ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সন্ত্রাসী সংগঠনটির পতন শুরু

বিদেশী জঙ্গীরা দলে দলে আইএস ছাড়ছে

প্রকাশিত: ০৫:২১, ২৯ এপ্রিল ২০১৭

বিদেশী জঙ্গীরা দলে দলে আইএস ছাড়ছে

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিদেশী জঙ্গীদের একটি বড় অংশ এই সংগঠন ছেড়ে যেতে শুরু করেছে। আইএসের পক্ষ ত্যাগ করে এসব জঙ্গী তুর্কি সীমান্ত দিয়ে অন্যত্র প্রবেশের চেষ্টা চালাচ্ছে। এ সংখ্যা ৩০ হাজারের বেশি হতে পারে বলে ধারণা। এরই মধ্যে আইএসের তিন বিদেশী জঙ্গী তুরস্কের পুলিশ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। এদের মধ্যে দুইজন ব্রিটিশ ও অপরজন মার্কিন নাগরিক। ফলে এই সন্ত্রাসী সংগঠনের কার্যত পতন শুরু হয়েছে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা। খবর গার্ডিয়ান অনলাইনের। গত সপ্তাহে উত্তর লন্ডনের এনফিল্ডের বাসিন্দা স্টিফান এ্যারিস্টিডো, তার বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ স্ত্রী ও যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার বাসিন্দা কেরি পল ক্লেম্যান তুর্কি সীমান্তে আত্মসমর্পণ করেন। তুরস্কের এই সীমান্ত গত দুই বছরের বেশি সময় আইএসের কব্জায় ছিল। খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, সিরিয়া ও ইরাকের বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ হারানোর পর সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোকে আইএসের বিদেশী জঙ্গীরা স্বপক্ষ ত্যাগ করে অন্যত্র পাড়ি জমানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। আর এই সীমান্ত অতিক্রমের সময় অনেকেই তুর্কি বাহিনীর হাতে ধরাও পড়েছে। তুর্কি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, স্টিফান এ্যারিস্টিডো সম্প্রতি তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলের কিলিস এলাকায় স্ত্রীসহ আত্মসমর্পণ করে। একই সময়ে ৪৬ বছর বয়সী মার্কিন নাগরিক কেরি পল ক্লেম্যান তার সিরীয় স্ত্রী ও দুইজন মিসরীয় নারিসহ কিলিস সীমান্তে আসে। এই দুই মিসরীয় নারীর স্বামী আইএসের পক্ষে যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছে। আটকের পর স্টিফান এ্যারিস্টিডো পুলিশকে জানায়, তিনি মূলত যুদ্ধ করতেই সিরিয়ার আসে। সিরিয়ার রাকা ও আলবাবের আইএস ঘাঁটিতে অবস্থান করেন তিনি। এই এলাকায় আইএসের শক্ত অবস্থান ছিল। তার এক আত্মীয় জানান, ২০১৫ সালে সাইপ্রাস ভ্রমণকালে নিখোঁজ হন এই ব্রিটিশ নাগরিক। ব্রিটেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছেন, তুরস্কে একজন ব্রিটিশ নাগরিক আটকের ঘটনায় আমরা তুর্কি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। আমরা জানতে পেরেছি যে আটক ব্রিটিশ নারী ইতোমধ্যে ছাড়া পেয়েছেন। তবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। তুর্কি আটককৃতরা দোষী সাব্যস্ত হলে তাদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হবে। সাজার মেয়াদ সাড়ে সাত বছর থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত হতে পারে। খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, আটক ব্রিটিশ নাগরিকদের নিজ দেশে প্রত্যর্পণের পর তারাও বিচারের মুখোমুখি হতে পারে। ব্রিটিশ সন্ত্রাসবিরোধী আইনে বলা হয়েছে, কোন ব্রিটিশ নাগরিক আইএসের পক্ষে যুদ্ধের গিয়ে আটক হলে তার সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন হতে পারে। মার্কিন নাগরিক কেরি পল ক্লেম্যান তার প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ির পর ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তার মা জানান এরপর ২০১১ সালে মিসরে যায় কেরি পল ক্লেম্যান। মিসরে দ্বিতীয় দফা বিয়ে করেন। এই বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়ার পর দুবাই পাড়ি জমান তিনি। এখানে এসে তার বর্তমান স্ত্রীকে বিয়ে করেন। তার এই স্ত্রী সিরীয় নাগরিক। তাদের তিনটি ছেলে মেয়ে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের একটি স্কুলে আইটি শিক্ষক ছিলেন তিনি। তার পরিবার বুধবার জানায় মানবিক সহায়তার কথা বলে ২০১৫ সালে পরিবারসহ সিরিয়ায় আসেন ক্লেম্যান। এতদিন পরিবারের সঙ্গে তার কোন যোগাযোগ ছিল না। সিরিয়ায় আসার পর ক্লেম্যান তার পরিবারকে জানায়, যে তথ্যের ভিত্তিতে আমি সিরিয়ায় এসেছি তা সঠিক ছিল না। ক্লেম্যানের মা জানান, পরিবারের কাছে তার অবস্থান বিভ্রান্তিকর ছিল। আমরা সম্প্রতি তুরস্কের মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। মার্কিন দূতাবাসের সাহায্যে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। ক্লেম্যানের আত্মীয়রা জানায়, আমরা ১৮ মাস আগেই এফবিআইকে ক্লেম্যানের বিষয়টি জানিয়েছি। তার বোন ব্রিন্ডা কামিংস বলেন, আমার ভাই কোন বিপজ্জনক কাজের সঙ্গে জড়িত ছিল কি না, তা আমরা এফবিআইকে ক্ষতিয়ে দেখতে বলেছি। এদিকে আইএসের একটি সূত্রের বরাত দিয়ে গার্ডিয়ানের এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিরিয়ার বিশেষ করে রাকা ও তাবকা এলাকায় সাম্প্রতিক যুদ্ধের আইএসের বহর সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। গত চার বছরে এই জঙ্গী সংগঠনের পক্ষে বিপুল সংখ্যক বিদেশী জঙ্গী লড়াই করেছে। তুরস্ক ও ইউরোপ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২০১৩ সাল থেকে যেসব লোক আইএসের পক্ষে যুদ্ধ করতে গিয়েছিল তাদের অনেকেই দেশে ফেরার জন্য নিজ নিজ দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। আবার অনেকে তুর্কি সীমান্ত পাড়ি দিয়ে দেশে ফিরতে চাইছে। এই তালিকায় ব্রিটেন, ফ্রান্স, বেলজিয়াম ও অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক রয়েছে। এসব লোকেরা এতদিন আইএসে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছে বলে পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ধারণা। তুর্কি পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, তারা চলতি বছরের প্রথম দিকে কয়েকজন আইএস জঙ্গীকে আটক করেছে। তারা মূলত আইএসের পক্ষে ছিনতাইয়ের কাজে জড়িত ছিল। এদের মধ্যে বুলগেরিয়া ও গ্রিসের নাগরিক রয়েছে। তবে এ বিষয়ে ব্রিটেনের কিংস কলেজের ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব রেডিক্যালাইজেশনের সহ-প্রধান সিরাজ মাহের বলেন, আগামী মাসগুলোতে আইএস হুমকি আরও তীব্র হতে পারে। কারণ ইউরোপে আইএসের উপস্থিতি এখনও রয়েছে। ইরাকের উত্তরাঞ্চলের কুর্দিস্তান আঞ্চলিক সরকারের নিরাপত্তাবিষয়ক কর্মকর্তা মাসরুর বারজানি বলেন, আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কৌশলের প্রকৃতিতে পরিবর্তন আনা দরকার। আইএসের সঙ্গে এখন কূটনৈতিক পর্যায়ে যুদ্ধ পরিচালনা করতে হবে। তিনি বলেন, প্রথমে আইএস জঙ্গীদের পরাজিত করার জন্য তাদের অধিকৃত অঞ্চলগুলোকে উদ্ধার করতে হবে। তারপর এদের হামলা প্রতিহত করতে হবে। একই সঙ্গে তারা যাতে বিদেশীদের আর দলে ভেড়াতে না পারে তা প্রতিহত করতে হবে। তবে তিনি উল্লেখ করেন, এখনই এই জঙ্গী সংগঠনটিকে দুর্বল ভাবা ঠিক হবে না।
×