ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সাম্বা ছন্দে উড়ে গেল উরুগুয়ে

প্রকাশিত: ০৬:১০, ২৫ মার্চ ২০১৭

সাম্বা ছন্দে উড়ে গেল উরুগুয়ে

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ নতুন কোচ টিটের অধীনে নয়া যৌবন পেয়েছে ব্রাজিল। ফুটবল ইতিহাসের সেরা সাফল্যের দলটি আবারও স্বর্ণালী সময় ফিরিয়ে আনার পথে আছে। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে টানা সাত ম্যাচ জিতে সে স্বাক্ষরই রেখেছে পেলের দেশ। বাংলাদেশ সময় শুক্রবার সকালে দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের বাছাইপর্বে স্বাগতিক উরুগুয়েকে ৪-১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে অতিথি ব্রাজিল। মন্টেভিডিওতে সেলেসাওদের হয়ে দুরন্ত হ্যাটট্রিক করেন মিডফিল্ডার পাউলিনহো। অপর গোলটি করেন সেরা তারকা নেইমার। এই জয়ে ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে খেলা অনেকটাই নিশ্চিত করে ফেলেছে ব্রাজিল। বুধবার প্যারাগুয়েকে হারালেই চার ম্যাচ হাতে রেখে পরবর্তী বিশ্বকাপের টিকেট পাবে রেকর্ড সর্বোচ্চ পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। ব্রাজিল সাম্বা ছন্দে উরুগুয়েকে বিধ্বস্ত করলেও আর্জেন্টিনাকে জিততে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। ঘরের মাঠে তারা কোন রকমে ১-০ গোলে হারিয়েছে কোপা আমেরিকা চ্যাম্পিয়ন চিলিকে। প্রথমার্ধে বিতর্কিত পেনাল্টি থেকে গোলটি করেন অধিনায়ক লিওনেল মেসি। আর জেমস রড্রিগুয়েজের শেষদিকের গোলে কলম্বিয়া ১-০ গোলে হারিয়েছে বলিভিয়াকে। অপর দুই ম্যাচে প্যারাগুয়েকে ২-১ গোলে ইকুয়েডরকে ও ভেনিজুয়েলা-পেরুর মধ্যকার ম্যাচ ২-২ গোলে ড্র হয়। বর্তমানে ১৩টি করে ম্যাচ শেষ করেছে সব দল। ৩০ পয়েন্ট নিয়ে সবার ধরাছোঁয়ার বাইরে ব্রাজিল। হারলেও ২৩ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে উরুগুয়ে। ২২ পয়েন্ট নিয়ে পাঁচ থেকে তিনে উঠে এসেছে আর্জেন্টিনা। গুরুত্বপূর্ণ জয়ে ২১ পয়েন্ট নিয়ে চারে এসেছে কলম্বিয়া। অবনমন হওয়া ইকুয়েডর ও চিলি দু’দলের ভা-ারেই ২০ পয়েন্ট করে। তবে গোল গড়ে ইকুয়েডর পাঁচ ও চিলির অবস্থান ছয়ে। সবার নিচে থাকা বলিভিয়ার বিদায় ইতোমধ্যে নিশ্চিত হয়েছে। মন্টেভিডিওতে অবশ্য ম্যাচের শুরুর চিত্রটা ছিল ভিন্ন। নবম মিনিটেই গোল খেয়ে পিছিয়ে পড়ে ব্রাজিল। তবে গোল খেয়েই জেগে ওঠে নেইমাররা। এরপর গুনে গুনে প্রতিবেশী দেশটির জালে চার গোল দেয় ফুটবলের সবচেয়ে সফল দলটি। কোচ টিটের অধীনে এই নিয়ে টানা আট ম্যাচ জিতল ব্রাজিল। এরমধ্যে বাছাইপর্বেই টানা সাত জয়। উরুগুয়ের মাঠে শুরুতেই এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায় সেলেসাওরা। মাঝমাঠ থেকে নেইমার পাসে বল পেয়ে রবার্টো ফিরমিনোকে বল দেন ফিলিপ কুটিনহো। তবে বলে পা লাগাতে পারেননি লিভারপুলের তারকা মিডফিল্ডার। অষ্টম মিনিটে অমার্জনীয় ভুল করে বসেন মার্সেলো। ডি বক্সের মধ্যেই গোলরক্ষককে ব্যাক পাস করেন রিয়াল মাদ্রিদের ডিফেন্ডার। গোলরক্ষক এ্যালিসন পৌঁছার আগেই বলের দখল নেন এডিসন কাভানি। উপায় না দেখে বলের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন গোলরক্ষক। এতে ধাক্কা লেগে পড়ে যান কাভানি। তবে মরিয়া হয়ে ওঠার প্রয়াসটা ভালভাবে নেননি রেফারি। পেনাল্টির বাঁশি বাজান তিনি। সহজ সুযোগে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন কাভানি। লিডটা বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেনি স্বাগতিকরা। ১৮ মিনিটেই সমতায় ফেরে ব্রাজিল। গোলপোস্ট থেকে ২৫ গজ দূরে থেকে দারুণ এক শটে স্বাগতিকদের পোস্ট কাঁপিয়ে দেন পাউলিনহো। ৩১ মিনিটে গোলের সহজ সুযোগ মিস করেন দানি আলভেজ। তবে ৩৭ মিনিটে আবার গোল পেতে পারত উরুগুয়ে। মাতিয়াস ভেসিনোর হেড পোস্টের গা ঘেঁষে বেরিয়ে যায়। বিরতির পর ৫১ মিনিটে ফিরমিনোর শট রুখে দেন উরুগুয়ের গোলরক্ষক। তবে বিপদমুক্ত করতে পারেননি তিনি। কাছে থাকায় বল পেয়ে যান পাউলিনহো। আরামের সঙ্গেই নিজের দ্বিতীয় গোলটি করেন চীনা ক্লাব গুয়াংজু এভারগ্রান্ডের মিডফিল্ডার। ৭৪ মিনিটে ব্রাজিলের জয় নিশ্চিত করে দেন নেইমার। মিরান্ডার বাড়ানো বলে দক্ষতার সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ নেন বার্সিলোনা তারকা। এরপর আলতোভাবে গোলরক্ষকের মাথার ওপর দিয়ে বল জালে জড়িয়ে দেন। ম্যাচের একবারে শেষ সময়ে আবার গোল করে ব্রাজিলের বড় জয় নিশ্চিত করেন পাউলিনহো। সেই সঙ্গে হ্যাটট্রিকও উদযাপন করেন। আরেক ম্যাচে বুয়েনস ইয়ার্সে চিলির সঙ্গে আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ ছিল ইতিহাসও। কারণ এই দলটার কাছেই কোপা আমেরিকার শিরোপা হাতছাড়া হয় আর্জেন্টিনার। নিজেদের মাঠে প্রতিশোধটা ভালমতোই নিয়েছেন মেসি-মারিয়ারা। আর্জেন্টিনার মাঠে খেলার শুরুতেই গোল পায় চিলি। তবে অফসাইডের মধ্যে পড়ে বাতিল হয় ফুয়েনজালিদার গোল। আর্জেন্টিনা বাঁচলেও রক্ষা পায়নি চিলি। ১৬ মিনিটে মাশ্চেরানোর বাড়ানো বলে ডি বক্সে ঢোকার সময় ডি মারিয়াকে ফাউল করে বসেন ফুয়েনজালিদা। সঙ্গে সঙ্গে শাস্তিটাও পেয়ে যায় চিলি। রেফারি পেনাল্টির বাঁশি বাজান। স্পট কিক থেকে গোল করে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে দেন মেসি। ম্যাচ শেষে রেফারির সিদ্ধান্ত নিয়ে ক্ষোভ ছড়ান চিলির কোচ। আশীর্বাদস্বরূপ পাওয়া পেনাল্টি গোলেই শেষ পর্যন্ত স্বস্তির জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে আর্জেন্টিনা।
×