ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

খোকন তালুকদার

রবীন্দ্র-নজরুল হোক তারুণ্যের

প্রকাশিত: ০৬:৪৯, ৩১ অক্টোবর ২০১৬

রবীন্দ্র-নজরুল হোক তারুণ্যের

তারুণ্য হলো অতীত ও ভবিষ্যতের সেতু। আর তাদের চিন্তাভাবনা, রুচি, সৃজনশীলতা এবং সৃষ্টিশীলতা হচ্ছে সেই সেতুর কাঁচামাল। এই কাঁচামালের মান যত ভাল হবে সেতুর ঠেকসই তত দীর্ঘস্থায়ী হবে। কিন্তু আমাদের তারুণ্যে এই কাঁচামালের বড়ই অভার। আজ তারুণ্যের রুচিশীলতা, চিন্তাভাবনা, সৃজনশীলতা বার্ধক্যে রূপ নিয়েছে। অর্থাৎ কাঁচামালের গুণগত মান নষ্ট হয়ে গেছে। আধুনিক সভ্যতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে এই কাঁচামালের গুণগত মান তরুণদেরই সুনিশ্চিত করতে হবে। তাই তারুণ্যের চিন্তাভাবনায়, রুচিশীলতায় নিয়ে আসতে হবে একটা আমূল পরিবর্তন। আর এই রুচিশীলতা কখনও এক প্রথাগত শিক্ষার মধ্য দিয়ে আসে না, যদিও শিক্ষা রুচিশীলতার জন্য অত্যাবশ্যকীয়। রুচিশীলতার ভেতরেই রয়েছে নৈতিকতাবোধ। ন্যায়-অন্যায়ের চেতনা মানুষের মধ্যে না থাকলে মানুষ কখনই মহৎ হয় না, তা যতই সে বৃহৎ হোক না কেন। তরুণদের সেই নৈতিকতার দরজায় পৌঁছতে হলে প্রয়োজন রবীন্দ্র, নজরুলদের চর্চা। নজরুল তারুণ্যের যতটা গভীরে প্রবেশ করতে পারে রবীন্দ্রনাথ ততটা না, এ কথা ঠিক। তবে শুধু গভীরের ভিত মজবুত করলেই তো আর হবে না, বাহ্যিক সৌন্দর্যও থাকা চাই। সে জন্য নজরুলের পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথও তারুণ্যের জন্য জরুরী। তাই এই তরুণ সমাজকেই নজরুল নিয়ে ভাবতে হবে, পড়তে হবে, সঙ্গে চর্চা করতে হবে। নজরুলকে তার কয়েকটা গান কিংবা কবিতায় আটকে রাখলে চলবে না। নজরুলের অবস্থান এই সবের অনেক ওপরে। নজরুল সাধনার এবং লালন-পালন করার বিষয়। তাই এই নজরুলকে নিতে হলে তার কবিতা কিংবা গানের উর্ধে গিয়ে নিতে হবে। আর এই উর্ধে ওঠাটাই তারুণ্যের জন্য আবশ্যক। তা না হলে তারুণ্যে ন্যায়-অন্যায় বলে কিছু থাকবে না। সব সমান হয়ে যাবে; যা তারুণ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, যারা এই পথটা তরুণদের দেখিয়ে দেবেন তারাই আজ এই পথ হারিয়ে বসেছেন; যা জাতির জন্য হুমকিস্বরূপ। তাই তরুণদেরই এই পথ খুঁজে নিতে হবে নিজেদের প্রয়োজনে। নজরুলকে যেমন সাধন, লালন-পালন করতে হবে তেমনি সে সাধনা আর লালনকে কেন্দ্র করে এগিয়েও যেতে হবে। আর এই হলো কাঁচামালের গুণগত মান বৃদ্ধি করে সেতুর ভেতর পুক্ত করার বিষয়। এখন বাহ্যিক সৌন্দর্যও আনা চাই। আর এ জন্য প্রয়োজন রবীন্দ্রচর্চা। অর্থাৎ রবীন্দ্র সাধন। নজরুলকে যেমন গানে, কবিতায় সীমাবদ্ধ করা যায় না তেমনি রবীন্দ্রনাথকেও নয়। রবীন্দ্রনাথ আমাদেরকে রুচিশীলতার চরম পর্যায়ে পৌঁছতে সাহায্য করে; যা তারুণের জন্য আবশ্যক। আর নৈতিকতাকেও রবীন্দ্রনাথ রুচিতে পরিণত করেছেন। তার অবিরল ও বহুমুখী সৃষ্টিশীলতার ধারার মধ্যে অবিচলিত ছিল ভাল-মন্দের একটি প্রখর জ্ঞান। নৈতিকতার নানাবিধ শিক্ষার আয়োজন সমাজে বিদ্যমান, কিন্তু ব্যক্তিগত নৈতিকতা তখনই নির্ভরযোগ্য ও ধারাবাহিক বিকাশ বজায় রাখতে সক্ষম হয় যখন সে রুচিতে পরিণত হয়। মানবদেহে জিহ্বার যে স্থান, নৈতিকতায় রুচির স্থান যদি সে রকম হয় তাহলে অনেক বিপদ থেকে রক্ষা পাবার আশা থাকে। বুদ্ধির তেমন দরকার হবে না, স্বাদই বলে দেবেÑ কোন্টা বাসি, কোন্টা তাজা, কোন্টা গ্রহণযোগ্য আর কোন্টা বর্জনীয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে রবীন্দ্রনাথও চেয়েছিলেন তার সংস্কৃতিচর্চা এই ব্যাপারটিতে সাহায্য করুক তার তরুণ সমাজকে কিংবা দেশবাসীকে। রবীন্দ্রনাথ প্রত্যক্ষ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না; তবু তার পক্ষে না জড়িয়ে উপায় থাকেনি, এই রুচিবোধের কারণেই। তার মূল আস্থা ছিল বিজ্ঞানে আর যুক্তিবাদিতায়; যা তরুণদের জন্য আবশ্যক। এই তরুণ সমাজই আজ বিপথগামী। এর জন্যই একটা পরিবর্তন চাই। আমূল পরিবর্তন। আর কোন পরিবর্তনই দলীয়ভাবে হয় না যদি ব্যক্তির নিজের ভেতরের ইচ্ছা না থাকে। আর তরুণদেরই আনতে হবে এই পরিবর্তন, নিজ নিজ জায়গা থেকে। তবেই এই নিজ নিজ জায়গা একত্রিত হয়ে রূপ নেবে দলে, জাতিতে। আসবে আমূল পরিবর্তন। জয় হবে তারুণ্যের।
×