ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সেই কালরাত্রি স্মরণে এবারই প্রথম পালিত হচ্ছে গণহত্যা দিবস

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ২৪ মার্চ ২০১৭

সেই কালরাত্রি স্মরণে এবারই প্রথম পালিত হচ্ছে গণহত্যা দিবস

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাত্রিতে ঢাকায় পাকিস্তান হানাদার বাহিনী কর্তৃক বর্বরোচিত হামলার সেই বিয়োগান্তক ঘটনার স্মরণে এবারই প্রথমবারের মতো ‘গণহত্যা দিবস’ পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। একইসঙ্গে এই দিনটির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির (আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস) জন্য চলতি মার্চ মাসেই জাতিসংঘকে চিঠি দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। সচিবালয়ে তথ্য অধিদফতরের সম্মেলন কক্ষে বৃহস্পতিবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন। মোজাম্মেল হক বলেন, ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের বিষয়টি জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। দিবস হিসেবে পালনের জন্য এটাই যথেষ্ট। তারপরও রাষ্ট্রীয় শিষ্টাচার হিসেবে গত সোমবার অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে গণহত্যা দিবস পালনের বিষয়টি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। গণহত্যা দিবস পালনের বিষয়টি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মন্ত্রিসভার বৈঠকে উঠিয়েছিলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, ৯ ডিসেম্বরের পরিবর্তে ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস পালনের প্রস্তাব নিয়ে চলতি মাসেই (মার্চ) জাতিসংঘকে চিঠি দেয়া হবে। ৯ ডিসেম্বরের পরিবর্তে ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস পালনের প্রস্তাব নিয়ে এ মাসেই (মার্চ) জাতিসংঘকে চিঠি দেয়া হবে। এজন্য আবেদন প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। কবে এবং কাকে দিয়ে পাঠানো হবে তা ঠিক করা হচ্ছে। জাতিসংঘে এটা (প্রস্তাব) উঠানোর পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সমর্থন আদায়ে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলেও জানান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী। তিনি বলেন, আমরা যেমন একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবস পালন করি এর পেছনে ইতিহাস রয়েছে। অনেকে সেদিন শহীদ হয়েছে। ৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস পালন করা হলেও এর পেছনে কোন ইতিহাস নেই। দিবস পালন করতে হয় সে হিসেবেই তা পালন করা হয়। ৯ ডিসেম্বরের পরিবর্তে ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিকভাবে কেন গণহত্যা দিবস পালন করা উচিত, এর পেছনে সমস্ত তথ্য উপাত্ত, যুক্তি উপস্থাপনে ডকুমেন্টস তৈরি করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিভিন্ন দূতাবাসের মাধ্যমে এসব তথ্য-উপাত্ত বিভিন্ন দেশ বা সংশ্লিষ্টদের কাছে পৌঁছানোর প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। যেহেতু প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর নিয়ে সবাই ব্যস্ত। তাই এটা শেষ হলেই কেন ৯ ডিসেম্বরের পরিবর্তে ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস পালন করা উচিত। এর পেছনে যুক্তিগুলো তারা পুরোদমে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করবে। ২৫ মার্চ সারাদেশে নানা কর্মসূচী ॥ মন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ২৫ মার্চ প্রথমবারের মতো ‘গণহত্যা দিবস’ পালন করতে যাচ্ছে। এ স্বল্প সময়ের মধ্যে এবার কাক্সিক্ষত ব্যাপক কর্মসূচীতে এ দিবস পালন করা সম্ভব না হলেও বাংলাদেশ তথা বিশ্বের ইতিহাসে এ ঘটনা মাইলফলক হয়ে থাকবে। এদিন ‘রক্তাক্ত ২৫ মার্চ: গণহত্যা ইতিবৃত্ত’ শিরোনামে আলোক চিত্র প্রদর্শনী ও আলোচনা সভার অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, এবার ২৫ মার্চ সকাল সাড়ে ১০টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ সংলগ্ন স্থানে ‘রক্তাক্ত ২৫ মার্চ: গণহত্যা ইতিবৃত্ত’ শিরোনামে আলোক চিত্র প্রদর্শনী ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এছাড়া প্রতিটি জেলা, উপজেলায় ২৫ তারিখ এ দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও গণহত্যা এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ‘গণহত্যা দিবস’ পালন করতে যাচ্ছি। দূতাবাসগুলোতে কর্মসূচী নেই ॥ দেশের বাইরে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোতে দিবসটি পালনের কোন সিদ্ধান্ত আছে কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মোজাম্মেল হক বলেন, দূতাবাসগুলোতে আমরা এ বছর নির্দেশনা দেইনি। কারণ, সেখানে একটা সভা আয়োজন করতে হলে বিভিন্ন লোকদেরকে দাওয়াত করতে হয়। দাওয়াত করতে গেলে দূতাবাসের যে একটা নিয়ম আছে, সেই নিয়মটি পালন করতে ন্যূনতম ৭ দিন লাগে। সেই সময়টা আমাদের এ বছর হাতে ছিল না দেখে দূতাবাসগুলোতে আমরা বলিনি। তবে বিদেশে বাংলাদেশী দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে এ দিবসটি পালন করার চেষ্টা করা হবে। তিনি বলেন, দেখি চেষ্টা করে, আমাদের দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে কিছু করা যায় কি না। তবে ভবিষ্যতে দূতাবাসগুলোতে অবশ্যই এ দিবস পালন করা হবে। প্রথমবার তাই ছাড় ॥ ২৫ মার্চ কোন রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তি বিশেষ গণহত্যা দিবস পালন না করলে কোন পদক্ষেপ থাকবে কিনা সরকারের এমন প্রশ্নের জবাবে আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস এবং একুশে ফেব্রুয়ারির মতোই ২৫ মার্চ জাতীয় গণহত্যা দিবস পালিত হবে। এটা জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়েছে। এ দিবস যদি কেউ পালন না করে তাহলে তা আপনারা বা জনগণই এর বিচার করবে। এবার যেহেতু প্রথমবারের মতো পালিত হচ্ছে। আর এ অল্প সময়ের মধ্যে হয়ত কোন কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষে কর্মসূচী পালন সম্ভব নাও হতে পারে। তবে ভষ্যিতে অন্যান্য জাতীয় দিবসের মতো গণহত্যা দিবসও পালন করবে আশাবাদী তিনি। যে কারণে দেরিতে গণহত্যা দিবস ॥ স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর এতো দেরিতে কেন এই উদ্যোগ? কেন আগে গণত্যা দিবস পালনের উদ্যোগ নেয়া সম্ভব হলো না-এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পরপরই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করার মধ্য দিয়ে দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর জিয়াউর রহমান, এরশাদ এবং খালেদা জিয়া ক্ষমতায় ছিলেন। তারা এটার উদোগ নেইনি। বলতে পারেন আপনারা তো কয়েবার ক্ষমতায় তাহলে দেরি কেন। হ্যাঁÑ আমরা আগে দুই বার এবং বর্তমানে ক্ষমতায় আছি। গতবার বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের বিচার এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারটি আমাদের সামনে ছিল। আমরা এটা সম্পন্ন করেছি। দেরিতে হলেও আমরা ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। না হওয়ার চেয়ে তো হওয়া ভাল তাই না? সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ মাহমুদ রেজা খানসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, গত ১১ মার্চ ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস পালনের ওপর জাতীয় সংসদে উঠানো প্রস্তাবের ওপর আলোচনা শেষে এ দিনই জাতীয়ভাবে তা পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
×