ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সন্তান খেতে না চাইলে

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ৩ অক্টোবর ২০১৭

সন্তান খেতে না চাইলে

ছেলেমেয়ের সমস্যা মানেই কিছু মা-বাবা মনে করেন, সে ঠিকমতো খেতে চায় না বা পড়তে চায় না। সে যদি ঠিকমতো খায়, লেখা পড়ায় মনোযোগী থাকে তা হলে তার আচরণ ও মানসিক সমস্যাকে কোন সমস্যা বলেই মনে করেন না। অথচ স্বাভাবিক ভাবেই সন্তানের শারীরিক অসুস্থতা, একটুখানি সর্দি ও গা-গরম মা-বাবাকে খুব বেশি চিন্তিত করে তোলে। ডাক্তার না দেখানো পর্যন্ত অথবা সারিয়ে না তোলা পর্যন্ত কেউই নিশ্চিন্ত হতে পারেন না। তবে এখন অনেক মা-বাবা ছেলেমেয়ের মানসিক বিষয় নিয়েও বেশ সচেতন হয়েছেন। তাঁরা সন্তানের ছোট ছোট আচরণ সমস্যাকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন, অনেকে সমস্যার শুরুতেই মনোবিজ্ঞানীর শরণাপন্ন হচ্ছেন। সন্তানের মঙ্গল চিন্তা করে তারা অনেকেই ভুল ধারণা, কুসংস্কার ছেড়ে বাস্তব জগতে বেরিয়ে এসেছেন। মানসিক সমস্যা এখন আর লজ্জার কিছু নয় বরং এটি খুবই সাধারণ ও সামগ্রিক বিষয় মাত্র। পুষ্টিকর খাবার : অনেক মা-বাবা মনে করেন কেবলমাত্র ভাল ভাল পুষ্টিকর খাবার খেলেই ছেলেমেয়ের সব ধরনের মানসিক ও শারীরিক বিকাশ সুষ্ঠুভাবে হবে এবং সব ধরনের সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। তাঁদের এই বদ্ধমূল ধারণা রয়েছে যে, কেবলমাত্র দুধ, ডিম, মাছ-মাংস, ফল-মূল, ফাস্টফুড, জুস-ড্রিংস ও অনেক দামী খাবার বেশি করে খাওয়ালেই সন্তানের বুদ্ধি বাড়ে, দ্রুত লেখাপড়া শিখে। আসলে এটি নিতান্তই অমূলক একটি ধারণা যার কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। ছেলেমেয়েরা যখন কোন কিছু বোঝে না, কিছু শিখতে পারে না, পড়তে চায় না বা আচরণগত কোন সমস্যা করে তখন অনেক বেশি পুষ্টিকর ও দামী খাবার খাইয়েও কোন লাভ হয় না। পুষ্টিকর খাবারের সঙ্গে আরও আনুসঙ্গিক অনেক কিছুই প্রয়োজন। শিশুর জন্মগত বুদ্ধিমেধা, সুসংহত আবেগ, আচার-আচরণ, কথা মান্য করার সু-অভ্যাস গঠন এবং পারিবারিক, পারিপার্শ্বিক পরিবেশ অনেক গুরুত্ব বহন করে। আমাদের মতো দরিদ্র দেশে আশিভাগ মানুষই দুধ, ডিম, মাংস ও অনেক দামী খাবার খাওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত। এই আশিভাগ মানুষের সবাই কিন্তু বুদ্ধি ও মেধায় পিছিয়ে নেই, তারা নিজের সব কাজ নিজে করে নিতে পারে। অনেকে আবার অভাবে থেকেও লেখাপড়ায় খুব ভাল করছে, জিপিএ ফাইভ পাচ্ছে। এমনকি সর্বোচ্চ ডিগ্রী লাভেও সমর্থ হচ্ছে। যা তার দরিদ্র অশিক্ষিত মা-বাবার জন্য অকল্পনীয় বিষয় ছিল। অথচ সচ্ছল পরিবারের অনেক সন্তানের মধ্যেই বুদ্ধিমেধা আবেগ ও আচরণে তীব্র সমস্যা রয়েছে। যারা নিয়মিত পুষ্টিকর ও দামী খাবার খেয়ে থাকে, তাদের কারও মধ্যে আবার ইচ্ছাকৃত লেখাপড়া না করার প্রবণতাও দেখা যায়। খাদ্যাভ্যাস গঠন : সন্তান খাচ্ছে না বলে মা-বাবার অধিক দুচিন্তা করা মোটেই ঠিক নয়। শিশু খেতে না চাইলে তাকে কখনই জোর করে কোন খাবার খাওয়ানো উচিৎ নয়। যখন শিশুর ক্ষুধা লাগবে, তখন সে নিজেই চেয়ে নিয়ে যাবে। এ জন্য তার পর্যাপ্ত ক্ষুধা লাগার জন্য, তাকে যথেষ্ট সময় পর্যন্ত সুযোগ দিতে হবে। বারবার সামনে খাবার পরিবেশন করলে, শিশুর মনে খাবারের প্রতি অনিহা সৃষ্টি হতে পারে। ফলে টিভি দেখিয়ে, জোর করে খাওয়ানো ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না। মা-বাবা ও পরিবারের সদস্যগণ শিশুকে নিজ হাতে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে উৎসাহ দেবেন। ১ বছর বয়স থেকেই তাকে অবশ্যই ঘরের তৈরি সাধারণ খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। শিশুর বয়স ২/৩ বছর হলেই তাকে নিজ হাতে সব ধরনের খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করতে হবে। নিজ হাতে খাবার নিয়ে একা একা খাওয়া শিখলে, সে জীবনের শুরুতেই আত্মনির্ভরশীল হতে শিখবে। ফলে সন্তানকে নিয়ে ছোট ছোট বিষয়ে অহেতুক দুচিন্তা করা থেকে রক্ষা পাবেন। খাদ্যের বিরূপ প্রভাব : ছেলেমেয়েকে শৈশবকাল থেকে ফাস্টফুড, জাঙ্ক ফুড থেকে বিরত রাখতে হবে। সবসময় মাংস, ড্রিংকস, জুস, চিপস বাইরের খাবার খাইয়ে অভ্যাস করলে, সে ঘরের তৈরি সাধারণ খাবারের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। যার ফলে তার মধ্যে হাইপার একটিভিটি, অতিরিক্ত অস্থিরতা ও অন্যান্য অনেক ধরনের মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। আচরণ সমস্যার রোগীদের অনেক সময় বারবার খাবার দিয়ে আচরণ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হয়, এতে অবশ্য হিতে বিপরীত হয়ে থাকে। নির্দেশিত কাজগুলো ঠিকমতো করার চেষ্টা করলে সন্তানের খাওয়া নিয়ে মা-বাবার দুশ্চিন্তা দূর হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে শুধু খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করে শিশু-কিশোরদের মধ্যে অনেকগুলো ভাল অভ্যাস গড়ে তোলা সম্ভব হতে পারে ও তাদের অনেক বিরূপ আচরণ নিয়ন্ত্রণ করাও সহজ হতে পারে। সন্তানের জন্য সমস্ত চেষ্টা সঠিকভাবে করার পরও যদি তার সমস্যা থেকেই যায়, তাহলে অবশ্যই একজন দক্ষ মনোবিজ্ঞানীর কাছে সম্পূর্ণ ওষুধবিহীন মনোবৈজ্ঞানিক চিকিৎসা নেয়া প্রয়োজন। মনোবিজ্ঞানী উম্মে কুলসুম কলি মনোস্তাত্ত্বিক, গবেষক ও সাইকোথেরাপিস্ট সাইকোলজি রিসার্চ সেন্টার ফোন : ০১৭১১০১৮০৯৪ ৫৫/২ পুরানাপল্টন লেন, নয়াপল্টন, ঢাকা
×