ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রোহিঙ্গা সঙ্কট

ঢাকাকে দিল্লীর অবস্থান ব্যাখ্যা

প্রকাশিত: ০৮:৩৫, ৬ অক্টোবর ২০১৭

ঢাকাকে দিল্লীর অবস্থান ব্যাখ্যা

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ দিল্লী সফররত বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ভারতের পররাষ্ট্র সচিব এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে চলমান রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে বিশদ আলোচনা হয়েছে। খবর বিবিসির। একই দিন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সঙ্গেও আলাদাভাবে বৈঠক করেন শহীদুল হক। সেই বৈঠকেও চলমান রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। গত ২৫ আগস্ট থেকে যখন বাংলাদেশে নতুন করে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ঢল নামা শুরু হয়, তারপর দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিবের মধ্যে এই প্রথম মুখোমুখি বৈঠক হয়। বৃহস্পতিবারের বৈঠক শেষে কোন পক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে সংবাদমাধ্যমকে ব্রিফ না করলেও বিবিসি জানতে পেরেছে, বৈঠকে আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল প্রধানত দুটো – প্রথমত, এ মাসের শেষদিকে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের বাংলাদেশ সফর, আর দ্বিতীয়টি অবশ্যই রোহিঙ্গা সঙ্কট। বাংলাদেশ-ভারত জয়েন্ট কনসাল্টেটিভ কমিশনের চতুর্থ বৈঠকে যোগ দিতে সুষমা স্বরাজের এ মাসের ২৩ তারিখ নাগাদ ঢাকায় আসার কথা আছে। সেই সফরের গ্রাউন্ড ওয়ার্ক করতে দুই সচিব নিজেদের মধ্যে আলোচনা সেরেছেন। তবে বৈঠকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ ছিল রোহিঙ্গা সঙ্কট। মাস দেড়েক আগে যখন এই সঙ্কট নতুন করে শুরু হয়, তার প্রথম পর্যায়ে কিন্তু ভারতের ভূমিকা বাংলাদেশকে বেশ হতাশ করেছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার দুই পররাষ্ট্র সচিবের মুখোমুখি বৈঠকে সেই অনাস্থা বা ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে নেয়ার চেষ্টা হয়েছে বলেই আভাস পাওয়া যাচ্ছে। রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে বৈঠকে কোন সুনির্দিষ্ট আশ্বাস না মিললেও ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানিয়েছেন, তারা এ ব্যাপারে মূলত তিনটি বিষয় বাংলাদেশের কাছে তুলে ধরেছেন। এক. মিয়ানমার ও বাংলাদেশ উভয়ই ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী- দুজনের সঙ্গেই তাদের সম্পর্ক খুব ভাল। ফলে এক দেশের পক্ষ নিয়ে অন্য দেশের প্রতি ভারত কিছুতেই আক্রমণাত্মক হতে পারবে না। তা সত্ত্বেও ভারত কিন্তু চুপচাপ বসে নেই, নেপথ্যে কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে তারা মিয়ানমারের সঙ্গে ঠিকই আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন - রাখাইন প্রদেশে সব ধরনের হিংসা বন্ধ করাটা যে মিয়ানমারের স্বার্থেই প্রয়োজন সেটাও তাদের বোঝানোর চেষ্টা চলছে। দুই. এই সঙ্কটের ‘মানবিক দিক’টা এ্যাড্রেস করতে ভারত তাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছে। তার অংশ হিসেবেই শুরু হয়েছে অপারেশন ইনসানিয়াত- যাতে দিনকয়েক আগে প্রচুর পরিমাণ ত্রাণ নিয়ে চট্টগ্রামে উড়ে গিয়েছিল ভারতীয় বিমানবাহিনীর স্পেশাল এয়ারক্রাফট। এরপর সমুদ্রপথেও পাঠানো হয়েছে হাজার টনেরও বেশি রসদপত্র -সেই ত্রাণবাহী জাহাজও বাংলাদেশে পৌঁছতে চলেছে। তৃতীয়ত ভারত বাংলাদেশকে এটাও পরিষ্কার করে দিয়েছে যে শরণার্থীদের ফেরত নিতে মিয়ানমারকে রাজি করাতে ভারত একা কিছুই করতে পারবে না- কারণ এর জন্য চাই আন্তর্জাতিক স্তরে একটা সম্মিলিত কূটনৈতিক প্রয়াস। এ কারণেই বাংলাদেশকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে, আন্তর্জাতিক মহলে যারা রোহিঙ্গা প্রশ্নে মিয়ানমারকে জোরাল সমর্থন জানাচ্ছে- সেই চীন বা রাশিয়ার সঙ্গেও আলাদাভাবে কথা বলতে, যাতে তারাও মিয়ানমারের ওপর তাদের প্রভাবটাকে কাজে লাগাতে পারে।
×