ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অনন্য রেজা করিম

সেলুলয়েডে নতুন এক সামাজিক আন্দোলন টয়লেট ॥ এক প্রেম কথা

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ১০ আগস্ট ২০১৭

 সেলুলয়েডে নতুন এক সামাজিক আন্দোলন  টয়লেট ॥ এক প্রেম কথা

সিনেমা শুধু বিনোদন মাধ্যম নয়। বিনোদনের পাশাপাশি সিনেমা সামাজিক বক্তব্য তুলে ধরার ক্ষেত্রে শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারে। সমাজে বিরাজমান অসঙ্গতি, অনাচার, দুর্নীতি, অন্যায়, বঞ্চনা ইত্যাদি তুলে ধরার মাধ্যমে সবাইকে এর বিরুদ্ধে সোচ্চার করে তোলে সিনেমা। সমাজে প্রচলিত কুসংস্কার, পুরনো ধ্যান-ধারণা ঝেড়ে ফেলে আধুনিক সময়ের চিন্তাধারার অনুসারী হতে উদ্বুদ্ধ করে সিনেমা। বক্তব্য প্রধান সিনেমায় সাধারণ বিনোদন থাকে না, সেখানে বক্তব্য তুলে ধরার বিষয়টিকে প্রাধান্য দেয়ায় বিনোদনের তেমন সুযোগ থাকে না, অনেকেই অভিযোগ করেন। তাদের অভিযোগ মিথ্যা নয়। সমাজ সচেতনমূলক বক্তব্য প্রধান সিনেমাগুলো সাধারণভাবে প্রচারচিত্র হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে সাধারণ দর্শকদের কাছে। তার পরও বাণিজ্যিক ধারার সিনেমাতেও জোরালো সামাজিক বক্তব্য তুলে ধরার ব্যতিক্রমধর্মী প্রচেষ্টা চালান অনেক চিত্রনির্মাতা। বলিউডে মাঝে মধ্যে তেমন কিছু প্রচেষ্টার প্রকাশ লক্ষ্য করা যায় মূল ধারার বাণিজ্যিক সিনেমাতে। তেমনি এক জোরালো সামাজিক বক্তব্য নিয়ে আসছে বলিউডের নতুন সিনেমা ‘টয়লেট : এক প্রেম কথা।’ নাম শোনামাত্র অনেকের ভ্রু কুঁচকে উঠছে। এমন একটি নামের সিনেমা কিভাবে হয় কেউ কেউ প্রশ্ন করেছেন। যখন বলিউডে ছবিটির নাম প্রথম ঘোষিত হয় তখনই দারুণ কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছিল। আর জনপ্রিয় তারকা অক্ষয় কুমার। ভারতের মতো একটি জনবহুল দেশে এখনও অনেক মানুষ শৌচাগার অর্থাৎ টয়লেটের অভাবে খোলা জায়গায় প্রাকৃতিক ক্রিয়াকর্ম সারতে হয়। গ্রামীণ এলাকাগুলোতে বেশিরভাগ বাড়িতে টয়লেট না থাকায় এক ধরনের অস্বস্তির মধ্যে কাটাতে হয় তাদের। পুরনো ধ্যান-ধারণা লালন করে চলেছেন কোটি কোটি মানুষ, খোলা আকাশের নিচে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিচ্ছেন তারা। ভারতের সমাজ ব্যবস্থায় এ ব্যাপারটি সবাইকে বিব্রত করলেও এ সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। ‘টয়লেট-এক প্রেম কথা’ ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। মাথুরার প্রত্যন্ত দুই গ্রামের বাসিন্দা এক জোড়া যুবক যুবতীর প্রেম কাহিনীর মাধ্যমে শক্তিশালী সামাজিক বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। গ্রামের সহজ সরল যুবক কেশব ভালবাসে জয়াকে। জয়া প্রগতিশীল মানসিকতার মেয়ে। সে গ্রামীণ সমাজে বিদ্যমান কুসংস্কার, পুরনো ধ্যান-ধারণা দূর করে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিকমনস্ক হয়ে সবাইকে চলতে উদ্বুদ্ধ করে। কেশব ও জয়ার প্রেমের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় প্রচলিত ধ্যান-ধারণা, পুরনো দর্শন। তারা গ্রামের মানুষকে খোলা জায়গার বদলে বাড়িতে শৌচাগার বা টয়লেট তৈরি করে প্রাকৃতিক ক্রিয়াকর্ম সারতে উদ্বুদ্ধ করে। এ নিয়ে গ্রামের পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে সরকারের স্যানিটেশন বিভাগের লোকজনের সঙ্গে দ্বন্দ্ব শুরু হয় তাদের। প্রেম কাহিনীর মাধ্যমে জোরালো সামাজিক বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে ‘টয়লেট এক প্রেম কথা’ ছবিতে। এ ছবিটির ব্যাপারে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি স্বয়ং তার বিশেষ আগ্রহ দেখিয়েছেন। এ ছবির মাধ্যমে ভারতীয় জনগণকে টয়লেট ব্যবহারে উদ্বুদ্ধকরণ প্রক্রিয়া জোরালো হবে বলে মত প্রকাশ করেছেন নরেন্দ্র মোদি ‘টয়লেট : এক প্রেম কথা’ ছবিতে দেখা যাবে বিয়ের পর জয়া যখন কেশবদের বাড়িতে নববধূ হিসেবে পা রাখে তখন দেখতে পায় বাড়িতে কোন টয়লেট নেই। বাড়ির সবাই খোলা আকাশের নিচে গিয়ে প্রাকৃতিক ক্রিয়াকর্ম সারে। তখনই কেশবকে নিয়ে জয়া ভিন্ন রকম লড়াই শুরু করে প্রচলিত গ্রামীণ সমাজের বিরাজমান পুরনো ধ্যান-ধারণার বিরুদ্ধে। ‘টয়লেট : এক প্রেম কথা’ ছবির গল্প লিখেছেন সিদ্ধার্থ সিং এবং গরিমা ওয়াহাল। তারা এর আগে গালিয়ো কী রাসলীলা রাম-লীলা ছবির গল্পও চিত্রনাট্য লিখেছিলেন। ২০১২ সালে ঘটে যাওয়া এক বাস্তব ঘটনা দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে ‘টয়লেট এক প্রেম কথা’ ছবির গল্প লেখা হয়েছে। ১৯ বছর বয়সী তরুণী প্রিয়াঙ্কা ভারতী নববধূ হিসেবে শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার পর যখন দেখে ওই বাড়িতে কোন টয়লেট নেই তখন সে পালিয়ে চলে আসে শ্বশুরবাড়ি থেকে। বাস্তবে ঘটনাটি ‘টয়লেট : এক প্রেম কথা’ ছবির গল্প নির্মাণে অনুপ্রেরণা দিয়েছে ১৮ কোটি রুপী বাজেটে নির্মিত এ ছবিতে কেশব ও জয়া চরিত্রে রূপদান করেছেন অক্ষয় কুমার ও ভূমি পেড়নেকার। এ ছাড়াও অভিনয় করেছেন অনুপম খের, সানা খান প্রমুখ। ‘টয়লেট : এক প্রেম কথা; ছবিতে নায়িকা হিসেবে দর্শকদের সামনে আবার উপস্থিত হচ্ছেন ‘দম লাগাকে হাইসা’খ্যাত অভিনেত্রী ভূমি পেডনেকার। প্রথম অভিনীত ছবিতে এক স্থূলকায়া তরুণী গৃহবধূর চরিত্রে নন গ্ল্যামারাস ইমেজ পর্দায় উপস্থিত হয়ে এক ধরনের দুঃসাহসের পরিচয় দিয়েছিলেন ভূমি। প্রথম ছবিতেই বাজিমাত করেছিলেন তিনি। ২০১৫ সালের সেরা নতুন মুখের অভিনেত্রী হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন ভূমি। এবার অক্ষয় কুমারের পর্দা প্রেমিকা হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন ২৮ বছর বয়সী এই তন্বী নায়িকা। ‘দম লাগাকে হাইসা’ ছবিতে দর্শক যে ভূমি পেড়নেকারকে দেখেছেন ‘টয়লেট : এক প্রেম কথা’ ছবিতে নতুন এক ভূমিকে আবিষ্কার করবেন। স্থূলকায়া তরুণী গ্রাম্য গৃহবধূর সন্ধ্যা চরিত্রটি রূপায়ণের জন্য নিজের শরীরের ওজন প্রায় দ্বিগুণ করেছিলেন। এরপর আবার শরীরের বাড়তি ওজন কমিয়ে ঝরঝরে আকর্ষণীয় দেহাবয়বে ফিরে এসেছেন। ‘টয়লেট’ এক প্রেম কথা’ ছবিতেও ভূমি দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন। এ ছবিতে তাকে যথেষ্ট গ্ল্যামারাস এবং আকর্ষণীয় ইমেজে পর্দায় তুলে ধরা হয়েছে। অক্ষয় কুমারকে বিপরীতে নায়ক হিসেবে পাওয়াটাকে ক্যারিয়ারের জন্য বড় অর্জন বলে মনে করছেন ভূমি পেড়নেকার। তাকে বিপরীতে নায়িকা হিসেবে পেয়ে অক্ষয় কুমারও দারুণ খুশি। ভূমির অভিনয়ে সন্তুষ্ট খিলাড়ি হিরো। ‘পর্দা জুটি হিসেবে আমার পাশে ভূমিকে বেশ মানিয়ে গেছে। দর্শক আমাদের একসঙ্গে গ্রহণ করবে আশা করছি আমি বলিউডের সব শীর্ষ জনপ্রিয় নায়িকাদের সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছি। ভূমির সঙ্গে আমার নতুন পর্দা জুটি দর্শকদের বৈচিত্র্যের স্বাদ দেবে; অক্ষয় কুমার বলেন। ‘টয়লেট এক প্রেম কথা’ ছবির আরেক তারকা অভিনেতা অনুপম খের এ ছবির উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে বলেন, ‘টয়লেট এক প্রেম কথা’ স্রেফ একটি সিনেমা নয় এটি একটি সামাজিক আন্দোলন বিনোদনপূর্ণ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে একটি সামাজিক আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করতে চেয়েছি আমরা। এ ছবিটি দেখার পর যদি শতকরা ১০ ভাগ মানুষ নতুন চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয় এবং খোলা জায়গায় প্রাকৃতিক ক্রিয়াকর্ম সম্পাদন থেকে বিরত থাকেন বাড়িতে টয়লেট নির্মাণে উদ্যোগী হন তাহলে আমাদের এই সিনেমাটি সার্থক বলে মনে করব।’
×