
অবশেষে নিরুপায় হয়ে ভিকটিম দেলোয়ারের পিতা মুহাম্মদ হোসেন বাদী হয়ে মানবপাচারের অভিযোগে ৮ জনের বিরুদ্ধে কক্সবাজার মানবপাচার দমন ট্রাইব্যুনালে (৩) একটি মামলা দায়ের করেন (মামলা নম্বর- সিপি-১৪৬/২০২৫)। অপরদিকে আরেক ভিকটিম রাসেলের মা বাদী হয়ে একই আদালতে একই ধরনের ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন (মামলা নম্বর-১৫২/২০২৫)। আদালত উভয় মামলাই আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন।
মামলার বাদী মুহাম্মদ হোসেন জানান, মামলা করার পর থেকে দালালচক্র বারবার আমাদের উপর হামলা চালিয়েছে। এক পর্যায়ে আমাকে মারধর করে মাছ বিক্রির ৫০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। ওই পরিকল্পিত হামলায় মৃত আব্দুস সাত্তারের ছেলে শামসুল আলম, মৃত লাল মোহাম্মদের ছেলে মোহাম্মদ হোসেন, শামসুল আলমের স্ত্রী আজিজা ও ভিকটিম দেলোয়ারের মা রোকেয়া বেগম আহত হন। আহতদের মধ্যে শামসুল আলমের অবস্থা আশঙ্কাজনক এবং তিনি এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ, দালালচক্র নিয়মিত মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে আমাদের একটাই দাবি—সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে মানবপাচারকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক।
মুমু ২